আপনি পড়ছেন

নিষেধাজ্ঞা শেষে দেশের উপকূল অঞ্চলে ইলিশ শিকারের জন্য পুরোদমে জেলেদের প্রস্তুতি চলছে। নদী-সাগরে ফিরে যেতে উপকূল অঞ্ঝলের জেলেরা এখন প্রস্ততির জন্য ব্যস্ত সময় পার করছেন। সরকার ইলিশের প্রজনন বাড়াতে ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে ২২ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ ছিল।

hilsa hunting

সোমবার (২৯ অক্টোবর) থেকে জেলেরা আবারও সাগরে ফিরে যাবে ইলিশ শিকারে। ইলিশ বিচরণস্থল নদী এলাকায় আবার দেখা মেলবে জেলেদের। তবে তিনদিন বাদে ১ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত চলবে জাটকা (ছোট ইলিশ) মৌসুম। ওই আট মাস জাটকা ধরা সম্পূর্ন বন্ধ থাকবে। মৎস্য বিভাগ জাটকা না ধরার জন্য জেলেদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে।

জেলেদের অভিযোগ, বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ জলসীমায় অনুপ্রবেশ করে মিয়ানমার এবং ভারতীয় জেলেরা ইলিশ ধরে থাকে। বাংলাদেশ জলসীমায় যাতে ভিন্ন দেশিরা ইলিশ ধরতে না পারে এ জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে জেলেরা।

বাগেরহাট দড়াটানা নদীসংলগ্ন কেবি ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, সাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য জেলেদের নানা প্রস্তুতি চলছে। ডক থেকে ট্রলার নামিয়ে প্রস্তুত করা হচ্ছে। মাছধরা জাল, জ্বালানী তেল এবং প্রয়োজনীয় মালামাল বোঝাই করা হচ্ছে ট্রলারে। মাঝিরা ট্রলারের ইঞ্জিন চালিয়ে সচল করছে। একদিন পরে সোমবার থেকে জেলেরা ফিরে যাবে সাগরে ইলিশ ধরতে। আবারও জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়বে এমন আশায় বুক বেঁধেছে তারা।

মৎস্য বিভাগ জানায়, ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর বড় পূর্ণিমার এই সময়ে ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম ধরা হয়। মা ইলিশ এই সময়ে উপকূলের কাছাকাছি এসে ডিম ছাড়ে। ওই ডিম থেকে রেনু, ঝাটকা এবং পরবর্তীতে বড় ইলিশে পরিণত হয়। ইলিশের নিরাপদ প্রজননের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রধান প্রজনন মৌসুম অর্থাৎ ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিনের জন্য সরকার ইলিশ ধরার উপর ওই নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। এই সময়ে হাট-বাজারে ইলিশ ক্রয়-বিক্রয়, মজুদ ও বাজারজাতকরণ এবং পরিবহনও বন্ধ থাকে। সরকারের এই আইন বাস্তবায়নে মৎস্য অধিদপ্তর, নৌবাহিনী. কোস্টগার্ড, বিমান বাহিনী, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, র‌্যাব এবং স্থানীয় মৎস্য দপ্তরের উদ্যোগে অভিযান পরিচালনা করা হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে চালানো হয় ভ্রাম্যমাণ আদালত।

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যেসব জেলে ইলিশ আহরণ করেছে অভিযানে তাদের আটক করে কারাদন্ড ও অর্থদন্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযান চলাকালে জাল ও ইলিশ জব্ধ করা হয়েছে। তবে প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরা বন্ধ রাখতে আরও বেশি করে প্রচার-প্রচারণা এবং অভিযান জোরদার করার দাবি জানিয়েছে জেলে সংগঠনের নেতারা।

এফবি সাব্বির নামে মাছধরা ট্রলারের জেলে খুলনা জেলার গোবরচাকা এলাকার হক ইসলাম জানান, মা ইলিশ ডিম ছাড়বে এ কারণে সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে তাঁরা ৬ অক্টোবর ট্রলার নিয়ে সাগর থেকে বাগেরহাট কেবি ঘাটে ফিরে আসে। একটানা ২২ দিন তাদের মাছ ধরা বন্ধ ছিল। এখন আবার সাগরে ইলিশ ধরতে যাওয়ার জন্য তাদের প্রস্তুতি চলছে। ট্রলার ও জালসহ প্রয়োজনীয় মালামাল প্রস্তত করা হয়েছে। সোমবার (২৯ অক্টোবর) ভোরে তারা ট্রলার নিয়ে সাগরের উদ্দেশ্যে কেবি ঘাট ছেড়ে যাবে।

পিরোজপুর জেলার পাড়েরহাট এলাকার জেলে হারেচ আকন জানান, সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে ২২ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ ছিল। নতুন করে মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য আমাদের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। এখন আমাদের সাগরে যাওয়ার পালা। সাগরে যাতে জেলেরা ভেন্দিজাল (ছোটফাঁসের জাল) দিয়ে মাছ ধরতে না পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান হারেচ।

এফবি রুহুল আমিন নামে মাছ ধরা ট্রলারের জেলে পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার ছোট মাছুয়ারকুল গ্রামের আব্দুল হাই পেশকার জানান,তারা ১৩ জন জেলে মিলে সাগরে ইলিশ ধরে। এবছর চলতি মৌসুমে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত তারা সাগরে ইলিশ ধরেছে। কিন্তু বিভিন্ন সময় দুর্যোগ এবং প্রচন্ড ঢেউ থাকার কারণে এবছর তাদের জালে বিগত বছরের তুলনায় কম ইলিশ ধরা পড়েছে। আবারও জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়বে এমন আশায় রয়েছে ওই জেলে।

বাগেরহাট উপকূলীয় মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি শেখ ইদ্রিস আলী জানান, ঝাটকা সংরক্ষণ করা গেলে আগামী বছর ইলিশের উৎপাদন বেড়ে যাবে। বাংলাদেশ জলসীমায় যাতে বিদেশি জেলেরা মাছ ধরতে না পারে এজন্য সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান তিনি।

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জিয়া হায়দার চৌধুরী জানান, ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম ধরা হয় ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর। এই সময়ে মা ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য মিঠা পানিতে চলে আসে। ডিম থেকে রেনু, জাটকা এবং পরবর্তীতে বয়সপ্রাপ্ত হলে ইলিশ গভীর সমুদ্রে চলে যায়। ইলিশ যাতে নির্বিগ্নে ডিম ছাড়তে পারে এজন্য সরকার ওই ২২ দিন ইলিশ ধরার উপর নিষেধজ্ঞা জারি করে। নিষেধাজ্ঞা মেনে জেলেরা সাগর থেকে উপকূলে ফিরে আসে। এই সময়ে বঙ্গোপসাগরসহ সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকার নদ-নদীতে সব ধরণের মাছ আহরণ বন্ধ ছিল। আগামী সোমবার থেকে জেলেরা তাদের ট্রলার নিয়ে পুনরায় ফিরে যাবে মাছ ধরতে।

তিনি বলেন, এখন জাটকা রক্ষা করতে হবে। ২৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত সইজের ইলিশকে জাটকা বলা হয়। আগামী ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা ধরা নিষিদ্ধ। জেলেদের জাটকা না ধরার জন্য অনুরোধ জানান ওই মৎস্য কর্মকর্তা। জাটকা সংরক্ষণ করা গেলে আগামী বছর ইলিশের উৎপাদন পাঁচ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে বলে তিনি আশাবাদী।

মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১৬ লাখ ২০ হাজার। এর মধ্যে বাগেরহাট জেলায় নিবন্ধনকারী জেলের সংখ্যা ৩৯ হাজার ১০৩ জন। ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে দেশে পাঁচ লাখ নয় হাজার মেট্রিকটন ইলিশ উৎপাদন হয়েছে। আর চলতি বছর ইলিশের উৎপাদন আরও বেশি হবে বলে মৎস বিভাগ আশাবাদী।

বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তী, ইউএনবি।

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.