গুঁড়িয়ে গেল রিয়াল মাদ্রিদের রাজত্ব

উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের রুপালি ট্রফিটা একপ্রকার পৈত্রিক সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। টানা তিন আসরে শিরোপা জিতেছিল তারা। সবশেষ পাঁচ আসরের চারটিতে চ্যাম্পিয়ন। সেই দলটার রাজত্ব গুঁড়িয়ে গেল এবারের আসরের নক আউট পর্বের শুরুতেই। মঙ্গলবার নিজেদের মাঠেই আয়াক্সের কাছে ৪-১ গোলে বিধ্বস্ত হয়ে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেল রিয়াল মাদ্রিদ।

অথচ কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার জন্য সহজ সমীকরণই ছিল স্প্যানিশ জায়ান্টদের সামনে। আয়াক্সের মাঠে ড্র করলেই চলতো তাদের। কিন্তু দ্বিতীয় লেগে ডাচ জায়ান্টদের কাছে স্রেফ খড়কুটোর মতোই উড়ে গেল রিয়াল। নিষিদ্ধ থাকা সার্জিও রামোসের অভাবটাও হাড়েহাড়ে টের পেল টুর্নামেন্টের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল দলটি। সার্বিকভাবে ৫-৩ গোলে হেরে থেমে গেল রিয়ালের স্বপ্নযাত্রা।

শুধু কি একজন ডিফেন্ডারের অভাব? সম্ভবত ব্যাপারটা ঠিক তাও নয়। দলের সেরা খেলোয়াড় এই মৌসুমে ক্লাব ছেড়ে গেছেন; ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো যোগ দিয়েছেন জুভেন্টাসে। আর যার অধীনে শিরোপা জয়ের হ্যাটট্রিক করেছিল সেই প্রধান কোচ জিনেদিন জিদান চলে গেছেন নির্বাসনে। কাল রামোসের সঙ্গে গুরু-শিষ্যের শূন্যতা রীতিমতো ধ্বংসস্তূপে পরিণত করল রিয়ালকে।

চেনা দুর্গ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে প্রথমার্ধেই দুই গোল হজম করে বসে অতিথি শিবির। দুটোই নিজেদের ভুলে। সাত মিনিটে রিয়ালের রক্ষণভাগের ভুলের সদ্ব্যবহার করে আয়াক্সকে লিড এনে দেন জিয়েচ। এই গোলের ধাক্কাটা সামলে ওঠার আগেই ১৮ মিনিটে দ্বিতীয় গোল খেয়ে বসে রিয়াল। স্কোর লাইন ২-০ করেন নেরেস। ম্যাচটা শেষ হয়ে গেছে ওখানেই।

দ্বিতীয়ার্ধে স্বাগতিকরা ম্যাচে ফিরবে কী উল্টো ৬২ মিনিটে তৃতীয়বার কেঁপে ওঠে রিয়াল মাদ্রিদের জাল। গোল করেন দুসান টেডিচ। তিন গোল হজমের পর ঘুম ভাঙে চ্যাম্পিয়নদের। ৭০ মিনিটে মার্কো অ্যাসেনসিও ব্যবধান কমিয়ে রিয়ালকে লড়াইয়ে ফেরানোর আভাস দিয়েছিলেন, কিন্তু তাদের ফেরার সম্ভবনা গুঁড়িয়ে গেছে দুই মিনিটের মধ্যেই। ব্যবধানটা ৪-১ এ নিয়ে যান সোনে। টুর্নামেন্টের ইতিহাসে ঘরের মাঠে এটাই সবচেয়ে বাজে হার রিয়ালের।

অবশ্য ম্যাচের ফলটা অন্যরকম হতে পারতো। যদি ঘরের মাঠে গোলপোস্ট রিয়ালের সঙ্গে প্রতারণা না করতো। ম্যাচের চার মিনিটে রিয়াল এগিয়ে যেতে পারেনি রাফায়েল ভারানের দুর্দান্ত হেডটা ক্রসবারে লেগে ফিরে আসায়। দুই গোল হজমের পরও রিয়াল প্রত্যাবর্তন করতে পারতো। কিন্তু ৪৩ মিনিটে আবারো তাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় গোলপোস্ট। এবার গোলবঞ্চিত হন পরিবর্তিত হিসেবে মাঠে নামা গ্যারেথ বেল।

গোলপোস্টের এমন বেরসিক আচরণে স্বাভাবিকভাবেই হতাশ হয়ে পড়ে রিয়াল। সেই হতাশাটা ম্যাচ শেষে পৌঁছে গেছে কৃষ্ণগহ্বরে। রিয়ালের এই হতাশা নয় মৌসুম পর চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ আটে উঠতে না পারার। অন্যদিকে রিয়ালকে দুঃস্বপ্ন উপহার দিয়ে সাবেক চ্যাম্পিয়নরা জায়গা করে নিল কোয়ার্টার ফাইনালে।

নিষেধাজ্ঞার কারণে এই ম্যাচটি খেলতে পারেননি রিয়ালের নিয়মিত অধিনায়ক ও রক্ষণপ্রহরী রামোস। স্প্যানিশ বিশ্বজয়ী তারকাকে ছাড়া শুরু থেকেই ছন্নছাড়া দেখা যায় রিয়ালের রক্ষণদুর্গ। রিয়ালের হতাশা শুধু হারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। ম্যাচের প্রথমার্ধেই চোটের কারণে তারা হারিয়েছে লুকাস ভাসকুয়েজ ও ব্রাজিলিয়ান তরুণ ভিনিচিয়াসকে।

পরে বেল, অ্যাসেনসিও মাঠে নামলেও রিয়ালকে দুর্দশা থেকে মুক্ত করতে পারেননি। এমন দুঃস্বপ্নের ম্যাচটা রিয়াল আবার শেষ করেছে ১০ জনের দল নিয়ে। যোগ করা সময়ে ফন ডি ভিককে অনর্থক পেছন থেকে ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠে ছাড়েন রামোসেরই পরিবর্তিত হিসেবে খেলতে নামা ন্যাচো ফার্নান্দেজ!

সবধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ঘরের মাঠে এনিয়ে টানা চার ম্যাচে হারল রিয়াল। এক সপ্তাহের মধ্যে তিনটি! নিজেদের ইতিহাসে এরচেয়ে বাজে সময় কখনোই কাটায়নি মাদ্রিদ জায়ান্টরা। কালকের হারে প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেল রিয়ালের শিরোপাহীন মৌসুম। কদিন আগে বার্সেলোনার কাছে হেরে স্প্যানিশ কাপ থেকে ছিটকে গেছে তারা। তিনদিনের ব্যবধানে দ্বিতীয়বার এল ক্লাসিকোতে হেরে কার্যত লা লিগার স্বপ্নটাও শেষ হয়ে গেছে তাদের।