খনন চলছে ১৬ খাল, তবুও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলছে না
- Details
- by নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম মহানগরীকে জলাবদ্ধতার কবল থেকে রক্ষায় প্রাথমিকভাবে নগরীর চাক্তাই ও মহেশ খালসহ ১৬টি খালের সংস্কার কাজ চলছে। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আসন্ন বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে পুরোপুরি মুক্তি মিলছে না নগরবাসীর। ‘আগামী বর্ষা মৌসুমে আমরা জলাবদ্ধতা নিরসনের ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক ফল চাই। তবে নগরবাসীকে পুরোপুরি জলাবদ্ধতা মুক্ত করতে পারবো সে আশ্বাস দিতে পারছি না’, বলেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম।
তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার একটি মেগা প্রকল্প ২০১৭ সালে একনেকে পাস হয়। এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয় সিডিএকে। সেনাবাহিনী এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সিডিএকে সহযোগিতা করছে। ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এই প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয়।
তবে এই মেগা প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিকভাবে নগরীর প্রধান খাল চাক্তাইসহ অন্যান্য খাল সংস্কারে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ইতিপূর্বে খাল থেকে তলানির বর্জ্য উত্তোলন ও খাল খনন এবং খালে দুই পাড়ে দেয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে। মোট ৩৬টি খাল খননের টার্গেট থাকলেও প্রাথমিকভাবে চাক্তাই ও মহেশ খালসহ ১৬টি খালের সংস্কার কাজ চলছে।
অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যে খালগুলো খনন চলছে সেগুলো হলো- চাক্তাই খাল, বির্জা খাল, রাজাখালী খাল-১, রাজাখালী খাল-২, রাজাখালী খাল-৩, মির্জা খাল, হিজরা খাল, মহেশখাল, মরিয়মবিবি খাল, কলাবাগিচা খাল, ডোমখাল, চাক্তাই ডাইভার্সন খাল (বাকলিয়া খাল নামেও পরিচিত), বামুনশাহী খাল (কোদালাকাটা খাল, কাটা খাল, সানাইয়া খাল, মধুছড়া খালও বামুনশাহী খালের অর্ন্তভুক্ত), নোয়াখাল (বাইজ্জা খাল ও বালু খাল নামেও পরিচিত), নাছির খাল এবং খন্দকিয়া খাল।
নগর বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু খাল সংস্কার করলে জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান হবে না। শহরের জলাবদ্ধতার জন্য নগরীর চাক্তাই খাল বেদখল ও ভরাটের পাশাপাশি কর্ণফুলি নদীর নাব্যতা হ্রাসও অন্যতম কারণ। নগরবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে বাঁচাতে সেনাবাহিনী, সিডিএ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, ওয়াসা, পিডিবি, কর্ণফুলী গ্যাস কর্তৃপক্ষ, বন্দর, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় জনগনের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নগরীতে মোট ৫৭টি খাল রয়েছে। যার মোট দৈর্ঘ্য ১৬৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার। এর মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ হচ্ছে খন্দকীয় খাল। যার দৈর্ঘ্য ৮ দশমিক ৪ কিলোমিটার। দ্বিতীয় দীর্ঘ ৭ দশমিক ৫ কিলোমিটারের রাজাখালী খাল। নগরীর পানি নিষ্কাশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রধান দুই খাল যথাক্রমে চাক্তাই খালের দৈর্ঘ্য ৬ কিলোমিটার এবং মহেশখালের দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ৩ কিলোমিটার।
সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, আমরা দেখেছি গত বর্ষায় নগরীর হালিশহর, আগ্রাবাদ, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, দেওয়ানবাজার, সাব এরিয়া, বৃহত্তর বাকলিয়া, চকবাজার, মুরাদপুর, শুলকবহর, বহদ্দারহাট ও জিইসি মোড় ও প্রবর্ত্তক মোড় এলাকায় বেশি জলাবদ্ধতা হয়েছে। আমরা প্রাথমিকভাবে যে ১৬টি খাল চিহ্নিত করেছি, সেগুলো সংস্কার হলে এসব এলাকা জলাবদ্ধতা থেকে কিছুটা মুক্ত হবে।
তিনি আরও বলেন, আগামী বর্ষা মৌসুমে আমরা জলাবদ্ধতা নিরসনের ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক ফল চাই। তবে নগরবাসীকে পুরোপুরি জলাবদ্ধতা মুক্ত করতে পারবো সে আশ্বাস দিতে পরছি না।
‘খালের দু’পাশে ১৭৬ কিলোমিটার আরসিসি রিটেইনিং দেয়াল নির্মাণে ব্যয় করা হবে ২ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা। খাল যাতে আর কেউ কোনদিন দখল করতে না পারে সেজন্যই আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি’, বলেন সিডিএ চেয়ারম্যান।
সূত্র জানায়, খালগুলোর ওপর ৪৮টি নিচু সেতু ও ৬টি কালভার্টকে ভেঙে উঁচু করে পুনরায় নির্মাণ করা হবে। এতে খরচ ধরা হয়েছে ৩৩৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এসব সেতুর নিচ দিয়ে যতগুলো সার্ভিস লাইন রয়েছে সবগুলোকেও উঁচু করা হবে। পাঁচটি টাইডাল রেগুলেটর নির্মাণে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ৪২টি বালির ফাঁদ (সিল্ট ট্র্যাপ) করা হবে ২৯ কোটি ৪০ লাখ টাকায়। এছাড়া পানি সংরক্ষণের জন্য তিনটি জলাধার নির্মাণ করা হবে। নগরীর পানি যাতে সুষ্ঠুভাবে খালে গিয়ে পড়তে পারে সেজন্য বিদ্যমান ৩০০ কিলোমিটার ড্রেন সংস্কার ও মেরামত করা হবে। আর নতুন করে নির্মাণ করা হবে ১০০ কিলোমিটার ড্রেন।
জানা গেছে, মেগা প্রকল্পের আওতায় এই ৩৬টি খাল পরিষ্কার করে ৪ লাখ ২০ হাজার ঘনমিটার কাদা অপসারণ করা হবে। উপর থেকে কাদা সরিয়ে পরবর্তীতে খালগুলোকে আক্ষরিক অর্থে খনন করে সর্বমোট ৫ লাখ ২৮ হাজার ২১৪ ঘনমিটার মাটি উত্তোলন করা হবে।
খাল খননে সেনাবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেজাউল মজিদ বলেন, খাল ১৬টা খনন হবে নাকি ১০টা হবে, তা বিষয় নয়। খননের বিষয়টি একান্তই টেকনিক্যাল। তিনি বলেন, কাজ চলছে, জলাবদ্ধতা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে আগামী বর্ষার আগেই আশানুরূপ কাজ এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা চলছে।
সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, চাক্তাই খাল, মহেশ খালের আবর্জনা পরিষ্কার করলেই জলাবদ্ধতা যাবে না। মানুষকে সচেতন করতে হবে। মানুষ যেন খালের মধ্যে আবর্জনা না ফেলে সেটা দেখতে হবে। তিনি বলেন, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে জমে থাকা পানিকে চাকতাই খালে নামার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। জিইসি, মুরাদপুর ও বহদ্দারহাট মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার স্পটভিত্তিক সমাধান দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, খালের ওপর কিংবা খালেরপাড়ে অসংখ্য স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। সেসব স্থাপনা ইতিমধ্যে উচ্ছেদ শুরু হয়েছে। আশা করছি আগামী বর্ষা মৌসুমে তার সুফল পাওয়া যাবে। ইউএনবি।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.