আপনি পড়ছেন

ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কের গোমতি, মেঘনা ও কাঁচপুর সেতুর নির্মান কাজ নির্ধারিত সময়ের এক মাস আগেই শেষ করেছে জাপানি নির্মান প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়াও তিনটি সেতু নির্মাণে বরাদ্দকৃত অর্থের চেয়ে কম খরচ হওয়ায় বেঁচে যায় প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। তবে এখনই প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ হচ্ছে না।

kachpur bridge

প্রকল্পটির পরিচালক আবু সালেহ মো. নুরুজ্জামান জানান, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাঁচপুর দ্বিতীয় সেতু এবং ২০১৯ সালের জুন-জুলাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় মেঘনা ও দ্বিতীয় গোমতী সেতু নির্মাণের চুক্তি হয় জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে। কিন্তু রাজধানীর হলি আর্টিসানে জঙ্গি হামলার ঘটনায় ছয় মাস নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকে। তাই সেতু নির্মানে ছয় মাস অতিরিক্ত সময় চেয়ে নেয় নির্মান প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু তারা অতিরিক্ত ছয় মাস সময়তো নেয়নি বরং মূল চুক্তির এক মাস আগেই সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শেষ করে।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে চলতি বছরের ১৬ মার্চ উদ্বোধন করা হয়েছে দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতু এবং আগামী ২৫ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয় মেঘনা সেতু ও দ্বিতীয় গোমতী সেতুর উদ্বোধন করবেন। সেতু তিনটি যৌথভাবে নির্মাণ করছে জাপানের সিমিজু কর্পোরেশন, আইএইচআই ইনফ্রাস্ট্রাকচার সিস্টেম কোম্পানি লিমিটেড, জেএফই কর্পোরেশন এবং ওবায়েশি কর্পোরেশন।

প্রকল্প সূত্র জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গোমতি, মেঘনা ও কাঁচপুর সেতু নতুন করে নির্মাণ এবং বিদ্যমান সেতু পুর্নবাসন করার কাজ শুরু হয় ২০১৩ সালের ১ এপ্রিল। চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্পটির সম্পূর্ণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর। ইতোমধ্যে নির্ধরিত সময়ের আগে সেতু তিনটির নির্মাণ কাজ শেষ হলেও সম্পূর্ণ কাজ শেষ হতে আরও কিছু সময় লাগবে। আগামী ২৫ মে দ্বিতীয় গোমতী ও দ্বিতীয় মেঘনা সেতু চালু হলে বিদ্যমান পুরাতন সেতুগুলোর মেরামত কাজ শুরু হবে।

meghna bridge

প্রকল্প পরিচালক জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গোমতী নদীর ওপর নির্মাণ করা হয় দ্বিতীয় গোমতী সেতু। নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের ৩ জানুয়ারি এবং শেষ হলো ২০১৯ সালের ২৫ মের মধ্যে। মোট ৩ বছর ৫ মাসের (৪১ মাসের) মধ্যে সেতুটি নির্মান কাজ শেষ করেছে জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলো এবং এতে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা।

দ্বিতীয় গোমতী সেতু প্রকল্প সূত্র জানায়, ১ হাজার ৪১০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৭ দশমিক ৭৫ মিটার প্রস্থ নিয়ে নির্মাণ করা হয় ৪টি লেনের দ্বিতীয় গোমতী সেতু। সেতুটিতে যানবাহন চলাচলের জন্য রয়েছে ১৪ দশমিক ৬০ মিটার, ইন্সপেকশন প্যাসেজ দশমিক ৬০ মিটার, ফুটপাত ১ দশমিক ৫০ মিটার, রেলিং দশমিক ২০ মিটার এবং মিডিয়ান বেরিয়ার দশমিক ৬৫।

এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্বিতীয় মেঘনা সেতু নির্মাণে সময় লেগেছে ৩ বছর ৫ মাস (৪১ মাস)। সেতুটির নির্মাণ শুরু হয় ২০১৬ সালের ৩ জানুয়ারি এবং শেষ হলো ২০১৯ সালের ২৫ মের মধ্যে। এতে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা।

দ্বিতীয় মেঘনা সেতু প্রকল্প সূত্র জানায়, ৯৩০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৭ দশমিক ৭৫ মিটার প্রস্থ নিয়ে নির্মাণ করা হয় ৪টি লেনের দ্বিতীয় মেঘনা সেতু। সেতুটিতে যানবাহন চলাচলের জন্য রয়েছে ১৪ দশমিক ৬০ মিটার, ইন্সপেকশন প্যাসেজ দশমিক ৬০ মিটার, ফুটপাত ১ দশমিক ৫০ মিটার, রেলিং দশমিক ২০ মিটার এবং মিডিয়ান বেরিয়ার দশমিক ৬৫।

সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সেতু তিনটি নির্মাণ ও মেরামত প্রকল্পে মোট বরাদ্দ ছিল ৮ হাজার ৪৮৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২ হাজার ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল দ্বিতীয় মেঘনা সেতুর জন্য। কিন্তু জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলো ১ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার মধ্যে এই সেতু নির্মাণ কাজ শেষ করে। এতে সাশ্রয় হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা।

এছাড়া ২ হাজার ৪১০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল গোমতী সেতুর জন্য। এর মধ্যে জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলো নির্মাণ কাজ শেষ করে ১ হাজার ৯৫০ কোটি টাকার মধ্যে। সাশ্রয় হয়েছে ৪৬০ কোটি টাকা। আর ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল কাঁচপুর সেতুর জন্য। তবে প্রতিষ্ঠানগুলো কত টাকার মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পেরেছে তা জানা যায়নি।

প্রকল্প পরিচালক মো. নুরুজ্জামান বলেন, এই প্রকল্প থেকে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। তবে প্রকল্প শেষ না হওয়া পর্যন্ত এসব টাকা রাষ্ট্রিয় কোষাগারে যাবে কিনা তা বলা যাচ্ছে না। কারণ প্রকল্পটির দুইটি অংশ, এক-নতুন সেতু নির্মাণ এবং দুই-পুরাতন সেতু সংস্কার করা। নতুন সেতু চালু হলে পুরাতন সেতুর সংস্কার কাজ শুরু হবে। তাই কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত টাকা ফেরত যাওয়ার কথা আসে না বলে জানান তিনি।

জাপানিদের কাজের প্রশংসা করে তিনি বলেন, কাজ নেয়ার পর জাপানিরা খুবই সিরিয়াসলি এবং পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে। আগে থেকেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং কখনো কাজ শেষে বিলম্ব করেন না তারা। জাপানিদের কাজের মূল্য স্বাভাবিকের তুলনায় একটু বেশি। কিন্তু একটু বেশি টাকা দিয়ে যদি ভালো জিনিস পাওয়া যায় তাহলে সেটাই ভালো। জাপানিরা খুবই হাড়-কিপটা। সাইটে গেলে ৬০ টাকায় ভাত খাওয়ায়, গাড়ি চালকরা খান ৩০ টাকায়। মিটিংয়ে শুধুমাত্র এক কাপ চা খাওয়ায়। প্রথম প্রথম তাদের অভদ্র মনে হলেও পরে বুঝা যায় কাজের ক্ষেত্রে এটা তাদের কৃতিত্ব।

তিনি আরও বলেন, নির্ধারিত সময়ের আগে সেতু নির্মানের কৃতিত্বও জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলোর। হলি আর্টিসানে হামলার ঘটনায় যে ছয় মাস কাজ বন্ধ ছিলো সেই ছয় মাস তাদের ন্যায্য পাওনা ছিল। কিন্তু তারা অতিরিক্ত সময় না নিয়ে উল্টো নির্ধারিত সময়ের আগেই নির্মান কাজ শেষ করে। বাংলাদেশে প্রায় দুই যুগ পরে অর্থাৎ ১৯৯৫ সালের পর কোন প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হলো।

তিনি আরও বলেন, এর আগে ১৯৯০ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম গড়াই ব্রিজ নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময়ের আগে শেষ করেছিল জাপানি কোম্পানি। এছাড়া ১৯৯১ ও ১৯৯৫ সালে যথাক্রমে পুরাতন মেঘনা ও পুরাতন গোমতী সেতুর নির্মান কাজ নির্ধারিত সময়ের আগে শেষ করে জাপানি কোম্পানি।

উল্লেখ্য, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। এতে অর্থায়ন করেছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) এবং বাংলাদেশ সরকার। এছাড়া প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করেছে জেবিআইসি, ওসিজিএল, কেইআই, এসএমইসি অট্রেলিয়ার জয়েন্ট ভেনচার ও এনইসি জাপান এবং সহযোগিতায় ছিল এসিই বাংলাদেশ, বিসিএল ও ডেভকন।

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.