আপনি পড়ছেন

মানিকগঞ্জের সিংগাইরে গাজর চাষ করে এবার লাভের মুখ দেখছেন না কৃষকেরা। প্রথমত বীজের দাম বেশির কারণে বেড়েছে গাজর উৎপাদন খরচ। আবার আবহাওয়া অনুকুলে না থাকায় এবার গাজরের ফলনও হয়েছে তুলনামূলকভাবে কম। এতে গাজর ক্ষেত ন্যায্য দামে বিক্রি করতে পারছেন না কৃষকরা। ফলে লাভের চেয়ে ক্ষতির মুখে পড়ার শংকায় রয়েছেন তারা।

carrot cultivationমানিকগঞ্জে গাজর চাষ

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এবার কুয়াশার প্রকোপ না থাকায় গাজরের ফলন কমেছে। তাছাড়া গাজরের মান ভাল না হওয়ায় দামও কম পাচ্ছেন কৃষকেরা। এর ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ওইসব জমিতে আগামীতে গাজর চাষ বন্ধ রেখে অন্য ফসলের আবাদ করার পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষকদের।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বেলে-দোআশ মাটির কারণে প্রতি বছর মানিকগঞ্জের সিংগাইরে গাজরের ফলন ভাল হয়। কৃষকরা গাজর বিক্রি করে বেশ লাভবান হন। অন্য বছরের মতো এবারও মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার জয়মন্টপ, দূর্গাপুর, দেউলী, দশানীসহ অন্তত ৩০টি গ্রামে ১১১০ হেক্টর জমিতে গাজরের আবাদ হয়েছে। আর প্রতি হেক্টর জমিতে ফলন হয়েছে ৩৪ হেক্টর মেট্রিকটন গাজর।

গত বছর প্রতি হেক্টরে ফলন হয়েছিল ৩৭ মেট্রিকটন। গত বছর গাজরের বাম্পার ফলন হলেও এবার গাজরের ফলন কম হয়েছে। বীজের কারণে গাজরের গুনগত মান,রং ও আকার ভাল না হওয়ায় কৃষকেরা গাজর ক্ষেত ন্যায্য দামে বিক্রি করতে পারছেন না।

তারা আরও জানান, গাজরের বীজ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ওরেঞ্জ কিং নামের গাজরের বীজ জাপান থেকে আমদানি করা হয়। এই বীজে উচ্চ ফলন হয়। তবে আমদানি হওয়ায় বীজের দাম কিছুটা বেশি থাকে। তাছাড়া ওরেঞ্জ কিং বীজ ছাড়া এবার কৃষকেরা একটু কমদামে অন্যজাতের বীজ কিনে বহন করায় ফলন কম হয়েছে।

গাজর চাষীরা জানান, গত বছর প্রতি কেজি বীজ ১২ হাজার টাকায় কিনলেও এবার কিনতে হয়েছে ১৪ হাজার টাকা কেজি দরে। অতিরিক্ত দামের বীজ, কামলা খরচ মিলিয়ে যে উৎপাদন খরচ হয়েছে তাতে গাজরের দাম বিঘা প্রতি ৩০ হাজার টাকার ওপরে পড়েছে। আর ফলন কম হওয়ায় প্রতি বিঘা গাজর ক্ষেত বিক্রি করতে হচ্ছে ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকায়। জাপানী ওরেঞ্জ কিং বীজের দাম বেশি থাকায় কিছুটা কমে (দুই/আড়াই হাজার টাকা কমে ) এসবি, সাখাতা হাইব্রীড, করোটা, নিউ করোটা জাতের চায়না বীজ কিনে গাজর আবাদ করেছেন। এতে ফলন গতবারের তুলনায় অর্ধেক হয়েছে। আর গত বছরে ফলন বেশী থাকায় পাইকাররা গাজর ক্ষেত আগাম কিনেছিল। এবার ভরা মৌসুমেও পাইকাররা গাজর ক্ষেত কিনছেন না। বাধ্য হয়ে তারা ক্ষতিতে গাঁজর ক্ষেত বিক্রি করে দিচ্ছেন। ক্ষেতে গাজর নষ্ট নষ্ট হওয়ায় কেউ কেউ গাজর তুলে গরুকেও খাওয়াচ্ছেন।

carrot cultivation 2মানিকগঞ্জে গাজর চাষ

কিটিংচর গ্রামের গাজর চাষী সায়েদুর রহমান বলেন, গত বছর ৪ বিঘা জমিতে গাজর আবাদ করে তিনি লক্ষাধিক টাকা লাভ পেয়েছিলেন। এবার চাষ করেছে দুই বিঘা জমিতে। তার বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। ফলন কম হওয়ায় গাজর ক্ষেত বিক্রি করতে হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায়। ক্ষতির কারণে আগামীতে গাঁজর আবাদ আরও কমিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

একই গ্রামের কৃষক মোতালেব হোসেন বলেন, বিশ বছর ধরে তিনি গাজর চাষ করে আসছেন। এবার গাজর বীজের দাম বেশী থাকায় চাষ করেননি তিনি। উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলেও বাজারে গাজরে দাম বাড়েনি। বীজের দাম না কমালে আগামীতেও গাজর চাষ করবেন না বলে জানান ওই কৃষক।

কৃষকেরা জানান, বিদেশ থেকে আমদানি করা গাজর বীজ বেশী দামে কিনতে হচ্ছে তাদের। স্থানীয়ভাবে কোনো আমদানিকারক না থাকায় ডিলাররা তাদের কাছ থেকে বীজের অধিক দাম নিচ্ছে। সরকারিভাবে বীজের দাম কমানোর দাবি করছেন কৃষকেরা।

পাইকাররা জানান, অন্য বছরগুলোতে ভাল ফলনের কারণে বেশী দাম দিয়ে গাজর ক্ষেত কিনেছেন। মোকামে গাজর বিক্রি করে লাভও বেশি পেয়েছেন। কিন্তু এবার গাজরের আকার, রংসহ গাজরের ফলন নিম্মমানের দেখা যাচ্ছে। বেশী দামে গাজর ক্ষেত কিনলে তা বিক্রি করে তারাও ক্ষতিতে পড়বে। বাধ্য হয়ে গাজর ক্ষেত কম দামে কিনছেন।

মানিকগঞ্জে সিংগাইর গাঁজর চাষের জন্য বিখ্যাত হওয়ায় এখানকার গাজর রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানি হয়। পাইকাররা ক্ষেত থেকে গাজর তুলে পানিতে ধুয়ে পরিষ্কারের পর ট্রাকে করে নিয়ে যায়। বর্তমানে ঢাকার কারওয়ান বাজারসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মোকামগুলোতে গাজরের দাম কিছুটা কম পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান বেপারীরা।

বীজের দাম বেশী থাকায় একইভাবে আরও অনেক কৃষকেরাই ধরে গাজর চাষ বন্ধ রেখেছেন। বীজের দাম না কমালে আর চাষ করবেন না বলেও জানান তারা। একই অবস্থা জয়মন্টপ, দশানী, নীলটেকসহ অন্যান্য গ্রামের কৃষকদেরও।

carrot cultivation 3মানিকগঞ্জে গাজর চাষ

গাজর ফলনের বিষয়ে সিংগাইরের মাঠ পর্যায়ের দেউলী ব্লকের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মাসুদুজ্জামান বলেন, বীজের বেশি দামের কারণে গত বছরের তুলনায় এবার তার দেউলী ব্লকে ৩০ হেক্টর গাজর চাষ কম হয়েছে। তাছাড় এবারের আবহাওয়া গাজর উৎপাদনের জন্য উপযোগী ছিল না। কুয়াশা না থাকায় ক্ষেতে গাজর পরিপক্ক হতে পারেনি। যে কারণে ফলন কম হচ্ছে। তাছাড়া কৃষকরা কম দামে চায়না জাতের বীজ কিনে বহন করায় গাজরের রং, মান ও ফলন কমেছে। তাছাড়া একই জমিতে প্রতিবছর গাজর চাষের কারণে ফলন কম হয়। প্রতি বছর একই ফসলের চাষ না করে অন্য ফসলের আবাদ করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে কৃষকদের। এবার দেউলী ব্লকে ৩০ হেক্টর জমিতে গাজরের আবাদ কম হয়েছে বলে জানান।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ হাবিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, এখনো ক্ষেতে গাজর পরিপক্ক হয়নি। বেশী লাভের আশায় এখন ক্ষেত থেকে আগাম জাতের গাজর তুলছে কৃষকেরা। আরো দুই সপ্তাহ পরে পুরোপুরিভাবে গাজর পরিপক্ক হবে। তখন গাজরের আকার ও রং ফুটে উঠবে। বেপারীরাও গাজর ক্ষেত কিনবে,কৃষকও ভাল দাম পাবে।

তিনি আরো বলেন, গাজর বীজ জাপান, হল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশ থেকে আমদানী করার ফলে দাম বেশী থাকে। সরকারিভাবে কৃষকদের কাছে বীজ বিক্রি করতে পারলে কৃষকরা ন্যায্য দামে বীজ কিনতে পারবে। এবিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। ইউএনবি।

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.