আপনি পড়ছেন

জীবনের তাগিদেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ছুটে চলতে হয় আমাদের। পবিত্র রমজান মাসেও থেমে থাকে না জীবনের এই ছুটে চলা। কখনো এখান থেকে ওখানে, আবার কখনো দূর থেকে অনেক দূরে ভ্রমণ করি আমরা। ভ্রমণে কীভাবে রোজা রাখব, কখন রোজা রাখব না আজ জানাচ্ছি এ বিষয়ে।

wallpaper2you 31978

শরিয়তের পরিভাষায়, কেউ যদি ১৫ দিনের কম সময়ে ৪৮ মাইলের বেশি ভ্রমণের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়, তাহলে সে মুসাফির হিসেবে গন্য হবে। শরহে উমদাতিল ফিকহ।

রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা মুসাফিরের জন্য চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজ দুই রাকাত কমিয়ে দিয়েছেন। আর রমজানের রোজার বাধ্যকতা তার ওপর থেকে উঠিয়ে নিয়েছেন। বুখারি ও মুসলিম।

মুসাফির যখন নিজ এলাকায় ফিরে আসবে তখন সুবিধামত সময়ে রোজা কাজা করে নিবে। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘নির্দিষ্ট কিছু দিন তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। এ সময়ে কেউ যদি ভ্রমণে থাকে অথবা অসুস্থ থাকে, সে যেনো পরে কোনো সময়ে ভেঙ্গে যাওয়া রোজার সংখ্যা পূরণ করে নেয়।’ সূরা বাকরাহ, আয়াত ১৮৪।

নবীজি সফরে রোজা রেখেছেন, ভেঙ্গেছেনও

ভ্রমণে রোজা রাখা বেশ কষ্টসাধ্য। তাই মহান আল্লাহ তায়ালা রোজা রাখা কিংবা না রাখার ব্যাপারে মানুষকে সুযোগ দিয়েছেন। হাদিস শরিফ থেকে জানা যায়, নবীজি (সা.) সফরের সময় রোজা রাখতেন, আবার ভাঙতেনও। মুহাদ্দিসরা বলেন, যখন রোজা রাখা সহজ হত, তখন নবীজি সফরেও রোজা রাখতেন। আর যখন গরম কিংবা কোনো কারণে রোজা রাখা কষ্টসাধ্য হলে নবীজি (সা.) রোজা ভেঙ্গে ফেলতেন। সফর শেষে রোজা কাজা করতেন। মুসলিম শরিফ এবং রদ্দুল মুহতার।

ফকিহরা এ বিষয়ে একমত, সফররত ব্যক্তি চাইলে রোজা রাখতে পারেন অথবা চাইলে ভাঙ্গতেও পারেন।

কষ্ট সয়ে রোজা রাখায় কোনো সওয়াব নেই

ভ্রমণে রোজা রাখা বেশ কষ্টসাধ্য- এই ভেবে আল্লাহতায়ালা বান্দাকে রোজা না রাখার সুযোগ দিয়েছেন। ফকিহরা বলেছেন, কেউ যদি মনে করে, সফরে কষ্ট করে রোজা রাখলে বেশি সওয়াব পাওয়া যাবে, এটি নিছক ভুল ধারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। এ বিষয়ে বুখারি-মুসলিমের হাদিস থেকে জানা যায়, এক সফরে নবীজি (সা.) একটি ভিড়ের কাছে এসে দেখেন, এক সাহাবিকে অন্য সাহাবিরা ছায়া দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আরেকজন সাহাবি তাকে বাতাস করছেন। নবীজি (সা.) বললেন, তার কী হয়েছে? সাহাবিরা বলল, সে রোজা রেখেছে, আমরা তার সেবা করছি। নবীজি বললেন, এভাবে নিজেকে ও অন্যদের কষ্ট দিয়ে সফরে রোজা রাখায় কোনো সওয়াব নেই। বুখারি ও মুসলিম।

কষ্ট না হলে রোজা রাখাই ভালো

পবিত্র কোরআনে রোজা ভাঙার সুযোগ দেয়ার পর আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘ওয়া আনতাসুমু খায়রুল্লাকুম। তবে রোজা রাখাটাই তোমাদের জন্য ভালো।’

তাছাড়া রাসুল (সা.) যেহেতু সফরে রোজা রেখেছেন, তাই একদল ফকিহ বলেন, কষ্ট না হলে রোজা রাখা ভালো। এতে করে ফরজ থেকে দায়মুক্ত হওয়া যায়। শরহে উমদাতুল ফিকহ।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের দ্বীনের সহি বুঝ দান করুন। আমিন।

লেখক: কবি ও গবেষক। 

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর