একাধিক আসনে লড়তে আগ্রহী যেসব নেতা

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে তিনশ আসনে প্রার্থী বাছাই চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। গতকাল থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন। ইতোমধ্যেই সারাদেশের তিনশটি আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নের আশায় ফরম কিনেছেন সাড়ে চার হাজারেরও অধিক প্রার্থী।

তবে শরিক ২০-দলীয় জোট (সম্প্রসারিত ২৩ দল) এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কথা মাথায় রেখে চাইলেও তিনশ আসনে প্রার্থী দিতে পারবে না বিএনপি। স্বাভাবিকভাবেই শরিক দলগুলোর জন্য ‘কিছু’ আসন ছেড়ে দিতে হবে দলটিকে। সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকদের ধারণা, শরিক দলগুলোর জন্য বিএনপিকে অন্তত ৭০টি আসনে ছাড় দিতে হতে পারে।

এমতাবস্থায় বিএনপি ও দুই জোটের বেশকিছু হেভিওয়েট নেতা একাধিক আসনে নির্বাচন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। পুরো ব্যাপারটি বিএনপির জন্য একটি বিব্রতকর অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিএনপির মনোনয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০ দলের শীর্ষ নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তিনটি আসনে নির্বাচন করতে চান। তার নামে বগুড়া-৬ (সদর), বগুড়া-৭ (গাবতলী ও শাহজাহানপুর) এবং ফেনী-১ (ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া) আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম কেনা হয়েছে। তবে দুর্নীতির মামলায় ১৭ বছর দণ্ডিত হওয়ায় তার নির্বাচন করা আদালত ও ইসির সিদ্ধান্তের ওপর ঝুঁলছে। এক্ষেত্রে তার আসনে খালেদা জিয়ার বিকল্প ভাবা হচ্ছে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন ও তারেকপত্নী ডা. জোবাইদা রহমানকে।

২০-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদও দুটি আসনে নির্বাচন করতে চান। তার বাড়ি চট্টগ্রামে। সেখানকার চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ ও সাতকানিয়ার একাংশ) ও চট্টগ্রাম-১৩ (সাতকানিয়া ও লোহাগড়া) আসন থেকে নির্বাচনে লড়তে চান তিনি। তবে চট্টগ্রাম-১৩ তে জোটের শরিক জামায়াতেরও হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমের বাড়ি টাঙ্গাইল। তিনি টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল ও সখীপুর) এবং টাঙ্গাইল-৪ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।

এছাড়া ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি) ও ঢাকার একটি আসন থেকে নির্বাচন করতে আগ্রহী।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জোট নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন দুটি আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন। তিনি কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি ও মেঘনা) ও কুমিল্লা-২ (হোমনা-তিতাস) আসনে নির্বাচন করতে চাচ্ছেন।

নোয়াখালী-৫ (কবিরহাট-কোম্পানীগঞ্জ) এবং ফেনী-১ (ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া) থেকে নির্বাচন করতে পারেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। এছাড়া খালেদা জিয়ার আসনে ফেনী-১ এ খালেদা জিয়া বা তার পরিবারের কেউ না নির্বাচন করলে সেখানেও তিনি নির্বাচন করতে পারেন।

ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন নিজে নির্বাচন করতে না চাইলেও তাকে দুটি আসনে নির্বাচনে অনুরোধ করবে নিজ দল ও জোটের শরিকরা। তিনি রাজি হলে তাকে ঢাকা-১০ বা ঢাকা-১৪ এবং ঢাকা-১২ আসনের যে কোনো দুটিতে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু নাটোরের দুটি আসন থেকে নির্বাচন করতে চান।

ঐক্যফ্রন্ট্রের আর এক নেতা নেতা নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) এর পাশাপাশি ঢাকার একটি আসন থেকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

ঢাকা-২ (কেরানীগঞ্জ) এবং ঢাকা-৩ (কেরানীগঞ্জের একাংশ, কামরাঙ্গীরচর ও সাভারের একাংশ) অথবা ঢাকার অন্য আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু। তবে এ দুই আসনে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর রায় এবং চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান মনোনয়ন চেয়েছেন।

২০ দলের আর এক শরিক বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ ভোলা-১ আসন ও ঢাকার একটি আসন থেকে নির্বাচন করতে চান। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার পঞ্চগড় ও ঢাকার একটি আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন।

ঢাকা-৮ (খিলগাঁও-সবুজবাগ) ও ঢাকা-৯ (মতিঝিল-পল্টন) থেকে ভোট করতে চান বিএনপির দলের স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ও ঢাকার প্রভাবশালী নেতা মির্জা আব্বাস।