যেসব আসনে শরিকদের ছাড় দিচ্ছে বিএনপি

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। ইতোমধ্যে বেশকিছু প্রার্থীকে চিঠিও দিয়েছে। তবে নির্বাচনী সঙ্গী ২০-দলীয় জোট (সম্প্রসারিত ২৩ দল) এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি এখনও চূড়ান্ত করতে পারেনি।

গতকাল রোববার দিনভর দুই জোটের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি নেতারা। তবে সব মিলিয়ে ৬৫ থেকে ৭০ আসন ছাড়ার চিন্তা করেছে দলটি। এ ক্ষেত্রে ২০ দলকে ৪৫ এবং ঐক্যফ্রন্টকে ২০টি আসন দেয়া হবে।

আসন বণ্টনে দরকষাকষি করতে এদিন বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে বৈঠকে শরিকরা তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা বিএনপির কাছে হস্তান্তর করেন। সেই তালিকা নিয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা আলোচনা করে।

রাতে আবারও এক বৈঠকে কোন কোন আসনে শরিকদের ছাড় দিতে চায় বিএনপি সেটা জানিয়ে দেয়। তবে ওই বৈঠকে ঐক্যমতে পৌঁছতে পারেনি জোট নেতারা। সেই বৈঠক ফের আজ হওয়ার কথা আছে।

বিএনপির একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে ২০ দলকে ৪০ থেকে ৪২টি আসনে ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামীকে ২৪, এলডিপিকে চারটি, বিজেপি ১টি, এনপিপি ১টি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ১টি, খেলাফত মজলিসকে ১, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামকে ১টি আসন দেয়ার কথা হয়।

তবে জামায়াত প্রথমে ৫৪টি আসন দাবি করলেও শেষ পর্যন্ত তারা ৩৫টি আসনে অনড় আছে। এ বিষয়ে দলটির কেন্দ্রীয় এক নেতা জানিয়েছেন, ‘বিএনপি এখন পর্যন্ত ২৫ আসন ছাড়তে রাজি হয়েছে। জামায়াত আরও আসন চায়।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় জানান, বিএনপির প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে। জোট ও ফ্রন্টের সঙ্গে আলোচনা করে বাকিগুলো চূড়ান্ত করা হবে।

যেসব আসনে ২০ দলের শরিকরা

জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী: জামায়াতকে যে ২৪টি আসনে ছাড় দিতে চায় বিএনপি- চট্টগ্রাম-১৫ আ ন ম শামসুল ইসলাম, কক্সবাজার-২ হামিদুর রহমান আজাদ, কুমিল্লা-১১ ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের। সিলেট-৫ মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, সিলেট-৬ মাওলানা হাবিবুর রহমান। বগুড়া-৪ মাওলানা তায়েব আলী, সিরাজগঞ্জ-৪ রফিকুল ইসলাম খান, পাবনা-১ আবদুল বাসেত, পাবনা-৫ ইকবাল হোসাইন।

যশোর-২ আবু সাঈদ মুহাম্মদ শাহাদত হোসাইন, বাগেরহাট-৩ অ্যাডভোকেট আবদুল ওয়াদুদ, বাগেরহাট-৪ আবদুল আলীম; খুলনা-৫ মিয়া গোলাম পরওয়ার; খুলনা-৬ আবুল কালাম আযাদ, সাতক্ষীরা-২ মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, সাতক্ষীরা-৩ মুফতি রবিউল বাশার, সাতক্ষীরা-৪ গাজী নজরুল ইসলাম, পিরোজপুর-২ শামীম সাঈদী।

ঠাকুরগাঁও-২ মাওলানা আবদুল হাকিম, দিনাজপুর-১ মাওলানা আবু হানিফ, দিনাজপুর-৬ আনোয়ারুল ইসলাম, নীলফামারী-৩ মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম, লালমনিরহাট-১ আবু হেনা মো. এরশাদ হোসেন সাজু, রংপুর-৫ অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, কুড়িগ্রাম-৪ নূর আলম মুকুল, গাইবান্ধা-১ অধ্যাপক মাজেদুর রহমান, গাইবান্ধা-৪ ডা. আবদুর রহীম সরকার।

এলডিপি: চারটি আসন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিকে (এলডিপি) দেবে বিএনপি। এর মধ্যে- কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ (চট্টগ্রাম-১৪), মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ (কুমিল্লা-৭), শাহাদাত হোসেন সেলিম (লক্ষ্মীপুর-১), আবদুল করিম আব্বাসীকে (নেত্রকোনা-২)।

জাতীয় পার্টি (জাফর): ড. টিআই ফজলে রাব্বী (গাইবান্ধা-৩), দলের মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার পিরোজপুর-১ আসনে জোটের মনোনয়ন পাচ্ছেন।

জমিয়তে ওলামা: মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস যশোর-৫ এবং শাহীনুর পাশা চৌধুরী (সুনামগঞ্জ-৩) থেকে নির্বাচন করবেন।

বিজেপি: বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থকে ভোলা-১ আসন ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।

কল্যাণ পার্টি: কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম চট্টগ্রাম-৫ আসনে মনোনয়ন পাচ্ছেন।

জাগপা: জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা প্রতিষ্ঠাতা শফিউল আলম প্রধানের মেয়ে ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধানকে পঞ্চগড়-২ আসন দেয়ার চিন্তা করা হচ্ছে।

পিপলস পার্টি: পিপলস পার্টি অব বাংলাদেশের রিটা রহমান নীলফামারী-১ আসনে জোট থেকে মনোনয়ন দেয়া হবে।

মাইনরিটি জনতা পার্টি: বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টির সুকৃতি কুমার মণ্ডলকে যশোর-৪ আসনে জোট থেকে হয়ে নির্বাচন করবেন।

খেলাফত মজলিস: দলটির মহাসচিব অধ্যাপক আহমেদ আবদুল কাদের হবিগঞ্জ-৪ আসনে নির্বাচন করবেন।

এনপিপি: এনপিপির সভাপতি ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদকে নড়াইল-২ এ মনোনয়ন দেয়া হবে।

এছাড়া, বাংলাদেশ লেবার পার্টি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান পিরোজপুর-১ আসন এবং সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইদ আহমেদ (নারায়ণগঞ্জ-৫) থেকে মনোনয়ন চাইছেন। বিএনপি তাদের সবুজ সংকেত দেয়নি।