ভারতের ১৪ ভাগ নারীই মানসিক রোগী!

ভারতীয় সমাজে নারীরা বরাবরই নিগৃহীত ও উপেক্ষিত। এর প্রভাব পড়েছে দেশটির মেয়েদের বেড়ে ওঠায়। এখন এমনই অবস্থা যে, একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে দেশটির প্রায় ১৪ শতাংশ নারী মানসিক রোগে আক্রান্ত।

তেমনি একজন ৪৫ বছর বয়সী রমা (ছদ্মনাম)। তিনি দুই ছেলেসহ স্বামীর সঙ্গে মুম্বাইয়ে বসবাস করেন। রমা জানান, ত্রিশ বছর বয়সে তিনি বুঝতে পারেন যে তার স্মৃতিশক্তি লোপ পাচ্ছে। স্বামীকে জানানোর পর একদিন ডাক্তারের কাছে গেলেন। ডাক্তার ওষুধ লিখলেও তা কখনোই তাকে কিনে দেয়া হয়নি। এভাবেই অবহেলায় রমার অসুখ বেড়ে যায়।

রমা এখন মুম্বাইয়ের বস্তির একটি বাড়িতে গৃহস্থালি কাজ করেন। সেখান থেকে যে টাকা পান তা থেকে নিজের জন্য কিছু ওষুধপত্র কেনেন। বাকি টাকা ছেলে-মেয়েদের জন্য কিছু সঞ্চয় করছেন।

রমার মত লক্ষ লক্ষ নারী আছেন ভারতে। যাদের ছোটবেলা থেকেই বেড়ে উঠতে হয় অযত্ন, অবহেলা, অবজ্ঞা আর গঞ্জনার মধ্য দিয়ে। যার কারণে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মেয়েদের তুলনায় ভারতের মেয়েদের মানসিকভাবে বেড়ে ওঠার হার কম।

দেশটির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেল্থ অ্যান্ড নিউরোসায়েন্সের (নিমহান্স) ২০১৬ সালের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশটির প্রায় ১৪ শতাংশ নারী মানসিক রোগী। আর ১০ ভাগ মানুষ খুব শিগগিরই এই রোগে আক্রান্ত হতে যাচ্ছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, এর মূল কারণ হলো নারীদের প্রতি বৈষম্য, চিকিৎসা না দেওয়া এবং অযত্ন-অবহেলা। ভারতের নারী স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংস্থার গবেষক রিণি থমাস জানান, ‘রোগী যে বয়সেরই হোক- মা, স্ত্রী, বোন কিংবা অন্য কোনো বয়সের নারী, তার চিকিৎসার ব্যাপারে আগ্রহ দেখানো প্রয়োজন।’ তিনি আরও বলেন, ‘অনেক নারীই আছে যে তার পরিবার থেকে কোনো সহযোগিতা পায় না।’

চিকিৎসা না পেয়ে মেয়েরা নিজের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলে। এভাবে তারা ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ড. কে ভি কিশোর কুমারও নারী স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘পরিবারের উচিত নয় নারীর সঙ্গে খলনায়কের মত আচরণ করা। তারাও আপনার আমার মত মানুষ।’

ভারতের জাতীয় নারী কমিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এই রোগের মূল কারণ হলো বৈষম্য, অসচেতনতা আর নারীর প্রতি অবহেলা।