আপনি পড়ছেন

সর্বকালের সেরা মহামানব মানবতার মুক্তির দূত মুহাম্মদ (সা.) যেভাবে রোজা পালন করেছেন তার উম্মতকেও সেভাবেই রোজা পালন করতে হবে। তাই প্রতিটি মুসলমানকে জেনে রাখা দরকার কিভাবে হুজুর (সা.) রোজা পালন করেছেন। রাসুল (সা.) রমজানের জন্য দু’মাস আগ থেকেই প্রস্তুতি নিতেন। রজবের চাঁদ দেখে তিনি বার বার রমজান পর্যন্ত পৌঁছার দোয়া করতেন। 

mosque 13 1

হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রজব মাস শুরু হলে রাসুল (সা.) এই দোয়া পড়তেন- ‘আল্লাহুম্মা বারিকলানা ফি রাজাবিও ওয়া শা’বান। ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।’ অর্থ- ‘হে আল্লাহ আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসকে বরকতময় করে দিন। আর আমাদেরকে রমজান মাস পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’ নাসায়ি। এভাবেই রজবের প্রতিটি দিন রমজানের প্রার্থনায় সিক্ত হত রাসুল ও সাহাবিদের নূরানী চোখগুলো। 

রমজানের প্রস্তুতির জন্য শাবান থেকেই নফল রোজা শুরু করতেন প্রিয়নবী (সা.)। হজরত আয়শা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে শাবান মাস ছাড়া আর কোন মাসেই এত বেশি নফল রোজা রাখতে দেখিনি। বুখারি।

তিনি (সা.) সাহবিদেরও রোজার প্রস্তুতির জন্য উৎসাহ দিতেন। হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) কোন একজনকে বলছিলেন, হে অমুকের পিতা! তুমি কি শাবান মাসের শেষ দিকে রোজা রাখনি? তিনি বললেন, না। রাসুল (সা.) বললেন, তাহলে তুমি রমজানের পরে দুটি রোজা রেখে দিও। বুখারি।

রমজানের ঠিক আগে আগেই রাসুল (সা.) রমজানের ফজিলত এবং বরকত সম্পর্কে সাহাবিদের জানিয়ে দিতেন। এ সম্পর্কে অনেকগুলো হাদিসের মধ্যে একটি হাদিস উল্লেখ করছি। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘রমজান বরকতময় মাস। এ মাসে শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। আকাশের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। এ মাসে এমন একটি মহিমান্বিত রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ।’ মুসলিম।

বিভিন্ন হাদিস থেকে জানা যায়, রাসুল (সা.) চাঁদ দেখে রোজা শুরু করতেন। হাদিসের বর্ণনা থেকে পাওয়া যায়, কেউ এসে তাকে চাঁদের সংবাদ দিলে তিনি তা ঘোষণা করার অনুমতি দিতেন। তিনি (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখ এবং চাঁদ দেখেই রোজা ছাড়। বুখারি।

জাকজমকহীন অনাড়ম্বর রোজা পালন করতেন রাসুল (সা.)। নবীজী (সা.) এর সাহারি ও ইফতার ছিল সাধারণের চেয়েও সাধারণ। হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) কয়েকটি ভেজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। ভেজা খেজুর না থাকলে শুকনো খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। ভেজা কিংবা শুকনো খেজুর কোনটাই না পেলে কয়েক ঢোক পানিই হত তাঁর ইফতার।’ তিরমিজি। রাসুল (সা.) সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গেই ইফতার করতে পছন্দ করতেন। ইফতারে দেরি করা তিনি পছন্দ করতেন না।

রাসুল (সা.) এর সাহারিও ছিল খুব সাধারণ। তিনি (সা.) দেরি করে একেবারে শেষ সময়ে সেহরি খেতেন। সেহরিতে তিনি দুধ ও খেজুর পছন্দ করতেন। সেহরিতে সময় নিয়ে কঠোরতা করা তিনি পছন্দ করতেন না।
অন্যান্য সময়ের চেয়ে রমজানে রাসুল (সা.) এর ইবাদতের পরিমাণ বেড়ে যেত।

বুখারির বর্ণনা অনুযায়ী তিনি (সা.) দু’হাতে আল্লাহর রাস্তায় দান করতেন। রমজানে রাসুল (সা.) জিবরাইল (আ.) -কে কোরআন শুনাতেন। আবার জিবরাইল (আ.) হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে কোরআন শুনাতেন। রমজানের রাতে তিনি (সা.) খুব কম সময় বিশ্রাম নিয়ে বাকি সময় নফল নামাজে কাটিয়ে দিতেন।

নির্ভরযোগ্য হাদিস থেকে জানাযায়, রাসুল (সা.) ৩ দিন সাহাবীদের নিয়ে ২০ রাকাত সালাতুত তারাবি পড়েছেন। চতুর্থ দিন থেকে তিনি ঘরে আর সাহাবীরা বাইরে নিজেদের মত নামাজ পড়তেন। খলিফা ওমর (রা.) এর সময় জামাতে তারাবি পড়ার প্রচলন হয়। আমাদের দেশে রমজান এলেই তারাবি নিয়ে তর্ক বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। যা মোটেই কাম্য নয়। তারাবি সুন্নাত নামাজ। আর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হারাম। সমাজে ফেতনা সৃষ্টি করার অধিকার আমাদের কারো নেই।

শেষ দশ দিন ইতিকাফ করা রাসুল (সা.) এর নিয়মিত সুন্নাত ছিল। ইতিকাফে কদরের রাত তালাশ করাই মূল উদ্দেশ্য। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য! শেষ দশকে আমাদের মসজিদগুলো মুসল্লিশূন্য থাকে। রাসুল (সা.) শাওয়ালের চাঁদ দেখে রোজা ছাড়তেন। একাধিক হাদিস থেকে জানা যায়, শাওয়ালের পহেলা রাত খুবই বরকতময়। এ রাতে রাসুল এবং সাহাবীরা ইবাদত-বন্দেগী করে কাটিয়ে দিতেন। আমাদেরও উচিত রাসুলের আদর্শে ইবাদতময় জীবন গড়ে তোলা।

লেখক: এম ফিল গবেষক, মুফাসসিরে কোরআন, বেতার ও টিভির ইসলামি উপস্থাপক; খতিব, মণিপুর বাইতুর রওশন (মাইকওয়ালা) জামে মসজিদ, মিরপুর, ঢাকা।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর