অবিশ্বাস্য মিলার, ফিল্ডিং করেই ম্যাচ সেরা!

ফ্যাফ ডু প্লেসি ও রেজা হেনড্রিক্সের ঝড়ো হাফসেঞ্চুরির ওপর দাঁড়িয়ে ছয় উইকেটে ১৯২ রানের শক্তিশালী সংগ্রহ তোলে প্রোটিয়ারা। জবাব দিতে নেমে রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে নির্ধারিত ওভারে নয় উইকেটে ১৮৬ রান তুলতে সক্ষম হয় পাকিস্তান। নাটকীয় লড়াইয়ে ছয় রানে জিতে তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের এগিয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা। আগামী রোববার জোহানেসবার্গে দ্বিতীয় ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।

শুক্রবার কেপ টাউনে স্বাগতিকদের নাটকীয় এই জয়ের আসল নায়ক ডু প্লেসি কিংবা হেনড্রিক্স একজনও নন। বল হাতেও ব্যবধান গড়ে দেওয়ার মতো একক নায়ক কেউ নেই। ফিল্ডিং করেই পাকিস্তানকে হারিয়ে দিয়েছেন ডেভিড মিলার। এক নয়, দুটি নয়, পাকিস্তানের ছয় ছয়টি আউটে হাত থাকল দক্ষিণ আফ্রিকান তারকার। অভাবনীয় ব্যাপার!

সতীর্থদের বলে দুর্দান্ত চারটি ক্যাচ নিয়েছেন মিলার; করেছেন দুটি রান আউট। প্রায় অবিশ্বাস্য ফিল্ডিং পারফরম্যান্সের সুবাদে মিলারই হলেন ম্যাচ সেরা। ব্যাট কিংবা বল হাতে দ্যুতি না ছড়িয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ম্যাচ সেরার স্বীকৃতি পাওয়ার ঘটনা আছে হাতে হাতে গোনা কয়েকটা। প্রথমবার এমন ঘটনা ঘটেছিল ১৯৮৬ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দ্বিতীয় ম্যাচে। ওই ম্যাচে পাকিস্তানকে নয় উইকেটে হারিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

সেদিন পাকিস্তানকে হারিয়ে দিয়েছিলেন গাস লোগি। অবিশ্বাস্য ফিল্ডিংয়ের লোগির নামে পাশে ‘ফ্লাইং ক্যারিবীয়ান’ বিশেষণ বসে যায়। দক্ষিণ আফ্রিকানদের মধ্যে প্রথমবার ফিল্ডিং করে ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন কিংবদন্তি ক্রিকেটার জন্টি রোডস। ১৯৯৩ সালের নভেম্বরে হিরো কাপে মুম্বাইতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পাঁচটি ক্যাচ নিয়েছিলেন তিনি। রোডসের চেয়ে একটি ক্যাচ কম নিয়েছেন উত্তরসূরি মিলার। তবে ছয়টি উইকেট পতনে অবদান রেখে একদিক থেকে পূর্বসূরিকেও ছাপিয়ে গেছেন ‘কিলার মিলার'।

টস হেরে আগে ব্যাট করতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকার বড় সংগ্রহের নায়ক দুজন- ডু প্লেসি ও হেনড্রিক্স। শুক্রবার দুজনই পাকিস্তানি বোলারদের বেধড়ক পিটিয়েছেন। ৪১ বলে ৭৪ রানের (আটটি চার, দুটি ছক্কা) বিধ্বংসী ইসিংস খেলেছেন ওপেনার হেনড্রিক্স। ৪৫ বলে ৭৮ রানের (ছয়টি চার, চারটি ছক্কা) ঝড় উঠেছিল তিনে নামা অধিনায়ক ডু প্লেসির ব্যাটে। এ ছাড়া গিহান ক্লোয়েট ১৩ বলে ১২ এবং ১২ বলে ১০ রান করেছেন মিলার।

দক্ষিণ আফ্রিকার ছুড়ে দেওয়া ১৯৩ রানের লক্ষ্যমাত্রায় ব্যাট করতে নেমে চার রানে ফখর জামানকে হারালেও ধাক্কাটা সামলে নিয়েছেন বাবর আজম ও হুসাইন তাওলাত। দ্বিতীয় উইকেটে দুজন মিলে ৮১ রানের দারুণ এক জুটি গড়েন। প্রায় দুশো রানের লক্ষ্যটা পাকিস্তান হেসেখেলে জয় করে ফেলবে এমনটাই ভাবা হচ্ছিল। অবশেষে নবম ওভারের শেষ বলে দুজনকে বিচ্ছিন্ন করেন তাবরাইজ শামসি। ৩২ বলে ৪০ রানে (পাঁচটি চার) বিদায় নেন তালাত।

এরপরই শুরু ‘মিলার শো’। দুর্দান্ত এক থ্রোতে মিলার স্টাম্প ভাঙলেন বাবরের। ২৭ বলে ৩৮ রান (তিনটি চার, একটি ছক্কা করে ফিরে যান পাকিস্তানের দ্বিতীয় ওপেনার। পরে চারটি দারুণ ক্যাচ নেন মিলার। রান আউট করলেন আরো একটি। মিলারের অতিমানাবীয় ফিল্ডিংয়ে যেন দিশেহারা হয়ে পড়েছিল পাকিস্তান। চিতার বেগে দৌড়ে, বাজপাখির মতো ছোঁ মেরে এবং শূন্যে লাফিয়ে মিলার যে ক্যাচগুলোর ধরলেন তা সত্যিই চোখে প্রশান্তি এনে দেওয়ার মতো।

হঠাৎ ছন্দপতনে সাজঘরে আসা-যাওয়ার মিছিল লেগে যায় পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের। এক প্রান্ত আগলে রেখে দলের জয়ের আশা কিছুটা হলেও বাঁচিয়ে রেখেছিলেন শোয়েব মালিক। শেষ ওভারে ১৩ রানের কঠিন সমীকরণ মেলাতে পারেননি তিনি। আউট হয়ে গেছেন ওভারের তৃতীয় বলে। তার ক্যাচটিও নিয়েছেন ওই মিলারই। তাতে বৃথাই হেল শোয়েবের ৩১ বলে ৪৯ রানের (পাঁচটি চার, একটি ছক্কা) বিধ্বংসী ইনিংসটা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

দক্ষিণ আফ্রিকা: ২০ ওভার, ১৯২/৬
পাকিস্তান: ২০ ওভার, ১৮৬/৯
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৬ রানে জয়ী
ম্যাচ সেরা: ডেভিড মিলার (দক্ষিণ আফ্রিকা)

সিরিজ: দক্ষিণ আফ্রিকা ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে
দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি: ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯