আপনি পড়ছেন

মায়ের ভালোবাসায় বেড়ে ওঠে পৃথিবী। জীবজগতসহ সবখানেই মায়ের ভালোবাসা অনন্য। দয়াময় আল্লাহ দয়ার নুমনা স্বরূপ মাকে সৃষ্টি করেছেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা ‘দয়া’ সৃষ্টি করে নিরানব্বই ভাগ নিজের কাছে রাখলেন। আর একভাগ সৃষ্টিকুলে ছড়িয়ে দিলেন। ওই একভাগের অর্ধেক মায়ের মধ্যে রেখে দিলেন। আর এ কারণেই সন্তানের প্রতি মায়ের এত ভালোবাস।’ 

o young man do not neglect the mother

বাবা-মার প্রতি রহমতের ডানা বিছিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আপনার প্রতিপালক ফায়সালা করে দিয়েছেন যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদত করবে না এবং মা-বাবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে।’ সুরা বনী ইসরাঈল, আয়াত ২৩।

‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করো, তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করো না, মা-বাবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করো।’ সুরা আন-নিসা, আয়াত ৩৬।

এ নির্দেশ পূর্ববর্তী জাতির শরীয়তেও ছিল। আল্লাহ বলেন, ‘আমি বনী ইসরাঈল থেকে অঙ্গীকার নিয়েছি, তোমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারো উপাসনা করবে না এবং মা-বাবার সঙ্গে ভালো আচরণ করবে।’ সুরা আল-বাকারা: ৮৩।

হাদিসে রাসুলেও মায়ের মর্যাদা সবার ওপরে স্থান দেওয়া হয়েছে। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যাক্তি রাসুল (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, এই পৃথিবীতে আমার কাছে ভালো ব্যবহার পাওয়ার সবচেয়ে বেশি অধিকার কার? রাসুল (সা.) বললেন, তোমারা মায়ের। তারপর কার? রাসুল (সা.) বললেন, তোমার মায়ের। এভাবে তিন বার বললেন। আল-আদাবুল মুফরাদের বর্ণনায় পাঁচবার মায়ের কথা বলে ৬ষ্ঠ বারে বাবার কথা বললেন।

আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা. )কে জিজ্ঞেস করলাম, কোন আমল আল্লাহর কাছে প্রিয়? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, সময় মতো নামাজ আদায় করা। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, এরপর কোন আমল? তিনি বললেন, মা-বাবার সঙ্গে সুন্দর আচরণ করা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। বুখারি।

আরেকটি হাদিস থেকে জানা যায়, মায়ের সেবা জিহাদের চেয়েও ভালো। মুয়াবিয়া (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) এর কাছে এসে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি জিহাদে যেতে চাই। তিনি বললেন, আফসোস তোমার জন্য! তোমার মা কি বেঁচে আছেন? আমি বললাম, হ্যাঁ, বেঁচে আছেন। তিনি বললেন যাও, তার সেবা করো। এরপর আমি অন্যদিক থেকে এসে একই কথা বললাম। তিনি বললেন, আফসোস তোমার জন্য! তোমার মা কি বেঁচে নেই? আমি বললাম হ্যাঁ, বেঁচে আছেন। তিনি বললেন, যাও, তার সেবা কর।

মায়ের সেবার সর্বোচ্চ পুরুষ্কার হলো আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে প্রশান্তিময় জান্নাত দান করবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, মেরাজের রাতে আমি জান্নাতে প্রবেশ করে কোরআন তেলাওয়াত শুনতে পেলাম। জিজ্ঞেস করলাম, এই ব্যক্তি কে? ফেরেশতারা বললেন, হারিসা ইবন নুমান (রা.)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, সে ছিল তার মায়ের সঙ্গে ভালো ব্যবহাকারী। আল মুস্তাদরাক।

বিশ্বজুড়ে আজ মায়েরা অবহেলিত। সারাটি জীবন শত কষ্ট সহ্য করে, বৈরী আবহাওয়ার সঙ্গে লড়াই করে শুধুমাত্র সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে বেঁচে থাকেন মা। আর সেই সন্তানরা মা-বাবার সঙ্গে রুঢ় আচরণ করে। একটু বয়স হলেই মা-বাবকে বৃদ্ধশ্রম রেখে আসে। আমাদের দেশে বৃদ্ধাশ্রম তেমন জনপ্রিয় না হলেও ইউরোপ আমেরকিায় এটা খুবই জনপ্রিয়। বৃদ্ধশ্রমে থাকা মা-বাবাদের খোঁজখবরও নেয় না সন্তানরা।

তাই বিশেষজ্ঞরা চিন্তা করে বছরের একটি দিন বিশ্ব মা দিবস পালন করার উদ্যেগ নেন। যেন সন্তান মায়ের জন্য একটি দিন মায়র জন্য উৎসর্গ করে। ওই দিন তারা মায়ের জন্য ভালো খাবার নিয়ে যায় এবং নানাভাবে মাতৃসেবা করে থাকে। আমাদের দেশেও অভিশপ্ত বৃদ্ধাশ্রম বেড়ে চলছে। এটি আমাদের জন্য অশনি সংকেত। ধর্ম আমাদেরকে শিক্ষা দেয়, মায়ের জন্য কোন দিবস নয় বরং জীবন উৎসর্গ কর।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর