আপনি পড়ছেন

আজ ১৭ই রমজান। এ দিন ইসলাম ও মুসলমানদের প্রথম যুদ্ধ ঐতিহাসিক বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ঘুমিয়ে পড়া জীর্ণশীর্ণ মুসলমানকে জাগিয়ে দেয়ার জন্য ঐতিহাসিক বদরের চেতনার চেয়ে কার্যকরী আর কিছুই হতে পারে না। বিশ্ব মুসলমানের দিকে তাকালে দেখা যায়, ধনে-জনে, জ্ঞান-গরিমায় পিছয়ে নেই তারা। নবিজির জামানায় না ছিলো ধন না ছিলো জনবল, ছিলো না কোনো ডক্টরেট-মাস্টার্স করা উচ্ছশিক্ষিতের ছড়াছড়ি।

badr 620x330

আজ সে ইসলাম বিশ্বের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়েছে অঢেল সম্পদ নিয়ে। বোধহয় এখনকার কথা ভেবেই নবীজি খুব আফসোস করে বলেছেন, একদিন আমার উম্মত অনেক সম্পদের মালিক হবে। হায়! সেদিন তারা ইমানি সম্পদে জীর্ণশীর্ণ জাতিতে পরিণত হবে।

দ্বিতীয় হিজরির রমজান মাসের ১৭ তারিখ। বদরের মাঠে কাফেরবাহিনীর এক হাজার সশস্ত্র সৈন্যবাহিনীর মুখোমুখি মাত্র তিনশ তেরো জন মর্দে-মুমিনের ছোট্ট কাফেলা। জাগতিক দৃষ্টিতে দেখলে যে কেউই যুদ্ধের আগে মুমিনবাহিনীর নিশ্চিত পরাজয়ের কথা বলে দিতে পারবে। কিন্তু এ বাহিনী তো জাগতিক দৃষ্টির বাইরেও আরেকটি দৃষ্টি অর্জন করেছিলো। তা হল ইমানি দৃষ্টি। জাগতিক অস্ত্র ছাড়ও ইমানি অস্ত্র তাদের কলবের খাপে মোরা ছিলো। তাইতো তারা আল্লাহর ওপর ভরসা করে, খেজুর গাছের শুকনো ঢাল হাতেই ঝাপিয়ে পড়ে চকচকে তরবরারিধারীদের ওপর। বুখারি শরিফের কিতাবুল মাগাজিতে এসেছে, যে সব সাহাবি শুকনো খেজুরের ঢাল নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছিলো, একসময় তারা দেখে খেজুরের ঢাল আর খেজুরের ঢাল নেই। চকচকে তরবারি বনে গেছে। সুবহানাল্লাহ। জাগতিক অস্ত্রের মোকাবেলায় ইমানি অস্ত্র এমনই হয়।

আরেকটি ঘটনা শুনুনু! নবীজি (সা.) সৈন্যবাহিনীকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য আবেগময়ী ভাষণ দিচ্ছেন। একপর্যায়ে বলছেন, ওই জান্নাতের দিকে ছুটে আসো যা আসমান ও জমিনের চেয়েও বড়। ন্যায়ের পক্ষে লড়াই করে শহীদ হলে এমন দশটি পৃথিবীর সমান একটি জান্নাত তোমাকে দেয়া হবে। পাশেই একজন সাহাবি খেজুর খাচ্ছিলেন। যখন জান্নাতের কথা শুনলেন, তখন বললেন, বাহ! কী চমৎকার জান্নাত বানিয়ে রেখেছেন আল্লাহ তায়ালা। আমি যদি হাতে থাকা খেজুরগুলো খেতে থাকি তাহলে তো জান্নাতে যেতে খুব দেরি হয়ে যাবে। এই বলে হাতের সব খেজুর ছুড়ে ফেলে সে চলে যায় জিহারে ময়দানে।

জগতের মানুষ ভরসা করে জাগতিক উপকরণের ওপর। মুমিন ভরসা করে আল্লাহর ওপর। তাইতো রাসুল (সা.) যুদ্ধ শুরুর আগে আগে আকাশের দিকে দু’হাত বাড়িয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বারবার বলছিলেন, হে আল্লাহ! এত বিশাল সেনাবাহিনীর মোকাবেলা করার শক্তি এ ছোট্ট মুমিন বাহিনীর নেই। আজ যদি এ মুমিনরাবাহিনী হেরে যায়, তাহলে তোমাকে আল্লাহ বলে ডাকার আর কেউই থাকবে না। এভাবে দোয়া করে রাসুল (সা.) ঝাঁপিয়ে পড়লেন যুদ্ধের ময়দানে। আল্লাহর সাহায্য নাজিল হল। বিশ্বাসীরা জয়ী হল।

এই যে অস্ত্রের বলে নয় দোয়ার ফলে বিজয় লাভ- এটাই বদরের সবচেয়ে বড় শিক্ষা। আফসোস! আজ মুসলমানের সব আছে, শুধু ঈমানী শক্তিতে তারা হয়ে পড়েছে জীর্ণশীর্ন। 

আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার ড. মাথির মুহাম্মাদ বড় আফসোস করে বলেছেন, মুসলমানদের তো এমন শক্তি অর্জন করার কথা ছিলো, বিশ্বের কোথাও মুসলমানের দিকে অন্যায়ভাবে কেউ চোখ তুলে তাকানো মাত্রই পুরোবিশ্বে প্রতিবাদ-প্রতিরোধের ঝড় ওঠবে- কেনো আমার ভাইয়ের দিকে চোখ তুলে তাকানো হলো। অথচ পাখির মত মুসলমানদের হত্যা করা হচ্ছে, প্রতিরোধ তো দূরের কথা মৌখিক নিন্দাও জানায় না মুসলিম বিশ্বের রাজা-বাদশাহরা।

আর একশ্রেণির মুসলমান আছে, যারা বলে, বদরে রাসুল (সা.) দোয়ার ফলে বিজয়ী হয়েছেন। আমরাও খানকা-মসিজদে বসে বসে তাসবিহ গুণে গুণে বিশ্বের নির্যাতিত মুসলমানের মুক্তি নিশ্চিত করব। এদের সম্পর্কে মাহাথির মুহাম্মাদ বলেন, এমন মূর্খের মত কোনো মুসলমান চিন্তা করতে পারে, তা ভাবতেও লজ্জা লাগে। তারা কি দেখে না নবীজি দোয়া করে যেমন চোখ ভিজিয়েছেন, তেমনি যুদ্ধ করেও শরীর রাঙিয়েছেন। শুধু দোয়া করলেই যদি সব হত, তাহলে বদরের ময়দানে ১৩ জন সাহাবি শহীদ হওয়ার প্রয়োজন ছিলো না।

হে আল্লাহ! বদরের ইমান আবার মুসলমানদের মনে ঢেলে দিন। আবার অসত্যের বিরুদ্ধে মুসমানদের বিজয় দিন। আমিন।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর