সৌম্যর এমন রাজকীয় প্রত্যাবর্তনের পেছনের গল্প

হঠাৎ ডাক পাওয়ার পর গত এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে করেছিলেন গুরুত্বপূর্ন ৩৩ রান। এরপর জিম্বাবুয়ে সিরিজে বাদ পড়লেন। কিন্তু প্রস্তুতি ম্যাচে ছিলেন। এরপর থেকে সৌম্য সরকারের পারফরম্যান্স রীতিমতো চমকে যাওয়ার মতো!

এশিয়া কাপ থেকে ফিরে জাতীয় লিগ খেলতে নেমেই করলেন অপরাজিত এক সেঞ্চুরি (১০৩)। খুলনা বিভাগের হয়ে পরের ম্যাচে বল হাতে ১ উইকেট, ব্যাট হাতে ৩৩। পরের ম্যাচে দুই ইনিংসে সৌম্যর রান ৭৬, ৭১। ওই ম্যাচে বল হাতে পাঁচ উইকেটও পেলেন। তারপর খুলনা থেকে ঢাকায় উড়ে এসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে করলেন আরেকটা সেঞ্চুরি (১০২*)।

তারপর আবার গেলেন খুলনায় জাতীয় লিগের ম্যাচ খেলতে, বল হাতে নিলেন দুই উইকেট আর ব্যাট হাতে ৬৬। এই ধারাবাহিকতার পুরস্কার হিসেবে সুযোগ পেয়েছিলেন জিম্বাবুয়ে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে। মাঠে নেমেই সৌম্য খেললেন মাত্র ৯২ বলে ১১৭ রানের নান্দনিক এক ইনিংস।

বারবার সুযোগ পাওয়ার পরও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রত্যাশার ছিটেফোটাও পূরণ করতে পারছিলেন না যে ব্যাটসম্যানটি তার হঠাৎ এমন পরিবর্তন! রহস্য কি? সৌম্য নিজেই জানালেন রহস্য।

কাল ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে ২৫ বছর বয়সী ক্রিকেটার জানান, আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক সময় দিতেন। কে কী বলল সেটা বুঝার চেষ্টা করতেন। কিন্তু সেখানে ভালো কথার চেয়ে খারাপ কথাই আসতো বেশি, যেটা তার মানসিক অবস্থাকে কঠিন করে তুলেছিল। একটা সময়ে ফেসবুক চালানো প্রায় বন্ধই করে দিয়েছেন, তারই পুরস্কার পাচ্ছেন এখন।

সৌম্য বলেন, 'আমার কাছে মনে হয়, (আগে) বাইরের কথা বেশি শুনতাম। ফেসবুকটা যখন ব্যবহার করতাম, তখন নেতিবাচক মন্তব্যগুলো আসত অনেক, যা মাথায় গেঁথে যেত। মানুষ ইতিবাচক জিনিসটা লেখেও না। এমন এক-একটা হেডলাইন আসত (ফেসবুকে শেয়ার করা), যেন আমি সবই খারাপ করেছি। আর আমরা বাংলাদেশিরা হেডলাইনটাই বেশি পড়ি, ভেতরে কী আছে পড়ে দেখি না। পরে ফেসবুক ব্যবহার বন্ধ করার কথা ভেবেছি। নেতিবাচক জিনিসগুলো কম নেব, মানুষের সঙ্গে কথা কম বলব। শুধু ইতিবাচক জিনিস নিয়েই বেশি ভাবার চেষ্টা করেছি। অনুশীলনও কম করতাম তখন, যখন খারাপ যায় তখন সবই খারাপ যায়, ভালো কিছু করলেও দেখা যায় খারাপই হচ্ছে। বন্ধুদের সঙ্গে বেশি সময় কাটাতাম সেই সময়ে।'

কাল যখন মাঠে নামছিলেন তখনও তার ঘাড়ে মস্তোবড় চাপের বস্তা। কারণ হঠাৎ তাকে দলে ডাকার কারণে সমালোচনা কম হচ্ছিল না। সৌম্য জানালেন কাল চাপ-টাপ নিয়ে ভাবেননি তিনি।

সৌম্য বলেন, 'আজ (গতকাল) আসলেই আমার মাথায় চাপ বা ও রকম কোনো কিছু ছিল না। আমি চিন্তা করেছি, আজ যদি খারাপ খেলি, হয়তো খারাপই হবে। খারাপই যাচ্ছিল সময়টা (আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে), আজও (কাল) যেতে পারত। ওই জিনিস নিয়ে ভাবিনি। বরং মনে হয়েছে, খারাপ যখন যাচ্ছে, আরেকটা ম্যাচ খারাপ গেলে যাবে, এ-ই তো। সমস্যা নেই। আরও কিছু কথা বাড়বে, সমস্যা কী! চিন্তা করেছি, নিজে নিজের খেলাটা খেলি। ভালো হলে বাহবা দেবে, খারাপ হলে সবাই খারাপ বলবে।' সৌম্য এই মানসিকতা ধরে রাখুন এটাই প্রত্যাশা।