আপনি পড়ছেন

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে সাম্প্রতিক পাক-ভারত উত্তেজনা। ওই দিন ভারত অধ্যুষিত জম্মু-কাশ্মিরের পুলওয়ামায় ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলায় দেশটির ৪৯ জন সেনা সদস্য নিহত হয়। হামলার পর পরই দায় স্বীকার করে পাকিস্তানভিত্তিক সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মাদ। সংগঠনটি পাকিস্তানে নিষিদ্ধ হলেও ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছিল নয়াদিল্লি। ভিত্তিহীন অভিযোগে হামলা হলে পাল্টা হামলার হুমকিও দেয় পাকিস্তান।

pakistani missile shahin 3পাকিস্তানি ক্ষেপণাস্ত্র শাহীন-৩, ২০১৬ সালে রাজধানী ইসলামাবাদে প্রদর্শন করা হয়। ছবি: এপি

এমনই উত্তেজনার মধ্যে মঙ্গলবার ভোররাতে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের বালাকোট, চাকোটি ও মুজাফফরাবাদে জইশ-ই-মোহাম্মাদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে ভারত। পাকিস্তান এ হামলাকে সীমান্ত চুক্তির লঙ্ঘন অভিহিত করে যেকোনো সময় ভারতে হামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

এ অবস্থায় পারমাণবিক অস্ত্র সমৃদ্ধ প্রতিবেশী দুটি রাষ্ট্রের মধ্যে আরেকটি যুদ্ধের আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর শুধু কাশ্মির ইস্যুতেই দুটি যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে পাকিস্তান ও ভারত।

indian missile agni 3ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র অগ্নি-৩

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে আরেকটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ হলে কে বিজয়ী হবে সেটা বলা মুশকিল। তবে যুদ্ধের জন্য কোন দেশের সক্ষমতা কত তা নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রভাবশালী গণমাধ্যম রয়টার্স অবলম্বনে পাক-ভারতের সামরিক সক্ষমতার একটি চিত্র তুলে ধরা হলো-

সামরিক বাজেট: ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর স্ট্যাটেজিক স্টাডিজের (আইআইএসএস) মতে, ২০১৮ সালে ভারত সামরিক খাতে ৫ হাজার ৮০০ কোটি ডলার বরাদ্দ করে। যা দেশটির জিপিডির ২.১ শতাংশ। এর মধ্যে ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলার শুধু সক্রিয় সেনাবাহিনীর জন্য বরাদ্দ করা হয়।

গত বছর পাকিস্তান এ খাতে ১ হাজার ১০০ কোটি ডলার বরাদ্দ করে, যা দেশটির জিপিডির ৩.৬ শতাংশ। এটি ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৮০০ সেনাবাহিনীর জন্য। এ ছাড়া দেশটি ২০১৮ সালে বিদেশি সামরিক সহায়তা হিসেবে ১০ কোটি ডলার পেয়েছে।

ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক অস্ত্র: ভারত ও পাকিস্তান দুটি দেশই ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক অস্ত্র ক্ষমতাসম্পন্ন। ভারতের ৯ ধরনের সচল ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- অগ্নি-৩। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা কেন্দ্র সিএসআইএসের তথ্য অনুযায়ী এর পরিসর ৩ হাজার কিলোমিটার থেকে ৫ হাজার কিলোমিটার (৩ হাজার ১০৬ মাইল)।

সিএসআইএস বলছে, পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র কার্যক্রম চালু রয়েছে। এর মধ্যে ভ্রাম্যমাণ ছোট ও মাঝারি পাল্লার আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে যেগুলো ভারতের যেকোনো অংশে পৌঁছাতে পারে। এ ছাড়া শাহিন-২ নামে পাকিস্তানের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। এর পরিসর ২ হাজার কিলোমিটার বা ১ হাজার ২৪২ মাইল।

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) মতে, পাকিস্তানের ১৪০-১৫০টি পরমাণুবাহী যুদ্ধাস্ত্র রয়েছে। অন্যদিকে, ভারতের রয়েছে ১৩০-১৪০টি।

সেনাবাহিনী: ভারতের সেনাবাহিনীর সদস্য সংখ্যা ১২ লাখ। এর জন্য রয়েছে ৩ হাজার ৫৬৫টি যুদ্ধ ট্যাংক, ৩ হাজার ১০০ পদাতিক বাহিনীর যুদ্ধযান, ৩৩৬টি সাঁজোয়া যান ও ৯ হাজার ৭১৯টি আর্টিলারি।

অন্যদিকে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী তুলনামূলক ছোট। দেশটির সেনাবাহিনীর ৫ লাখ ৬০ হাজার সদস্যের জন্য ২ হাজার ৪৯৬টি ট্যাংক, ১ হাজার ৬০৫টি সাঁজোয়া যান, ৪ হাজার ৪৭২টি আর্টিলারি গান ও ৩৭৫টি স্ব-চালিত হ্যালোজার্স রয়েছে।

চলতি মাসে আইআইএসএসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের বিশাল সেনাবাহিনী থাকলেও এর সক্ষমতা সীমিত। কারণ অপর্যাপ্ত লজিস্টিকস, ব্যবস্থাপনা এবং গোলাবারুদ ছাড়াও খুচরা যন্ত্রাংশের ঘাটতি রয়েছে।

বিমানবাহিনী: ভারতের বিমানবাহিনীর ১ লাখ ২৭ হাজার ২০০ জন কর্মী বাহিনীর জন্য ৮১৪টি যুদ্ধবিমান রয়েছে। ভারতীয় বিমানবাহিনী অবশ্যই বেশ বড়, কিন্তু তার যুদ্ধবিমানের বহর নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।

ভারতের প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা অনুযায়ী চীন ও পাকিস্তানের দ্বিমখী আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য ৪২টি স্কোয়াড্রন জেট এবং প্রায় ৭৫০টি বিমান দরকার। রাশিয়ান পুরাতন মিগ-২১ যুদ্ধবিমান রয়েছে ভারতের, যা প্রথম ১৯৬০ সালে ব্যবহৃত হয়েছে এবং এগুলো খুব শিগগিরই আর কাজে আসবে না। তবে দেশটির কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী ২০৩২ সাল নাগাদ ভারতের ২২টি স্কোয়াড্রন থাকতে পারে।

আইআইএসএসের সূত্র অনুযায়ী, পাকিস্তানের ৪২৫টি যুদ্ধবিমান রয়েছে। এর মধ্যে চীনের তৈরি এফ-৭পিজি এবং আমেরিকান এফ-১৬ ফ্যালকন যুদ্ধবিমান রয়েছে। পাকিস্তানের ৭টি বায়ুবাহী পূর্ব সতর্কতা নিয়ন্ত্রিত বিমান রয়েছে যা ভারতের চেয়ে তিনটি বেশি।

আইআইএসএস তাদের ২০১৯ সালের মূল্যায়নে বলেছে, পাকিস্তানের বিমানবাহিনীতে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে দেশটি নিখুঁত আঘাত এবং আইএসআর (বুদ্ধিমত্তা, নজরদারি ও প্রাথমিক নিরীক্ষণ) এর সক্ষমতার উন্নয়ন করছে।

নৌবাহিনী: ভারতীয় নৌবাহিনীর রয়েছে ১টি বিমান বহনকারী, ১৬টি সাবমেরিন, ১৪টি সাবমেরিন ধ্বংস করার ক্ষেপণাস্ত্র, ১৬টি উপকূলীয় যুদ্ধজাহাজ ও ৭৫টি যুদ্ধ ক্ষমতাসম্পন্ন বিমান। দেশটির নৌবাহিনীর সামুদ্রিক ও নৌবিমান কর্মীসহ ৬৭ হাজার ৭০০ কর্মী রয়েছে।

অন্যদিকে, পাকিস্তানের সমুদ্র উপকূল তুলনামূলক ছোট। দেশটির রয়েছে ৯ ফ্রিগেটস, ৮টি সাবমেরিন, ১৭টি সামুদ্রিক যুদ্ধজাহাজ এবং ৮টি যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষমতাসম্পন্ন যুদ্ধবিমান।

অন্যদিকে, গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের ২০১৮ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী বিবিসি পাকিস্তান ও ভারতের সামরিক সক্ষমতার একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেছে যা নিম্নরূপ-

সামরিক শক্তির দিক থেকে বিশ্বের ১৩৬টি দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান চতুর্থ, অন্যদিকে পাকিস্তানের অবস্থান ১৭তম।

এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে ৫৫টির বেশি উপাদান বিবেচনায় নিয়ে। ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক, স্থানীয় শিল্প, প্রাকৃতিক সম্পদ, কর্মক্ষমতা এবং প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় বিশ্বের দেশের মর্যাদার বিষয়গুলো এখানে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।

জনসংখ্যার দিক থেকে পাকিস্তানের চেয়ে অনেক এগিয়ে ভারত। পাকিস্তানের জনসংখ্যা যেখানে সাড়ে ২০ কোটি, সেখানে ভারতের জনসংখ্যা ১২৮ কোটির বেশি। পাকিস্তানের সৈন্য সংখ্যা ৯ লাখ ১৯ হাজার হলেও ভারতের সেনাবাহিনীর সদস্য সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি- ৪২ লাখ।

প্রতিরক্ষা বাজেট: ভারত ও পাকিস্তান - এই দুই দেশের প্রতিরক্ষা বাজেটে বড় পার্থক্য রয়েছে। ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট চার হাজার ৭০০ কোটি ডলার, অন্যদিকে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষায় বরাদ্দ রয়েছে ৭০০ কোটি ডলার।

সামরিক বিমানের সংখ্যা: ভারতের মোট সামরিক বিমান রয়েছে ২,১৮৫টি, আর পাকিস্তানের রয়েছে ১,২৮১টি বিমান।

এসবের মধ্যে ভারতের যুদ্ধবিমান রয়েছে ৫৯০টি আর পাকিস্তানের ৩২০টি। সেই সঙ্গে ভারতের আক্রমণকারী বা অ্যাটাকিং বিমান রয়েছে ৮০৪টি, অন্যদিকে পাকিস্তানের আছে ৪১০টি।

পরিবহনের জন্য ভারতের রয়েছে ৭০৮টি বিমান, পাকিস্তানের রয়েছে ৪৮৬টি।

হেলিকপ্টার: পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর কাছে সাধারণ হেলিকপ্টার রয়েছে যেখানে ৩২৮টি, ভারতের কাছে রয়েছে ৭২০টি। তবে পাকিস্তানের আক্রমণকারী বা অ্যাটাকিং হেলিকপ্টার রয়েছে ৪৯টি, যেখানে ভারতের আছে মাত্র ১৫টি।

কার্যক্ষম বিমানবন্দর রয়েছে ভারতের ৩৪৬টি, আর পাকিস্তানের ১৫১টি।

ট্যাংক: পাকিস্তানের মোট ট্যাংকের সংখ্যা ২,১৮২টি হলেও ভারতের রয়েছে এর প্রায় দ্বিগুণ - ৪,৪২৬টি।

সাঁজোয়া যান: এরকম বাহন ভারতের রয়েছে ৩,১৪৭টি, আর পাকিস্তানের ২,৬০৪টি।

আর্টিলারি: গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের তালিকায় স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের দিক বিবেচনায় ভারতের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে পাকিস্তান।

ভারতের ১৯০টি এ ধরণের অস্ত্র থাকলেও পাকিস্তানের রয়েছে ৩০৭টি। তবে টেনে নিয়ে যাওয়া যায়, এমন আর্টিলারি ভারতের আছে ৪,১৫৮টি। তবে পাকিস্তানের আছে এর এক চতুর্থাংশ - মাত্র ১,২৪০টি।

রকেট প্রজেক্টর ভারতের কাছে আছে ২৬৬টি আর পাকিস্তানের কাছে আছে ১৪৪টি।

নৌবাহিনীর সরঞ্জাম: ভারতের নৌবাহিনীর কাছে মোট যুদ্ধযান রয়েছে ২৯৫টি আর পাকিস্তানের আছে ১৯৭টি।

এসব যুদ্ধযানের মধ্যে ভারতের একটি বিমানবাহী রণতরী থাকলেও ভারতের সেরকম কিছু নেই।

ভারতের কাছে ১৬টি সাবমেরিন বা ডুবোজাহাজ থাকলেও পাকিস্তানের আছে পাঁচটি।

ফ্রিগেট রয়েছে ভারতের ১৪টি, আর পাকিস্তানের ১০টি।

ভারতের ১১টি ডেস্ট্রয়ার থাকলেও পাকিস্তানের এরকম কোন যুদ্ধজাহাজ নেই। তেমনি ভারতের ২২টি কর্ভেট (ছোট আকারের যুদ্ধজাহাজ) থাকলেও পাকিস্তানের এরকম কোন নৌযান নেই।

ভারতের প্যাট্রোল নৌযান রয়েছে ১৩৯টি, আর পাকিস্তানের আছে ১১টি।

মাইন যুদ্ধজাহাজ রয়েছে ভারতের ৪টি আর পাকিস্তানের ৩টি।

নৌ-বন্দর, কর্মক্ষম ব্যক্তি, বাণিজ্য জাহাজ, সংরক্ষিত শক্তি ইত্যাদির দিক বিবেচনায় পাকিস্তানের চেয়ে বেশ অনেকটা এগিয়ে রয়েছে ভারত।

গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী, সামরিক দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। এরপরেই রয়েছে রাশিয়া, চীন ও ভারত।

শীর্ষ ১০দেশের মধ্যে আরো রয়েছে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, তুরস্ক এবং জার্মানি।

ভারত এবং পাকিস্তান দুটি দেশের হাতেই রয়েছে পারমাণবিক অস্ত্র। তবে গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেনি যে, কোন দেশের হাতে কতটি এ ধরনের অস্ত্র রয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটি বলছে, পারমানবিক অস্ত্র সক্ষমতার বিষয়টি তারা তাদের রিপোর্টে বিবেচনায় নেয়নি।

Get the latest world news from our trusted sources. Our coverage spans across continents and covers politics, business, science, technology, health, and entertainment. Stay informed with breaking news, insightful analysis, and in-depth reporting on the issues that shape our world.

360-degree view of the world's latest news with our comprehensive coverage. From local stories to global events, we bring you the news you need to stay informed and engaged in today's fast-paced world.

Never miss a beat with our up-to-the-minute coverage of the world's latest news. Our team of expert journalists and analysts provides in-depth reporting and insightful commentary on the issues that matter most.