চার নেতার আশ্বাস, পদবঞ্চিতদের কর্মসূচি প্রত্যাহার

আন্দোলনরত ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া নেতাকর্মীদের তিন দফা দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন আওয়ামী লীগের আলোচিত চার নেতা। তাদের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আন্দোলন স্থগিত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছে সংগঠনটির বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। রোববার রাতে চার আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে কয়েক ঘণ্টা ধরে বৈঠকের পর এ ঘোষণা দেন আন্দোলনরত ছাত্রলীগ নেতারা। 

পদবঞ্চিতদের দেয়া আশ্বাসের মধ্যে রয়েছে - ১. শিগগিরই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাক্ষাৎ করিয়ে দেয়া, ২. মধুর ক্যানটিনে ও টিএসসিতে হামলার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার এবং ৩. অধিকতর তদন্ত করে বিতর্কিতদের পদগুলো শূন্য ঘোষণা করা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে পদবঞ্চিতদের থেকে ওই পদগুলো পূরণ করা।

এর আগে রোববার রাতে ধানমণ্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে যান পদবঞ্চিতদের ৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। তাদের সঙ্গে ছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি শোভন ও সাধারণ সম্পাদক রাব্বানী। সেখানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান এবং সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও বি এম মোজাম্মেল হকের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতারা দীর্ঘ বৈঠক করেন।

বৈঠক শেষে শোভন-রাব্বানীসহ পদবঞ্চিত নেতারা রাত পৌনে একটার দিকে রাজু ভাস্কর্যে আসেন। তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাদের পক্ষ ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছার।

এ সময় পদবঞ্চিতদের উদ্দেশে ছাত্রলীগ সভাপতি শোভন বলেন, ‘সবাইবে অনুরোধ করছি, এই কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করেন, ছাত্রলীগের সুনাম আর নষ্ট করবেন না। কালকে থেকে আমরা একসঙ্গে পথ চলব এবং দু–এক দিনের মধ্যে সমস্যার সমধান হবে।’ 

কমিটি গঠনে নিজেদের ভুল স্বীকার করে শোভন বলেন, ‘বিতর্কিত ১৭টি পদ শূন্য হওয়ার পথে। এ সব পদে পুনর্বিন্যাসের একটা সুযোগ আছে। আপনাদের সহানুভূতিশীল হতে হবে, সংগঠনের প্রতি দায়িত্বশীল হতে হবে।’

পরে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীও সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনরত ছাত্রলীগ নেতাদের নেতৃত্ব দেয়া সাঈফ বাবু বলেন, আওয়ামী লীগ নেতারা আমাদের দাবির ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন। এর প্রেক্ষিতে আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছে।

এর আগে শনিবার রাত ৩টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনশন শুরুর সময় সাঈফ জানিয়েছিলেন, ছাত্রলীগের নতুন কমিটি নিয়ে জটিলতা নিরসনে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশনার পর কেন্দ্রীয় সভাপতি শোভন ও সাধারণ সম্পাদক রাব্বানীর সঙ্গে পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া নেতা-নেত্রীরা টিএসসিতে আলোচনায় বসেন। সেখানে রাব্বানী নতুন কমিটির সংস্কৃতিবিষয়ক উপ-সম্পাদক লিপি আক্তারকে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। এর প্রতিবাদ করায় তার অনুসারীরা লিপিসহ পদবঞ্চিত কয়েকজনকে মারধর করে।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন রহমান বলেন, ‘আলোচনার একপর্যায়ে কথা-কাটাকাটি হলে লিপি, শম্পা ও তিলোত্তমার গায়ে হাত তোলেন রাব্বানী।’

অভিযোগ রয়েছে, এ সময় রাব্বানীর অনুসারীরা নতুন কমিটির সংস্কৃতিবিষয়ক উপ-সম্পাদক নিপু ইসলাম তন্বী ও তিলোত্তমা শিকদার, কুয়েত মৈত্রী হল শাখার সভাপতি ফরিদা পারভীন ও সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী শায়লা, শামসুন নাহার হল শাখার সাধারণ সম্পাদক জিয়াসমিন শান্তা, সাবেক কমিটির এমদাদ হোসেন সোহাগসহ কয়েকজনকে মারধর করেন।

তারও আগে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার দিন মধুর ক্যান্টিনে পদবঞ্চিতরা পদধারীদের অনুসারীর দ্বারা হামলার শিকার হন। পরে একাধিকবার দুপক্ষের মধ্যে মারধরের ঘটনা ঘটে।