১০ বছরে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন শাহজাহান খান

গত দশ বছরে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মন্ত্রী ও এমপির মতো দলটির প্রভাবশালী মন্ত্রী ও শ্রমিক নেতা শাহজাহান খানের সম্পদও বেড়েছে। সেই সাথে বেড়েছে তার স্ত্রীর সম্পদও। এক দশক আগে নৌপরিবহনমন্ত্রীর নিজ নামে ঢাকায় কোনো ফ্ল্যাট কিংবা জমি না থাকলেও এখন পূর্বাচল, লালমাটিয়া, বাড্ডা এবং মেরাদিয়ায় তার ও স্ত্রীর নামে জমি ও ফ্ল্যাট আছে।

নবম, দশম এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দশ বছরে শাহজাহান খানের সম্পদ বেড়েছে ৯৩ গুণ। আর তার স্ত্রী সৈয়দা রোকেয়া বেগমের সম্পদ বেড়েছে ১২ গুণ। সে হিসেবে স্বামী স্ত্রীর বেড়েছে ১০৫ গুণ। তবে ছেলের সম্পদের কথা উল্লেখ করেননি তিনি।

মাদারীপুর-২ আসনে এই এমপি একাদশ জাতীয় সংসাদ নির্বাচনের হলফনামায় দেখিয়েছেন, সাধারণ ব্যবসা থেকে বছরে তিনি ৩ কোটি তিন লাখ ৬২ হাজার ২৫০ টাকা আয় করেন। ২০০৮ সালে যা ছিল মাত্র এক লাখ ৭০ হাজার টাকা। তবে ২০১৩ সালে এ খাতে কোনো আয় দেখাননি।

শাহজাহান খান বর্তমানে ভাড়াবাবদ দুই লাখ ৩৯ হাজার ৪২৯ টাকা আয় করেন। ২০১৩ সালেও এই খাতে তিনি আয় দেখাননি।

২০১৩ সালে হলফনামায় মন্ত্রী হিসেবে পারিতোষিক ও ভাতাদি ছাড়া সঞ্চয়পত্র থেকে মাত্র ২২ হাজার ১২৯ টাকা আয় দেখিয়েছেন। এখন ভাড়া, ব্যবসা, মন্ত্রী হিসেবে পারিতোষিক ও ভাতাদির পাশাপাশি ব্যাংক আমানতের লাভ থেকে আয় করেন দুই লাখ ৯১ হাজার ২০০ টাকা।

২০০৮ সালে তার স্ত্রীর শিক্ষকতা থেকে মাসিক আয় ছিল মাত্র পাঁচ হাজার ২০০ টাকা। ২০১৩ সালে চাকরি ও ব্যবসা থেকে তার স্ত্রী আয় করেছিলেন পাঁচ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

তথ্য অনুযায়ী, মন্ত্রী অস্থাবর সম্পদ হিসেবে ২০০৮ সালে তিনটি অ্যাকাউন্টে মোট তিন লাখ ৩৪ হাজার ৬০৪ টাকা, স্ত্রীর নামে ১২ হাজার ৪৭০ টাকা দেখিয়েছিলেন। যা এবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে নিজ নামে এক কোটি ২৩ লাখ ৫২ হাজার ৩১১ টাকা ও স্ত্রীর নামে ২০ লাখ ৯১ হাজার ৪৩৬ টাকা।

গেলো দুই নির্বাচনে কোনো নগদ টাকা না দেখালেও, এবার নিজের কাছে ২৫ লাখ ৪২ হাজার ৪১৩ টাকা ও স্ত্রীর কাছে ২৩ লাখ ৪৮ হাজার ৫৬৪ টাকা আছে বলে উল্লেখ করেছেন।

অস্থাবর সম্পদ: ২০০৮ সালে শাহজান খানের চেয়ে স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তি ছিল বেশি। ৫২ লাখ ৪৯ হাজার ৯৪৪ টাকা মূল্যের শুধু একটি জিপ ছিল তার। কিন্তু স্ত্রীর নামে ছিল ২৪ লাখ টাকা মূল্যের দুটি বাস, ১২ লাখ টাকা মূল্যের একটি কার এবং চার লাখ টাকা মূল্যের একটি মাইক্রো ছিল। এছাড়া তার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তির নামে ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের একটি বাস ছিল।

তবে ২০১৩ সালে তার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তির নামে ও স্ত্রীর নামে কোনো পরিবহন ছিল না। কিন্তু নিজ নামে ৫০ লাখ টাকা মূল্যের একটি জিপ ছিল। বর্তমানে এক কোটি ৫০ লাখ টাকা মূল্যের দুটি জিপ ও একটি মাইক্রোবাস আছে তার।

জমি জমা: ২০০৮ সালে পৈত্রিক সূত্রে পাঁচ কাঠা কৃষি জমি দেখিয়েছিলেন, পাঁচ বছর পর ২০১৩ সালে এক একর ৫ শতাংশ হয়। এখন এসে সেই সম্পদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও ৯৩ লাখ ২০০ টাকার জমি। এছাড়াও দশ বছরে শরীয়তপুর ও মাদারীপুরে অকৃষি জমি বেড়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ।

বাড়ি ঘর ও ঢাকার জমি: নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শাহজাহান খান তার স্ত্রীর নামে ঢাকার আনন্দনগর ও পূর্বাচলে জমির কথা উল্লেখ করেন। এবারের হলফ নামায় তিনি নিজের নামে লালমাটিয়ায় ফ্ল্যাট ও জমির কথা উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি স্ত্রীর নামে পূর্বাচল, বাড্ডা এবং মেরাদিয়ার ফ্ল্যাট ও প্লট দেখিয়েছেন।

বন্দুক-পিস্তলও আছে: গেলো দুই নির্বাচনে ৬০ হাজার টাকা মূল্যের বন্দুক ও পিস্তল দেখিয়েছিলনে। যার মূল্য বেড়ে এবার তিন লাখ দুই হাজার টাকা হয়েছে।

এক দশক আগে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ঋণ থাকলেও, এখন আর কোনো ঋণ নেই শাজাহান খানের।