আপনি পড়ছেন

দুটি বিপরীত শক্তির প্রচন্ড সংঘর্ষ নিয়ে তৈরি মানবসত্তা। মানুষের মাঝে ফেরেশতার শক্তি যেমন আছে, আছে শয়তানি শক্তিও। ফেরেশতা চায় তাকে আল্লাহর কাছে নিয়ে যেতে। আর শয়তান চায় তাকে উপর থেকে টেনে নিচে নামাতে। এত নিচে যে, পশুও যে স্তরে নামতে ভয় পায়।

ramadan prayer qatar

শয়তানি যে শক্তি মানুষের মাঝে আছে তাকে বলে নফস। আর ফেরেশতাসত্তাকে বলে রুহ। যখন নফস শক্তিশালী হয়, তখন রুহ দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন আর তার কাছে, ভালো ও সুন্দর কিছু মজা লাগে না। যত অসুন্দর, যত নোংরা সবকিছু তার কাছে অমৃতের মত মনে হয়। এ কথাই কোরআন এভাবে বলছে, ‘মানুষের ভেতর লুকিয়ে থাকা নফস যখন শক্তিশালী হয়, তখন পার্থিব জগত ও পাপকাজ তার চোখে সুন্দর ও আকর্ষণীয় মনে হয়।’

আমাদের ভেতর থাকা রুহু যখন শক্তিশালী হয়, তখন নফস দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন কোন খারাপ কাজ মানুষের কাছে ভালো লাগে না। এ কথাও কোরআন বলছে, ‘পৃথিবীর চাকচিক্য তাদেরকে আকর্ষন করে না।’ তাহলে দেখা যাচ্ছে, সফলতার জন্য অবশ্যই একজন মানুষের ভেতর থাকা রুহকে শক্তিশালী করতে হবে। তবেই তার নফস আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে আসবে।
এখন প্রশ্ন হল, রুহকে শক্তিশালী করতে হয় কীভাবে? উত্তর খুবই সহজ। নফসকে দুর্বল করলেই রুহ শক্তিশালী হয়ে ওঠবে।

সুফি ইমাম গাজালি (রহ.) বলেন, নফসের সম্পর্ক মাটির দেহের সঙ্গে। আর রুহের সম্পর্ক নূরানীসত্তা আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে। নফস চায় মাটির খাবার। মাটি থেকে উৎপন্ন খাবার খেলে নফস শক্তিশালী হয়ে ওঠে। একই খাবার খেলে আমাদের দেহও হয় পরিপুষ্ট। তখন আমাদের ভেতর কাম-ক্রোধ জেগে ওঠে।

রুহের সম্পর্ক নূরানিয়াতের সঙ্গে। সে চায় নূরের খাবার। নূরের খাবার হল ইবাদত-বন্দেগী। তো কেউ যখন খানা-পিনা করে এবং ইবাদতও চালিয়ে যায়, তখন একই সঙ্গে নফস ও রুহ তাদের খাবার পায়। দুটোই শক্তিশালী হতে থাকে। কিন্তু আমরা যদি নফসের খাবার বন্ধ করে রুহের খাবার দিতে থাকি, তবে একই সঙ্গে আমাদের রুহ শক্তিশালী হবে এবং নফস দুর্বল হয়ে পড়বে।
ঠিক এ জন্যই আল্লাহ তায়ালা সিয়াম সাধনাকে বান্দার জন্য ফরজ করেছেন। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে বান্দা নফসকে দুর্বল করবে। আর তারাবি-তাহাজ্জুদ, দান-সদকার মাধ্যমে রুহ হবে শক্তিশালী। এভাবে যখন একটি মাস নিয়মিত রুহ ও নফসের দ্বন্দে রুহ বিজয়ী হতে থাকবে, নফস হয়ে পড়বে দুর্বল- তখন বান্দা তাকওয়ার একটি পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। সিয়াম শেষ হয়ে গেলেও তাকওয়ার রেশ থেকে যাবে জীবনে। যে তাকওয়ার শক্তিতেই সে নিজেকে মুক্ত রাখবে সব পাপ-অন্যায় থেকে।

আমরা যদি শুধু না খেয়ে থাকার সিয়াম করি, তবে আমাদের মাঝে তাকওয়া তো আসবেই না, বরং সিয়ামের প্রেমময় প্রভাবও আমরা উপলব্ধি করতে পারব না। তাই দেখা যায়, আমরা সিয়ামও করি, একই সঙ্গে পাপের জগতে নিজেদের হারিয়েও ফেলি। এর একমাত্র কারণ হল, আমাদের ভেতরে থাকা শয়তানি শক্তি ‘নফস’ বড় বেশি শক্তিশালী হয়ে পড়েছে। আমাদের রুহ সেই নফসের সঙ্গে পেরে ওঠছে না। এখন আমাদের একটি জিহাদে নামতে হবে। শপথ করতে হবে, যে করেই হোক আমাদের ভেতরে থাকা নফসকে দুর্বল করে রুহকে শক্তিশালী করবই করব।

খুব ভালো করে মনে রাখুন! সারাদিন না খেয়ে থাকা সহজ, লাখ টাকা খরচ করে হজ করে আসা সহজ, নিয়মিত পাঁচবেলা নামাজ পড়া আরো সহজ, জিহাদের ময়দানে গিয়ে জীবন দেয়া তারচেয়েও বেশি সহজ; কিন্তু নফস ও রুহের যুদ্ধে নফসকে পরাজিত করে রুহকে জয়ী করা অনেক বেশি কঠিন। এটা একদিন বা একমাসে হয় না। জীবনজুড়ে এভাবে নফসের সঙ্গে যুদ্ধ করে যেতে হয়।

তার মানে দাড়াচ্ছে, একজন মুমিন পুরো জীবন নফসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেই কাটিয়ে দেবে। হাদিস শরিফে এ কাজটিকেই বলেছে- ‘জিহাদে আকবার’। আর এ কঠিন কাজটি সহজ করে দেয় সিয়াম। তাইতো রোজার বিধান দিয়ে আল্লাহ বলেছেন, ‘লাআল্লাকুম তাত্বাকুন। আশা করা যায়, নফস-রুহের যুদ্ধে, সিয়াম তোমাদেরকে জয়ী করবে। তোমরা হয়ে ওঠবে রুহুজাগ্রত মুত্তাকি-সুফি মানুষ।’

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর