শেষপর্যন্ত কঠিন করে জিতল কুমিল্লা

ম্যাচটা হাতের মুঠোয় ছিল। খুলনা টাইটানসের ছুড়ে দেওয়া ১৮১ রানের কঠিন চ্যালেঞ্জটাকে মামুলি বানিয়ে জিতবে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস এমনটাও ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু ১১৫ রানে তামিম ইকবাল ও এনামুল হক বিজয়ের উদ্বোধনী জুটি বিচ্ছিন্ন হতেই ম্যাচটা পেয়েছে প্রাণ। শেষ পর্যন্ত সহজ ম্যাচটা কঠিন করে জিতেছে কুমিল্লা (১৮৬/৭)। ইমরুল-তামিমদের জয় তিন উইকেটের। ইনিংসের দুই বল হাতে রেখে জয় তুলে নেন তারা।

সিলেট স্টেডিয়ামে কঠিন লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে প্রথম দশ ওভারে দলীয় সংগ্রহ এক শ ছাড়িয়েছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস। দ্রুতগতিতে রান তোলায় মূল অবদানটা রাখলেন তামিম ইকবাল। রানখরায় ধুঁকতে থাকা বাঁ-হাতি ওপেনার আজ সময় মতোই জ্বলে উঠলেন। লক্ষ্য তাড়ায় তামিমের ৭৩ রানের ইনিংসটা রাখল কার্যকর ভূমিকা। ঝলমলে ইনিংসের পুরস্কার হিসেবে প্রত্যাশিতভাবেই ম্যাচ সেরা হয়েছেন তামিম।

তামিম-বিজয়কে বিচ্ছিন্ন হতেই যেন স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ফেলল খুলনা টাইটানস। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা জুটি ভাঙেন লাসিথ মালিঙ্গা। তামিমকে উইকেটরক্ষক নাজমুল হোসেন শান্তর ক্যাচে পরিণত করে ম্যাচটা কিছুটা হলেও জমিয়ে তোলার আভাস দেন লঙ্কান পেসার। একটা পর্যায়ে তো ম্যাচটা ফিফটি-ফিফটি মনে হচ্ছিল। শেষ তিন ওভারে কুমিল্লার ২৮ রান দরকার ছিল।

উদ্বোধনী জুটি বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর সাবেক চ্যাম্পিয়নদের ছন্দপতন। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট খোয়ায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস। তামিমের পথ ধরে একে একে সাজঘরে ফিরে গেলেন বিজয়, শামসুর রহমান, ইমরুল কায়েস, লিয়াম ডওসন ও শহিদ আফ্রিদি। এদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৭ বলে ৪০ রান করেছেন বিজয়।

অধিনায়ক ইমরুল যেভাবে ঝড় তুলেছিলেন তাতে করে জয়ের পথটা আরো সহজ হয়ে উঠেছিল কুমিল্লার জন্য। ১১ বলে তিনটি ছক্কা ও এক চারে ২৮ রানে বিদায় নেন ইমরুল। ম্যাচটা জমে ওঠার চূড়ান্ত আভাস পাওয়া গেল তখনই। কিন্তু কুমিল্লা ভিক্টোরয়ানস নির্ভার। তাদের ম্যাচটা জেতানোর মতো আরো কয়েকজন ব্যাটসম্যান যে আছেন।

প্রথম তিন ওভারে ১৩ রান দেওয়া মালিঙ্গার ১৮তম ওভারে নয় রান নেয় কুমিল্লা। লঙ্কান পেসারকে ছক্কার মারার পরের বলেই অক্কা পান পাকিস্তানি অলরাউন্ডার আফ্রিদি। নয় বলে ১২ রানের আফ্রিদির ইনিংসটাই ম্যাচ নির্ধারণে কার্যকর ভূমিকা রাখল। পাকিস্তানি অলরিউন্ডার ফিরে গেলেও এক প্রান্ত ঠিকই আগলে রেখে ম্যাচটা শেষ করে আসেন থিসারা পেরেরা।

কার্লোস ব্র্যাথওয়েটের শেষ ওভারে আট রান দরকার ছিল কুমিল্লার। দুই বল বাকি থাকতেই সহজ সমীকরণটা মিলিয়ে দেন পেরেরা। শেষ পর্যন্ত সাত বলে ১৮ রানের বিধ্বংসী একটা ইনিংস খেলেন পেরেরা। ব্রাথওয়েটের শেষ ওভারে একটি চার ও একটি ছক্কা মেরে জয়ের শেষের নায়কের ভূমিকা পালন করেছেন লঙ্কান অলরাউন্ডার।

এর আগে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে জ্বলে উঠেছিলেন খুলনা টাইটানসের ব্যাটসম্যানরাও। নির্ধারিত ২০ ওভারে সাত উইকেটে ১৮১ রানের শক্তিশালী সংগ্রহ তুলেছে খুলনা টাইটানস। খুলনার বড় সংগ্রহে মূল অবদান জুনায়েদ সিদ্দিকির। যিনি আগের পাঁচটি ম্যাচে দারুণ শুরু করেও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। আজ কুমিল্লার বিপক্ষে সেই দুঃখ কিছুটা হলেও মোচন করলেন খুলনা ওপেনার। তুলে নিলেন দুর্দান্ত এক হাফসেঞ্চুরি। পরে উইকেটে দিয়েছেন সিজদাহ।

শেষ পর্যন্ত ৪১ বলে ৭০ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলে বিদায় নিয়েছেন জুনায়েদ। চারটি করে চার-ছক্কায় ইনিংসটি সাজিয়েছেন তিনি। ফেরার আগে সতীর্থদের সঙ্গে তিনটি কার্যকর জুটি গড়েছেন তিনি। অথচ এমন বড় ইনিংসের ভালো ছিল না খুলনার। মাত্র দুই রানে ফিরে যান ওপেনার জহুরুল ইসলাম।

শুরুতেই সতীর্থকে হারানোর ধাক্কাটা ভালোভাবেই সামলে নেন জুনায়েদ। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে আল-আমিনকে নিয়ে স্কোর বোর্ডে যোগ করেন ৭২ রান। এই জুটির সুবাদে প্রথম সাত ওভারেই এক উইকেটে ৭৩ রান রান তুলে নেয় খুলনা। দ্বিতীয় উইকেট জুটি বিচ্ছিন্ন হয় ১৯ বলে ৩২ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে আল-আমিন বিদায় নিলে।

৯৫ রানে খুলনার তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফেরেন অধিনায়ক মাহমুদু্ল্লাহ রিয়াদ। ফেরার আগে নয় বলে ১৬ রান করেছেন তিনি। পরে ডেউইড মালান ধীরগতিতে ব্যাট চালান আচমকা বিপর্যয় এড়াতে। ২৫ বলে ২৯ রান করে আউট হয়ে যান বিপিএল খেলে উঠে আসা ইংলিশ তারকা।

ইনিংসের শেষ দিকে কার্লোস ব্রাথওয়েট ও আরিফুল হক নয়টি করে বল খেলে রান করেছেন যথাক্রমে ১২ ও ১৩। তাদের ছোটখাটো ইনিংস দুটো খুলনাকে বড় সংগ্রহ তুলতে কিছুটা হলেও এগিয়ে দিয়েছে। খুলনার পতন হওয়া সাত উইকেটের তিনটি নিয়েছেন কুমিল্লার তারকা অলরাউন্ডার শহিদ আফ্রিদি। দুটি শিকার পাকিস্তানি আরেক তারকা ওয়াহাব রিয়াজের। একটি উইকেট নিয়েছেন মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন।

আগের পাঁচটি ম্যাচেই ব্যাটিং অর্ডারের কারণে ধুঁকতে হয়েছে খুলনা টাইটানসকে। আজ ব্যাটসম্যানরা ঠিকই প্রত্যাশা ছাড়িয়েছেন। বোলারদের এনে দিয়েছেন বড় সংগ্রহ। কিন্তু শক্তিশালী সংগ্রহ পাওয়ার পরও তা কাজে লাগাতে পারলেন না মাহমুদুউল্লাহ-জুনাইদ-মালিঙ্গারা। ষষ্ঠ ম্যাচের তাই পঞ্চম হারের স্বাদ পেয়েছে খুলনা। অন্যদিকে ছয় ম্যাচের চারটিতে জিতল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস।