আপনি পড়ছেন

আল্লাহ বলেন, ‘ওহে তোমরা যারা নিজেদেরকে বিশ্বাসী মনে করো, তোমাদের জন্য সিয়াম সাধনা ফরজ করে দেয়া হয়েছে। তোমাদের পুর্ববর্তী প্রজন্মের ওপরও আমি সিয়াম সাধনা ফরজ করেছি। আশা করা যায়, সিয়াম সাধনা তোমাদের ভেতর জগতকে তাকওয়ার আলোয় আলোকিত করবে।’ (সূরা বাকারাহ, আয়াত : ১৮৩।) এই নির্দেশের কারণেই সিয়াম তথা রোজা রাখা ফরজ। রোজা ইসলামের মূল পাঁচ স্তম্ভের একটি।

know the reasons for breaking fast

তাই এমন গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত সর্ম্পকে আমাদের প্রত্যেকেরেই জানা থাকা দরকার কী কী কারণে রোজা ভেঙ্গে যায়। প্রিয় পাঠক! আসুন জেনে নিই রোজা ভঙ্গের কারণগুলো।

ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করা: কেউ যদি ইচ্ছা করে কিছু খায় বা পান করে তবে তার রোজা ভেঙ্গে যাবে। ভুলক্রমে খেলে স্মরণ হওয়া মাত্রই খাবার থেকে বিরত হলে রোজা ভাঙ্গবে না। বুখারি মুসলিমসহ সব সহিহ হাদিসগ্রন্থে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রোজা রেখেও ভুলে কিছু খেয়ে ফেলে বা পান করে ফেলে, তারপরেও সে যেন রোজা পূর্ণ করে। কারণ আল্লাহই তাকে আহার করিয়েছেন।’ (বুখারি, হাদিস নম্বর : ১৮৩১, মুসলিম, হাসি নম্বর : ১১৫৫।)

ভুলে পানাহার করার পর রোজা ভেঙ্গে গেছে মনে করে খেতে থাকলে কিংবা কেউ জোর করে কিছু খাওয়ালে রোজা ভেঙ্গে যাবে। সাহরির সময় আছে কিংবা ইফতারির সময় হয়ে গেছে মনে করে পানাহার করার পর যদি জানা যায় যে, আসলে সাহরি কিংবা ইফতারির সময় হয়নি তবে চার ইমামের মতে রোজা ভেঙ্গে যাবে। (মুসান্নিফ ইবনে আবি শাইবা, খন্ড. ৬ পৃষ্ঠা. ১৪৯-৫০।)

রোজা রেখে অখাদ্য বস্তু, যেমন লোহা, ইটের কণা খেয়ে ফেললেও রোজা ভেঙ্গে যাবে। মেসওয়াক করার সময় দাঁত থেকে বের হওয়া হওয়া রক্ত গিলে ফেললে, ঘাম কিংবা কুলি করার সময় অনিচ্ছায় পানি গিলে ফেললেও রোজা ভেঙ্গে যাবে। এসব অবস্থায় রোজার কাজা আদায় করলেই চলবে। কাফফারা দিতে হবে না। (আদ্দুররুল মুখতার খন্ড. ২, পৃষ্ঠা. ৩৯৫; ইমদাদুল ফতোয়া, পৃষ্ঠা. ৬৮১।)

ইচ্ছাকৃতভাবে সহবাস করা: রোজা হল পানাহার ও সহবাস থেকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিরত থাকা। ঐ সময়ের মধ্যে কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে এ দুটির কোন একটি করে ফেলে তবে তার রোজা ভেঙ্গে যাবে। ইচ্ছাকৃতভাবে সহবাস কিংবা পানাহার করার কারণে ভেঙ্গে যাওয়া রোজার কাজা ও কাফফারা দুটোই আদায় করতে হবে। কেউ যদি ভুলক্রমে সহবাস করে ফেলে আর স্মরণ হওয়া মাত্রই বিরত হয়ে যায় তবে রোজার কোন অসুবিধা হবে না। একইভাবে ইচ্ছেকরে বীর্যপাত ঘটালেও রোজা ভেঙ্গে যাবে। তবে সপ্নোদোষ হলে রোজা ভাঙ্গবে না। কারণ এটি ইচ্ছাকৃত নয়। সহবাসের পর বীর্যপাত না হলেও স্বামী-স্ত্রী উভয়ের রোজা ভেঙ্গে যাবে। ‘এনাল সেক্স’ করলেও রোজা নষ্ট হয়ে যাবে। যদিও এটি সর্বাবস্থায় হারাম। (বুখারি, হাদিস নম্বর : ৬৭০৯; জামে তিরমিজি, হাদিস নম্বর : ৭২৪।)

ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা: ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা রোজা ভঙ্গের অন্যতম কারণ। কোন কিছুর ঘ্রাণ নিয়ে কিংবা গলায় আঙ্গুল দিয়ে বমি করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। কিন্তু এমনিতেই বমি হলে রোজা ভাঙ্গবে না। মুসানাদে আহমাদ, তিরমিজি ও ইবনে মাজায় হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘স্বাভাবিকভাবে কারো বমি হলে রোজা কাজা করতে হবে না। কিন্তু কেউ ইচ্ছে করে বমি করলে কাজা করতে হবে।’ হানাফি মাজহাবের আলেমদের মতে, অনিচ্ছায় মুখ ভরে বমি হলেও রোজা ভেঙ্গে যাবে। (আল বাহরুর রায়েক, খন্ড. ২, পৃষ্ঠা. ২৪৭; আলমুহীতুল বুরহানী, খন্ড. ৩, পৃষ্ঠা. ৩৪৬।)

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর