আপনি পড়ছেন

ঘরে বাইরে সবখানে আজ বিনয়ের বড় অভাব দেখা যাচ্ছে। যার আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের মানবিকতার পূর্ণ বিকাশ। আমরা অনেক কিছু থেকে শিখছি, কিন্তু মানুষ হওয়ার দীক্ষা নেইনি আজও। অন্যের কাছ থেকে সত্য মেনে নেয়াকে আজ পরাজয় মনে করা হয়। যারা গলা যত উঁচু, তাকেই বড় বীর ভাবে মানুষ। আমরা এটা ভুলে গেছি যে, মুসলমান হিসেবে এসব আমাদের আচরণ হতে পারে না। স্বার্থবিহীন উদার ও লৌকিকতামুক্ত অকৃত্রিম বিনয় এবং সবার সাথে মার্জিত ব্যবহার ইসলামের প্রথম শিক্ষা। কারণ এমন গুণাবলী দিয়েই তো আল্লাহপাক নবীদেরকে সুশোভিত করেছেন। তারপর দায়িত্ব দিয়েছেন নবুওয়াতের। 

god loves humble people

মানুষকে কাছে টানার জন্য আল্লাহ নবীদেরকে বিনয় ও কোমল ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে বলেছেন। আল্লাহপাক বলেন, আপনি আপনার অনুসারী মুমিনদের জন্য নিজেকে কোমল রাখুন। (সূরা শুয়ারা : ২১৫।)

আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেন, আপনি যদি কঠোর হতেন তবে মানুষ আপনার কাছ থেকে দূরে সরে যেতো। আপনি তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং তাদের জন্য আমার কাছে ক্ষমা চান। আর তাদের সঙ্গে পরামর্শ করুন। (সূরা আলে ইমরান : ১৫৯)

বিনয়ের আসল অর্থ হচ্ছে সত্যকে দ্বিধাহীন চিত্তে মেনে নেয়া। এর আরেকটি অর্থ নিজেকে অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে না করা। সুফিকূল-শিরোমণি হজরত হাসান বসরী (রহ.) বলেছেন, নিজের ঘর থেকে বের হওয়ার পর যে কারো সাথে সাক্ষাৎ হবে তাকে নিজের চেয়ে ভাল মনে করার নামই হল বিনয়।

মুসলিম শরিফে ইয়াজ (রা.) বর্ণনা করেছেন, একদিন রাসূল (সা.) আমাদেরকে বললেন, আল্লাহতায়ালা আমার উপদেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা বিনয়ী হও। একে অন্যের উপর গর্ব না করো এবং রাগও না হও।

হযরত ঈসা (আ.) বলতেন, এ পৃথিবীতে যারা বিনয়ীর জীবনযাপন করবে, কেয়ামতের মাঠে তাদের জন্য কতই না আনন্দ অপেক্ষা করছে। তারা সেদিন উচ্চ আসনে বসে থাকবে। যারা আজ মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলিয়ে তাদেরকে মিলিয়ে দেয়, তারাই তো সর্বোচ্চ জান্নাতুল ফিরদাউসের প্রকৃত মালিক হবে।

মুসনাদে আহমদের এক হাদিসে রাসূল (সা.) বলেছেন, আল্লাহর জন্য যে যত বেশি ছোট হবে, নিজেকে বিনয়ী করবে, আল্লাহ তাকে তত বেশি বড় করবেন। মানুষের কছে সম্মানিত করবেন।

মুসলিম শরিফের আরেকটি হাদিসে রাসূল (সা.) বলেছেন, দান সদকায় কখনো সম্পদ কমে না, এতে করে আল্লাহপাক দাতার সম্মান বাড়িয়ে দেন। আর যে আল্লাহর জন্য বিনয়ী হবে, তার সম্মান আরো অনেক বাড়িয়ে দেয়া হয়। এমন লোকদের প্রশংসা করে আল্লাহ বলেছেন, ‘আর পরম দয়াময়ের বান্দারা নম্রভাবে হাঁটা-চলা করে এবং কোন মূর্খের সাথে দেখা হলে সালাম দিয়ে চলে যায়।’ (সূরা ফুরকান : ৬৩)

এখানে-ওখানে বাকবিতন্ডা কিংবা কারো সাথে রেগে যাওয়া তাদের স্বভাব নয়। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, এই জান্নাত তো তাদের জন্য তৈরি করে রেখেছি যারা পৃথিবীতে অনেক সম্মান ও বড়ত্বের লোলুপ ছিলো না। ছিলো বিনয়ী এবং কোমল। তারা সেখানে হাঙ্গামায় লিপ্ত হতো না। শুভ পরিনাম তো মুত্তাকিদের জন্যই। (সূরা কাসাস : ৮৩)

ইবনে মাজাহ থেকে বর্ণিত হাদিসে জানা যায়, রাসূল (সা.) এর সামনে দাঁড়িয়ে ঠকঠক করে কাঁপছিল এক গ্রাম্য বেদুইন। সে মনে করেছে, কত প্রতাপশালী শাসক না জানি আব্দুল্লাহর ছেলে মুহাম্মাদ (সা.)। প্রিয়তম নবী তাকে অভয় দিয়ে বললেন, তুমি শান্ত হও। আমি কোরাইশ বংশের এক সাধারণ মহিলার সন্তান, যে মহিলা রোদে শুকানো মাংসের টুকরা খেয়ে দিন কাটাতেন।

বুখারি শরিফে বর্নিত হাদিসে রাসূল (সা.) আরও বলেছেন, আমি কি তোমাদেরকে জানিয়ে দেব কারা জান্নাতের অধিবাসী? যারা দুর্বল নয় কিন্তু তাদেরকে দুর্বল ভাবা হত।

তিরমিজি শরিফে বর্ণিত হাদিসে রাসূল (সা.) সতর্ক করে বলেছেন, যে মুসলমান অহংকার, উগ্রতা ও বড়ত্বের মুখোশ খুলে আল্লাহর সামনে দাঁড়াবে আল্লাহতায়ালা তাদের জন্য জান্নাত আবশ্যক করে দিবেন।

হে আল্লাহ! আপনি আমাদের বিনয়ী হওয়ার তাওফিক দিন। আমিন।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর