খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে যা ভাবছে সরকার

কারাবন্দী বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা ও গুঞ্জন চলছে। কিন্তু তার মুক্তির বিষয়ে এখন পর্যন্ত স্পষ্ট করে কিছুই বলছে না সরকার ও বিএনপি। বিএনপির চাওয়া, খালেদা জিয়া প্যারোলে নয়, জামিনে মুক্তি পাক। আর সরকার বলছে, তিনি চাইলে জামিনে নয়, প্যারোলে মুক্তি পেতে পারেন। ফলে বিএনপি নেত্রীর মুক্তি কোন প্রক্রিয়ায় হবে বা হতে পারে, তা নিয়ে নানা মত রয়েছে।

আওয়ামী লীগের একটি উচ্চপর্যায়ের সূত্র বলছে, খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে বিএনপি বা জিয়া পরিবারের সঙ্গে সরকারের কোনো ধরনের সমঝোতা হয়নি। তবে কোনো কারণ দেখিয়ে খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্তি চাইলে সরকার বিবেচনা করবে। এ ব্যাপারে প্রকাশ্যেই ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন একাধিক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা।

দলটির একাধিক নেতা ও আইনজীবী বলছেন, দুটি মামলায় খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড হয়েছে। মামলা দুটি সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা হয়। এ দু মামলায় খালেদা জিয়া জামিন পেলেও আওয়ামী লীগের আমলে করা মামলার কারণে তার মুক্তি আটকে যাচ্ছে।

তারা জানান, এমতাবস্থায় খালেদা জিয়া এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে রয়েছেন। তারপরেও তার জামিন আবেদনের বিরোধিতা করছে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের কৌশলীরা। ফলে জামিন মিলছে না খালেদা জিয়ার। এখন তিনি হঠাৎ করে জামিন পেলে সাধারণ মানুষ মনে করবে, সরকারের কারণেই তিনি এতদিন মুক্তি পাননি। এ ধারণা জন্মালে তারা বুঝবে, সরকারের ইচ্ছায়ই খালেদা জিয়াকে জেলে যেতে হয়েছে। তাই নতুন করে প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি সামনে আনা হয়েছে।

ক্ষমতাসীনরা বলে আসছে, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে বাধ্য হওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। সরকার বা আওয়ামী লীগ এমন কোনো চাপে নেই যে, তাকে জামিনের ক্ষেত্রে ছাড় দিতে হবে। সরকার তার জামিনের বিরোধিতা অব্যাহত রাখবে। তবে আদালত কী সিদ্ধান্ত নেবে, তা বিচার বিভাগের বিষয়।

মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের দুজন নেতা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার জামিনে মুক্তি পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে তিনি কারণ দেখিয়ে প্যারোলে মুক্তি চাইলে তাতে সরকার কোনো বাধা দেবে না। এ ব্যাপারে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে।

কিন্তু বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন, তারা খালেদা জিয়ার মুক্তি প্যারোলে নয়, নিঃশর্ত জামিনের মাধ্যমে চান। জামিন পাওয়া তার ন্যায্য অধিকার। তবে এর আগে তিনি বলেছিলেন, প্যারোলে মুক্তি চাওয়া না চাওয়ার বিষয়টি বিএনপির নয়, খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের সিদ্ধান্তের বিষয়।

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। বিএনপির নেতারা দেখা করতে এসে বিষয়টি তাদের জানানো হয়েছে। এখন খালেদা জিয়ার জামিন আদালতের বিষয়। তবে প্যারোলে মুক্তির আবেদন পেলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ এমন কোনো আবেদন করেননি।’

উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট নামে দুর্নীতির আরেক মামলায় খালেদা জিয়াকে গেল বছরের ৮ ফেব্রুয়ারিতে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও আর্থিক জরিমানা করা হয়। পরে এই সাজা আপিলে বাড়িয়ে ১০ বছর করা হয়। ওইদিন থেকে কারাগারে থাকা খালেদা জিয়া বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন রয়েছেন।