আপনি পড়ছেন

মহান আল্লাহ তায়ালা তার বান্দার জন্য অত্যন্ত ক্ষমাশীল, দয়ালু এবং মেহেরবান। এ জন্য বান্দার সার্বিক মুক্তি ও কল্যাণের বিবেচনায় রহমতের ছায়াতলে বান্দাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য অনেক সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন, যার অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে রমজান মাসে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন। সিয়াম সাধনার কঠোর সংযমের সিঁড়ি বেয়ে বান্দা তাকওয়ার শীর্ষ চূড়ায় আরোহণ করবে এটাই হলো এ মাসের লক্ষ্য। 

fasting is being failed for that reason

মহান আল্লাহ তায়ালা এ ব্যাপারে বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার।’ (আল-কুরআন, সূরা বাকারাহ, আয়াত : ১৮৩।)

তাকওয়া বলতে আত্মরক্ষা বা আত্মসচেতনতাকে বুঝায়। কাদা মাটির রাস্তা কিংবা কণ্টকাকীর্ণ পথ চলতে যেভাবে আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নিজেকে আত্মরক্ষা করে চলি ঠিক তেমনি মহান আল্লাহর সীমা-পরিসীমা তথা  আদেশ-নিষেধ পালনে অত্যন্ত সচেতন হতে হবে। অর্থাৎ তার আদেশ যথাযতভাবে পালন এবং নিষেধ বর্জনের মাঝেই তাকওয়া নিহিত।

আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘রাসূল (সা.) তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।’ (আল কুরআন, সূরা হাশর, আয়াত : ৭।)

তাহলে তাকওয়ার সংজ্ঞায় আমরা বলতে পারি যে, তাকওয়া হল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জণের লক্ষ্যে তার দেয়া ওহির আলোকে ভালো কাজ করা এবং শাস্তির  ভয়ে ওহির আলোকে খারাপ কাজ বর্জন। সুতরাং আত্মসচেতনতা ও আল্লাহর ভয়ই পারে মানুষকে সত্য, সঠিক এবং সুন্দর পথে পরিচালিত করতে। মহান প্রভুর ভয় অন্তরে লালন করার মাধ্যমেই বান্দার বিপদ সঙ্কুল পথ থেকে পরিত্রাণ সম্ভব। রমজান মাস তাকওয়া অর্জনের মোক্ষম সময়। তাই এই  রমজান মাসকে তাকওয়া অর্জনের শ্রেষ্ঠ সময় মনে করে কাজে লাগানো উচিত।

কোনো ব্যক্তির মাঝে যদি তাকওয়ার মতো মূল্যবান সম্পদ থাকে তাহলে সে ব্যক্তি নিজেই নিজের প্রহরী হয়ে যায়। দয়াবান মহান আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাকে তাকওয়ার গুণে গুণান্বিত করার জন্য উপহার হিসেবে দিয়েছেন রমজানের রোজা। সুতরাং বান্দা যদি  ঈমান ও আত্মসচেতনতার সাথে রমজানের রোজা পালন করে আল্লাহ তার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেন।

হাদিস শরিফে এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমান ও আত্মসচেতনতার সাথে রমজানের সিয়াম পালন করবে তার পূর্বের ও পরের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (সহি বুখারি।)

তাকওয়া বাহ্যিক অবয়ব নয়, তার প্রকৃত স্থান অন্তর। বাহ্যিক আচার-আচরণ, পোশাক এগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বটে, কিন্তু তাকওয়ার মূল বিষয় নয়। সুতরাং অন্তর পরিশুদ্ধ না হয়ে লেবাস পরিবর্তনে মূলত তাকওয়া প্রতিষ্ঠিত হয় না। সত্যিকার তাকওয়াবান সে যার অন্তর ও বাহ্যিক বিষয়গুলো চমৎকারভাবে পরিমার্জিত-পরিশুদ্ধ থাকে। সে অন্তর থেকে যেমন ইসলামকে বিশ্বাস করে তেমনি বাহ্যিক বিষয়েও পরিমার্জিত ও পরিশুদ্ধি সাধন করে।

আমাদের জীবনে বহু রোজা এসেছে, কিন্তু রোজার যে প্রকৃত শিক্ষা তা আমরা আজও গ্রহণ করতে পারিনি। এই রোজা এসেছে সকল মানুষকে মুত্তাকি বানাতে। তাই আসুন মাহে রমজানে আমরা সকলে নিজেকে উন্নত ও পবিত্র করে গড়ে তুলি। আল্লাহর ভয় লালন করে জীবন সংসার পরিচালনা করি।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর