আপনি পড়ছেন

ফারহান রহমান একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। বাংলাদেশের নামকরা একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সবেমাত্র গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছেন। এখন উচ্চশিক্ষার জন্যে তিনি কানাডা যেতে আগ্রহী। কিন্তু কানাডা যেতে হলে মোটা অঙ্কের অর্থের প্রয়োজন রয়েছে। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে হওয়ায় ফারহান কি ফার্স্ট ওয়ার্ল্ডের কোনো দেশে পড়াশোনার সুযোগ পাবে না? অবশ্যই পাবেন। অবশ্যই তার সে সুযোগ রয়েছে। সেই সুযোগটা হলো স্কলারশিপ।

vancouver canada night view

অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, স্কলারশিপ বা ফান্ডিং কতটুকু পাওয়া সম্ভব? এগুলো নির্ভর করে বিশ্ববিদ্যালয়, সাবজেক্ট এবং প্রফেসরদের ওপরে। যদিও কানাডায় লিভিং কস্ট অনেক বেশি। কিন্তু তা সত্ত্বেও কানাডায় স্কলারশিপ কিংবা ফান্ডিং দিয়ে পড়াশোনা করা সম্ভব। অবশ্য কানাডায় স্কলারশিপ কিংবা ফান্ডিং যোগাড় করে পড়াশোনা করাটা গ্র্যাজুয়েশনের আগে কঠিন হলেও পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনের ক্ষেত্রে সেটি ভালো করেই সম্ভব। যদিও ভালো স্কলারশিপ পাবার জন্যে ভালো IELTS স্কোরও দরকার। আর তাছাড়া কানাডায় ইঞ্জিনিয়ারিং, বিজনেস ইত্যাদি বিষয়গুলোতে পড়াশোনা শেষ করে ভালো জবও পাওয়া সম্ভব।

canada for education

আজকের এই লেখাটিতে কানাডায় উল্লেখযোগ্য কিছু স্কলারশিপ প্রোগ্রাম অথবা সেল্ফ ফাইন্যান্সে পড়তে যাওয়ার জন্যে করণীয় কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

কানাডায় স্কলারশীপ প্রোগ্রাম:

অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায় যে, আমেরিকার তুলনায় কানাডায় স্কলারশিপ পাওয়াটা একটু কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে এই স্কলারশিপ কিভাবে পাওয়া সম্ভব?

. প্রথমেই পছন্দের এক বা একাধিক ইউনিভার্সিটি এবং সাবজেক্ট শর্ট লিস্ট করে ফেলুন। সাধারণত ভালো ইউনিভার্সিটির ভালো সাবজেক্টগুলোতে ফল (সেপ্টেম্বর) সেশনে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের জন্যে ভর্তির সুযোগ থাকে।

ধরা যাক, কেউ ২০১৯ -এর ফল সেমিস্টারে ভর্তি হতে চান। ২০১৮ এর অক্টোবর থেকে ইউনিভার্সিটিগুলো ভর্তির অ্যাপ্লিকেশনের অনলাইন পোর্টাল উন্মুক্ত করে দেয়। ডিসেম্বর বা পরবর্তী বছরের জানুয়ারির মধ্যে আবেদন বা অ্যাপ্লিকেশন করতে হবে। কাজেই দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব আবেদন করে ফেলাই উত্তম। শর্ট লিস্ট করা ইউনিভার্সিটিগুলোর ওয়েবসাইটের প্রোসপেকটিভ স্টুডেন্টস সেকশন থেকে অ্যাপ্লিকেশনের রিকোয়্যারমেন্ট, ল্যাঙ্গুয়েজ স্কিল, ডেডলাইন ইত্যাদি দেখে নিন।

. একাডেমিক IELTS কিংবা TOEFL -এ ভালো স্কোর তুলুন। কিছু ইউনিভার্সিটিতে সাবজেক্টভেদে GMAT/ GRE ইত্যাদি স্কোরের প্রয়োজন হয়।

. রিসার্চ-বেজড মাস্টার্স বা পিএইচডি প্রোগ্রামগুলোতে ফান্ডিং/ স্কলারশিপ ইত্যাদি পেতে হলে অবশ্যই দুই বা তিনটি ভালো রেফারেন্স-এর প্রয়োজন হয়।

. অনেক রিসার্চ প্রোগ্রাম আছে, যেগুলোতে পাবলিকেশনের প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ কোন একটি নামকরা জার্নাল বা আর্টিকেলের ফার্স্ট-অথর হিসেবে পাবলিকেশন থাকলে, ফান্ডিং বা স্কলারশিপ পেতে সুবিধা হয়। 'ফার্স্ট-অথর' বলতে বোঝায়, কোন একটি জার্নাল বা আর্টিকেলে অন্যান্য লেখক থাকতে পারেন। কিন্তু সেখানে আপনার নামটা থাকবে প্রথমে।

. অ্যাপ্লিকেশনের জন্যে ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাণ্ডার্ড রিজিউমি, কভারলেটার এবং SOP (Statement of Purpose) তৈরি করাটাও অনেক জরুরি।

. কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাপ্লিকেশনের আগে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আপনার পছন্দের সাবজেক্টের প্রফেসরদেরকে আপডেটেড রিজিউমিসহ মেইল করতে পারেন। ইমেইলে আপনার আগ্রহের কথা প্রকাশ করুন। কোন বিষয়ে আপনি রিসার্চ করতে চান, উক্ত প্রফেসরের কোন কাজগুলো আপনাকে মুগ্ধ করেছে ইত্যাদি বিষয় সংক্ষেপে তুলে ধরুন।

কানাডায় কিছু উল্লেখযোগ্য স্কলারশীপ প্রোগ্রাম এবং তার লিঙ্কগুলো ঘুরে আসতে পারেন:

১. Vanier Canada Graduate Scholarship
২. University of Waterloo International Master’s and Doctoral Awards
৩. Ontario Graduate Scholarship
৪. এছাড়াও ইমিগ্রেশন এ্যাণ্ড সেটেলমেন্ট ওয়েবসাইট (http://immigrationandsettlement.org) এবং ফেসবুক গ্রুপ থেকেও স্টুডেন্ট ভিসা এবং স্কলারশীপ প্রোগ্রাম সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় অন্যান্য তথ্যগুলো পেতে পারেন। ইমিগ্রেশন এ্যাণ্ড সেটেলমেন্ট ওয়েবসাইট, ফেসবুক গ্রুপ এবং ইউটিউব চ্যানেল - এসবই বাংলা ভাষাভাষীদের জন্যে স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে বিনামূল্যে কানাডা'র ইমিগ্রেশন এবং স্টুডেন্ট ভিসা সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ করে আসছে।

কানাডায় সেল্ফ ফাইন্যান্সে পড়তে চাইলে:

সেল্ফ ফাইন্যান্সে কানাডায় পড়তে আসার জন্যে যারা সামর্থ্যবান, তাদের অনেকেই পড়াশুনা শেষ করে কানাডায় পারমানেন্ট রেসিডেন্সি-এর জন্যে অ্যাপ্লাই করতে আগ্রহী। অনেকে ভাবেন যে, IELTS ছাড়াই বোধহয় কানাডায় আসা সম্ভব। বিভিন্ন এজেন্সি টাকার বিনিময়ে হয়তোবা ভিসাও করিয়ে দেবার কথা বলবে। কিন্তু IELTS ছাড়া কানাডায় আসার পর ইংরেজি ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্সে ভর্তি হতে হবে। অনেক এজেন্সি হয়তোবা এমন কিছু কলেজ বা ইউনিভার্সিটির অফার লেটার এনে দেবার প্রতিশ্রুতি দিবে, যেসব জায়গায় যাবার আগে একজন স্টুডেন্টকে ভালোভাবে খোঁজ নিতে হবে যে,

১. সেই কলেজ বা ইউনিভার্সিটিগুলোর কোর্সটি পরবর্তীতে আদৌ কোন কাজে আসবে কিনা।
২. কানাডায় ল্যাণ্ড করার পর ওয়ার্ক পারমিট পাওয়া যাবে কিনা।
৩. কিংবা সেই কোর্স শেষ করে পারমানেন্ট রেসিডেন্সি-এর জন্যে অ্যাপ্লাই করা যাবে কিনা।
৪. আবার কানাডা'র ছোট কোন শহরে স্টুডেন্ট ভিসাতে আসলে কাজের সুযোগ কম। অনেকেই সেক্ষেত্রে চিন্তা করেন টরন্টো'র মতো বড় শহরগুলোর কোন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুভ হয়ে যাবেন কিনা। কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবর্তনের এই সুযোগের ব্যাপারেও খোঁজ নেওয়াটা জরুরি।
৫. ভিসার মেয়াদ কত দিন থাকবে ইত্যাদি।

কানাডায় শুধুমাত্র স্কলারশীপ দিয়েই পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। অনেকে পরিবারকে সহযোগিতা করা কিংবা লোন শোধ করার জন্যে অতিরিক্ত কাজ করেন যা পড়াশুনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। বাংলাদেশ থেকে কানাডায় পড়তে আসার সুযোগ যেমন রয়েছে, তেমনি স্টুডেন্টদেরকে কানাডায় আসার আগে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো ভালোভাবে জেনে আসতে হবে। এজেন্সি এবং দালালরা কাগজ প্রসেসিং করে টাকা নিতেই আগ্রহী। কিন্তু একজন স্টুডেন্টকেই কানাডা আসার ব্যাপারে সঠিক তথ্য অনুসন্ধান এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।

লেখক: সেচ্ছাসেবক, ইমিগ্রেশন ও সেটেলমেন্ট