আপনি পড়ছেন

মিথ্যা-রাহাজানি আর অন্যায়ে ডুবেছিলো সমাজ। শুধু সমাজ বরলে ভুল হবে পুরো পৃথিবীই তখন পাপের সাগরে ভাসছিলো। যে যেভাবে পেরেছে বাহুর জোরে, মিথ্যার বলে ঠকিয়ে দিয়েছে আরেকজনকে। কারণে অকারণে খুন-রাহাজানিতে মেতেছিলো মানুষ। সমাজের উচু স্তর থেকে শুরু করে নিচু স্তরের প্রতিটি মানুষ আপাদমস্তক অন্যায়ে মিশেছিলো। সেই সমাজেই বেড়ে ওঠেছেন আমাদের পেয়ারা নবী (সা.)।

al quaran

যেনো স্রোতের বিপরীতে চলা তাঁর জীবন। প্রতিটি মানুষ যেখানে অন্যায় আর মিথ্যার সঙ্গে আপোষ-রফা করে জীবন পরিচালনা করছে, কারণে অকারণে মিথ্যা বলছে, বলতে হচ্ছে, সেখানে পুরো জীবনে একটি মিথ্যা না বলেও জীবন সমুদ্র পাড়ি দেয়া সহজ কথা নয়। সেই কঠিন কাজটি করেই উম্মতের মাঝে, পৃথিবীর মানুষের সামনে উজ্জ্বল আদর্শ হয়ে বেঁচে আছেন মানবতার শ্রেষ্ঠ বন্ধু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.)।

একদম ছোট বয়স থেকেই মানুষের মুখে তার নাম ফুটেছে ‘পরম বিশ্বাসী-আল আমিন’। সত্য বলার জন্য, সত্য মানার জন্য যেকোনো মূল্য দিতে প্রস্তুত ছিলেন তিনি। সত্যকে পাওয়ার জন্য দীর্ঘ পনের বছর হেরা গুহায় ধ্যান-সাধনায় মগ্ন ছিলেন এই মানবতার কান্ডারী নবী (সা.)। একদিনের ঘটনা। তখনো হযরত নবুওয়াতি পাননি। এক লোকের কাছে কিছু টাকা পাওনা হযরতের। পথেই লোকটির সঙ্গে দেখা হয়ে গেলো।

লোকটি লজ্জায় কাচুমাচু করতে করতে বলল, আল আমিন! তুমি এখানে দাঁড়াও। আমি এক্ষুনি বাড়ি গিয়ে তোমার টাকাগুলো নিয়ে আসছি। বলেই লোকটি বাড়ির দিকে চলে গেলো। নবীজি (সা.) ওখানেই দাঁড়িয়ে রইলেন।

সকাল গড়িয়ে দুপুর। দুপুর গড়িয়ে বিকেল। বিকেল শেষে সন্ধ্যা। তারপর রাত। রাত কেটে ভোর। কিন্তু লোকটির কোনো খবর নেই। নবীজি (সা.) ওখানেই দাঁড়িয়ে আছেন।

এক দিন। দুই দিন। তিন দিন চলে গেলো। হঠাৎ লোকটির মনে পড়ল, এই রে, আমি তো মুহাম্মাদকে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে এসেছি। কাজে কাজে তার কথা ভুলে গিয়েছিলাম। তিন দিন হয়ে গেলো। অন্য কেউ হলে তো অল্প সময় অপেক্ষা করেই চলে যেতো। কিন্তু ইনি তো আল-আমিন। আমাকে বলেছেন অপেক্ষা করবে। এখনো নিশ্চয় সেখানেই দাঁড়িয়ে আছেন।

হুড়মুড় করে লোকটি দৌড়ে আসলো নবীজির (সা.) কাছে। যা ভেবেছেন তাই হয়েছে। তিনদিন পরও ওখানেই দাঁড়িয়ে আছেন তিনি।

লোকটিকে দেখেই, নবীজি (সা.) বললেন, ভাই! তুমি তো আমাকে খুব কষ্ট দিয়ে ফেললে। এতটুকুই। কোনো রাগ নেই। ক্ষোভ নেই। ধমকও দেননি তাকে। এই হল বিশ্ব নবী। এই হল আমাদের নবী।

হায়! যে নবী সত্যের জন্য মিথ্যার দুনিয়ায় আল-আমিন উপাধি পেয়েছিলেন, আমরা তার উম্মত হয়ে আজ সে সত্যকে ছেড়ে মিথ্যার পোষাক গায়ে জড়িয়ে নিয়েছি। কথায় কথায় মিথ্যা বলছি। মানুষ ঠকাচ্ছি। আবার শ্রেষ্ঠ নবীর উম্মত বলে গর্বে পা মাটিতে ফেলছি না। নবীর উম্মত হওয়ার জন্য গর্ব তো তখনই করতে পারবো, যখন নবীজির (সা.) মত সত্যকে আঁকড়ে জীবন পরিচালনা করতে পারব।

হে আল্লাহ! নবীজির (সা.) সত্যময় জীবনের রঙ ধারণ করার তাওফিক আমাদের দিন। মিথ্যার সঙ্গে আমাদের সব সম্পর্ক ছিন্ন করে দিন। আমিন।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর