আপনি পড়ছেন

মাহে রমজানের অন্যতম অনুসঙ্গ সাহারি। সাহারি খাওয়া বড়ই সওয়াবের কাজ। কিছু ভুল সাহারির বরকতকে নষ্ট করে দেয়। আমরা চাইলে খুব সহজেই ভুলগুলো শুধরে নিতে পারি। তাহলে আমাদের সিয়াম আরো শুদ্ধ আরো পবিত্র হবে। আসুন জেনে নিই, সাহারির সম্পর্কে প্রচলিত ৩টি ভুল।    

ramadan in iran

১. সাহারি খেতে না পারলে কিংবা কোনো কারণে সাহারি খাওয়া সম্ভব না হলে অনেকেই ওই দিন আর রোজা রাখেন না। তাদের ধারণা, সাহারি না খাওয়ার কারণে রোজা হবে না। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। মনে রাখতে হবে সাহারি খাওয়া সুন্নাত।

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা সাহারি খাও। সাহারিতে অনেক বরকত আছে। (সহি বুখারি, হাদিস নম্বর: ১৯২৩)

সাহারির গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে রাসুল (সা.) আরো বলেন, ‘তোমরা সাহারি খাও। এক চুমুক পানি হলেও সাহারি খেয়ে নাও। কারণ, যারা সাহারি খায় তাদের ওপর আল্লাহ তায়ালা খুশি হন। শুধু তাই নয় ফেরেশতারাও তাদের জন্য দোয়া করে।’ (ইবনে হিব্বান, হাদিস নম্বর: ৩৪৭৬)

এ দুটো হাদিসে সাহারি খাওয়ার প্রতি উৎসাহ দেয়া হয়েছে। যা সাহারির সুন্নাত হওয়াকে প্রমাণ করে। অন্যদিকে রোজা রাখা ফরজ।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘হে বিশ্বাসীরা! তোমাদের ওপর রোজা রাখা ফরজ করা হয়েছে।’ (সূরা বাকারাহ, আয়াত: ১৮৩)

তাই কোনো কারণে সুন্নাত সাহারি খাওয়া ছুটে গেলে তার কারণে ফরজ রোজা ছেড়ে দেয়া বড় ধরনের বোকামি ছাড়া কিছুই নয়।

২.  আবার আরেক দল লোক মনে করে, সাহারি যেহেতু সুন্নাত- এটা না খেলেও চলে। এটাও সাহারি সম্পর্কে ভয়াবহ ভুল ধারণার একটি। অনেকে তো সুন্নাত হওয়ার কারণে বিষয়টিকে এতটাই হালকা মনে করে যে, সাহারিই খায় না। সাহারি না খেয়ে রোজা রাখলে রোজা হয়ে যাবে। তবে মনে রাখতে হবে, রোজার মাস নেক আমলের মাস। সাহারি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল। তাই চেষ্টা করতে হবে প্রতিদিন সাহারি খেয়েই রোজা রাখার। কোনো কারণে হঠাৎ এক দু’দিন সাহারি মিস হয়ে গেলে তখন না খেয়েই রোজা পালন করা যায়। এতে কোনো অসুবিধা নেই।

হাদিস শরিফে রাসুল (সা.) বলেছেন. আমাদের এবং আহলে কিতাব তথা ইহুদি ও খ্রিস্টানদের রোজা রাখার মথ্যে পার্থক্য হলো, আমরা সাহারি খেয়ে রোজা পালন করি, তারা সাহারি না খেয়েই রোজা পালন করে।’ (সহি মুসলিম, হাদিস নম্বর: ২৬০৪)

প্রসঙ্গত আরেকটি কথা বলে রাখি, যারা সাহারিকে সুন্নাত ভেবে হালকা করে দেখেন, তাদের হৃদয়ে নবীপ্রেম কতটুকু আছে, গভীরভাবে ভেবে দেখা দরকার।

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে আমার সুন্নাতকে ভালোবাসবে, সে তো আমাকেই ভালোবাসলো। আমাকে যে ভালোবাসে, জান্নাতে আমি এবং সে একসঙ্গে থাকব।’ (জামে আত-তিরমিজি, হাদিস নম্বর: ২৬২১)

৩. সাহারি সম্পর্কে তৃতীয় যে ভুলটি অনেকেই করে থাকেন তা হল, আগেভাগে সাহারি শেষ করা। অনেকেই ১২টা-১টার মধ্যে সাহারি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। শরীয়তের দৃষ্টিতে কাজটি গোনাহ নয়, তবে সুন্নাতের খেলাফ। রাসুল (সা.) একেবারে শেষ সময়ে সাহারি খেতেন। সাহাবিরাও এমনটিই করতেন।

হযরত জায়েদ ইবনে সাবেত (রা.) বলেন, ‘আমরা রাসুল (সা.) এর সঙ্গে সাহারি খাওয়ার একটু পরই নামাজে দাঁড়িয়ে গেলাম।’ তাকে জিজ্ঞেস করা হল, খাওয়া ও নামাজের মাঝে কতটুকু ব্যবধান ছিলো? তিনি বললেন, ৫০ আয়াত পড়তে যতটুকু সময় লাগে, ততটুকু ব্যবধান ছিলো।

উম্মত হিসেবে আমাদেরও উচিত আগেভাগে নয়, শেষ সময়ে সাহারি খাওয়া। এতে করে সাহারি খাওয়ার সুন্নাত আদায়ের পাশাপাশি শেষ সময়ে খাওয়ার সুন্নাতটিও আদায় হয়ে যাবে। এভাবে একটি আমল সুন্নাহর দেখানো পথে করলে একসঙ্গে অনেক ধরনের সওয়াব আমলনামায় যোগ করে দেবেন আল্লাহ তায়াল। তাছাড়া রমজান মাসে একটি নফল কিংবা সুন্নাত অন্য মাসে একটি ফরজের সমান সওয়াবের অফারতো আছেই। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সুন্নাহর আলোকে জীবন গড়ার তাওফিক দিন। আমিন।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর