কপাল পুড়ছে জাতীয় পার্টির, ভাগ্য খুলছে যুক্তফ্রন্টের!

দুটি জোট ও মিত্রদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগিতে হিমশিম খাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি সব মিলিয়ে জোট শরিক ও মিত্রদের ৫৫-৬০টি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের শরিকদের আসন কমছে। আর কপাল খুলছে নতুন মিত্র যুক্তফ্রন্ট ও ধর্মভিত্তিক দলগুলোর।

দলীয় সূত্র জানায়, আসন ভাগাভাগি নিয়ে বিপাকে পড়েছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দল হওয়ায় জোট শরিক ও মিত্ররা বেশি আসন চাইছে। এ নিয়ে দর কষাকষিতে আপোষে আসা যাচ্ছে না। তাই এবার আসন বণ্টনের ব্যাপারে কঠোর হচ্ছে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী একাধিক নেতা জানান, জাতীয় পার্টিকে (জাপা) ৪০টি আসনে ছাড় দেয়ার কথা বলা হচ্ছিল। তবে এখন তারা ৩১টি আসনে ছাড় পাবে। আর ১৪-দলের শরিকদের ছাড়া হবে ১২টি আসন। অন্যদিকে নতুন মিত্র বি চৌধুরীর যুক্তফ্রন্টকে তিনটি আসনের বিষয়ে ভাবা হলেও এখন তাদের ৮টি আসনে ছাড় দেয়া হবে। আর ইসলামী ঐক্রজোটসহ ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দল ৫টি আসনে ছাড় পাচ্ছে।

যুক্তফ্রন্টকে বেশি আসনে ছাড়া দেয়ার কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে বিএনপিসহ বিরোধী জোট মনোনয়ন বঞ্চিত নেতাদের মনোনয়ন দেয়ার বিষয়টি। তবে এ ব্যাপারে শেষ মুহূর্তে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

জানা গেছে, মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি একাই ৭০টি আসনে ছাড় চেয়েছিল। তাদের ৪০টি আসন দেয়ার কথা কলা হলেও তারা ৫০টির নিচে নামতে চাইছে না। তাই বিরোধী জোটের সম্ভাব্য মনোনয়ন বঞ্চিতদের কথা বিবেচনা করে যুক্তফ্রন্টকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আর ১৪ দলের বাম শরিকদের বিপরীতে ইসলামী দলগুলোকে কাছে টানার নীতি নেয়া হচ্ছে।

বর্তমানে জাপার ৩৪ জন সংসদ সদস্য রয়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন বাদ পড়তে পারেন। সেইসঙ্গে নতুন করেও কয়েকজন যুক্ত হতে পারেন। এটি নির্ভর করছে এরশাদের ওপর।

এ বিষয়ে জাপার মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘আসন সমঝোতার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সঙ্গে এখনো আলোচনা চলছে। এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। তাই এখনই স্পষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না।’

এদিকে ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, তরীকত ফেডারেশন ও জাতীয় পার্টির (জেপি) ১৫ জন সংসদ সদস্য রয়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে বাদ পড়ছেন। আবার নতুন করেও যুক্ত হচ্ছে তিন-চারটি আসন। সব মিলিয়ে এবার এ জোটকে ১২টি আসন ছাড়া হতে পারে।

এ বিষয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আসন বণ্টন নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে। বর্তমান এমপিদের রেখে দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। আমরা আসন নিয়ে দ্রুত আনুষ্ঠানিক সমঝোতা চাই।’

অন্যদিকে বিএনপি থেকে আসা নেতাদের নিয়ে গঠিত এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারা এবং যুক্তফ্রন্টকে ৮টি আসনে ছাড় দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকা-১১ আসনে বি চৌধুরী, তাঁর ছেলে মাহী বি চৌধুরী মুন্সিগঞ্জ-১ ও লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে বিকল্পধারার মহাসচিব আবদুল মান্নান ও সমশের মবিন চৌধুরী সিলেট-৬ আসনে ছাড় দেয়া হতে পারে। এছাড়া বিএনপি থেকে যুক্তফ্রন্টে আসা এম এম শাহীনতে মৌলভীবাজার-২, জাপার সাবেক দুই এমপি গোলাম সারোয়ার মিলনকে মানিকগঞ্জ ও গোলাম রেজাকে সাতক্ষীরায় এবং বিএনপি জোট থেকে আসা এনডিপির জেবেল রহমান গাণিকে নীলফামারীতে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে।

এ বিষয়ে বিকল্পধারার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সমশের মবিন চৌধুরী বলেন, ‘আসন সমঝোতা নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে এখনো আলোচনা চলছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি।’

এদিকে ইসলামী দলগুলোর মধ্যে তরীকত ফেডারেশনের বহিষ্কৃত সাবেক মহাসচিব এম এ আউয়ালকে লক্ষ্মীপুর-১ আসনে, তরীকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীকে চট্টগ্রাম-২ আসনে, নতুন মিত্র ইসলামী ঐক্যজোটের সহসভাপতি আবুল হাসনাত আমিনীকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এবং ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান বাহাদুর শাহকে চাঁদপুর-৫ আসনে এবং জাকের পার্টিকে একটি আসনে ছাড় দেয়া হতে পারে।