রহমতের বৃষ্টিতে ভিজতে চাইলে
- Details
- by আল ফাতাহ মামুন
রহমত, মাগফিরাত, নাজাত বরকতপূর্ণ মাসে মহান আল্লাহ তায়ালা রহমতের দরজাগুলো তাঁর নেক বান্দাদের জন্য খুলে দেন। হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আদম সন্তানের প্রত্যেকটা কাজ তার নিজের জন্য। তবে রোজা ছাড়া। কেননা রোজা আমার জন্য এবং আমিই তার প্রতিদান দেবো। আর রোজা হচ্ছে ঢালের মত। কাজেই কেউ যখন রোজা রাখে, তখন সে যেন কোনো অশ্লীল কথা না বলে এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। কেউ যদি তাকে গাল-মন্দ করে অথবা লড়াই করতে আসে, তবে সে যেন বলে, আমি রোজাদার।’ (বুখারী ও মুসলিম।)
মুসলিম শরিফর অন্য বর্ণনায় আছে, আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আদম সন্তানের সকল কাজের সওয়াব দশ গুণ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়, কিন্তু রোজার কথা ভিন্ন। কেননা রোজা আমারই জন্যই এবং আমিই তার প্রতিদান দেবো।’ (মুসলিম।)
রোজা এমন এক বরকতময় ইবাদত, যার সাথে অন্য কোনো ইবাদতেরই তুলনা হয় না। রোজাদারের জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে রয়েছে বিশেষ পুরস্কার এবং মর্যাদা। এই বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে যায় হযরত উমর (রা) থেকে বর্ণিত হাদিস শরিফ থেকে।
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছন, ‘আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে মানুষের আমল বা কাজ সাত রকমের। দুই রকমের কাজ এমন যে, তার দুটো অনিবার্য ফল রয়েছে। আর দুই রকমের কাজ এমন যে, তার ফল কাজের সমান। আর এক রকমের কাজের দশগুণ সওয়াব রয়েছে। আর এক রকমের কাজের সওয়াব সাতশত গুণ। আর এক রকমের কাজের সওয়াবের পরিমাণ আল্লাহ ছাড়া কেউই জানে না। প্রথম দুটো হলো: যে ব্যক্তি একাগ্রচিত্তে আল্লাহর ইবাদত করে, কাউকে তার সাথে সমকক্ষ করে না এবং এ অবস্থায় আল্লাহর কাছে উপস্থিত হয়, তার জন্য জান্নাত অনিবার্য। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরিক করা অবস্থায় তাঁর কাছে উপস্থিত হয়েছে, তার জন্য জাহান্নাম অনিবার্য। যে ব্যক্তি কোনো খারাপ কাজ করে সে তার এক গুণ শাস্তি পায়। আর যে ব্যক্তি কোনো ভালো কাজ করার ইচ্ছা করে, কিন্তু কাজটি করে না- সে ঐ কাজ করার এক গুণ সাওয়াব পায়। আর যে ব্যক্তি ভালো কাজ সম্পাদন করে, সে তার কাজের সাতশত গুণ পর্যন্ত সাওয়াব পায়। আর রোজা আল্লাহর জন্য হয়ে থাকে। এর সওয়াবের পরিমাণ আল্লাহ ছাড়া কেউই জানেন না। (তাবারানি ও বায়হাকি।)
পবিত্র রমজান মাসে রোজাদারের জন্য মহান আল্লাহ তার রহমত এবং নিয়ামতের অফুরন্ত ভান্ডারের দরজা খুলে দেন। হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিস থেকে জানা যায়, রাসুলে পাক (সা.) বলেছেন, রমজান মাসে আমার উম্মাতকে পাঁচটি বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছে, যা আমার পূর্ববর্তী কোনো নবী কিংবা নবীর উম্মতকে দেয়া হয়নি। প্রথমটি হলো, রমজানের প্রথম রাতে আল্লাহ তায়ালা যার দিকে দৃষ্টি দেন, তাকে কখনো শাস্তি দেন না। দ্বিতীয়ত, সন্ধ্যার সময় তাদের মুখ থেকে যে দুর্গন্ধ বের হয়, তা আল্লাহ তায়ালার কাছে মেশকের সুগন্ধির চেয়েও উত্তম। তৃতীয়ত, রমজানের প্রত্যেক দিনে ও রাতে ফেরেশতারা রোজাদারদের জন্য দোয়া করে। চতুর্থত, আল্লাহ তায়ালা তার বেহেশতকে বলেন, তুমি আমার বান্দার জন্য সুসজ্জিত ও প্রস্তুত হও। আমার বান্দারা অচিরেই দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি পেয়ে আমার বাড়িতে ও আমার সম্মানজনক আশ্রয়ে এসে বিশ্রাম নেবে। পঞ্চমত, রমজানের শেষ রাতে আল্লহ তায়ালা তাদের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন। এক ব্যক্তি বললো, এটা কি লাইলাতুল কদর? রাসুলপাক (সা.) বললেন, না, তুমি দেখনি, শ্রমিকরা যখন কাজ শেষ করে, তখনই পারিশ্রমিক পায়। (শুআবুল ইমান।)
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে মাহে রমজানের কল্যাণ ও মঙ্গল পরিপূর্ণভাবে অর্জন করার তাওফিক দিন। আমিন।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর