মোদির জয় কী বাংলাদেশের জন্য চিন্তার বিষয় হতে পারে!

বহু বছর ধরে উপমহাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির একটি মডেল হিসেবে পরিচিতি ছিল ভারত। এবারের লোকসভা নির্বাচনে ব্যাপক জয় পেয়েছে হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি। দলটির এই ব্যাপক বিজয় বাংলাদেশের জন্য চিন্তার কারণ হতে পারে। সম্প্রতি বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে এমনই উদ্বেগেরে কথা জানিয়েছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক রওনক জাহান।

রওনক জাহান বলেন, ভারতের হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি পর পর দুটি নির্বাচনে জয় লাভ করেছে। বাংলাদেশে যারা সেকুল্যার রাজনীতি করে বা করতে চায় এই বিষয়টি তাদের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। বাংলাদেশ সরকার চাইবে ভারতীয় সরকারের সাথে একটি সুসম্পর্ক বজায় রাখতে। কিন্তু ভবিষ্যতে সেটি কী রকম হবে সেটি নির্ভর করবে বিজেপি সরকারের মনোভাবের উপর।

তিনি বলেন, ভারতে যদি সেকুলার রাজনীতি বন্ধ হয়ে যায় এবং তারা যদি নির্বাচনে জেতার জন্য আমাদের চারদিকে বিদ্বেষের রাজনীতি শুরু করে তখন সরকারের পক্ষে সেই জিনিসটা সামলানো আরও কঠিন হয়ে পড়বে।

ভারতের লোকসভা নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হিন্দুত্ববাদী দল বিপেজি ভারতে যেভাবে ক্রমাণ্বয়ে শক্তিশালী হচ্ছে তার প্রভাব বাংলাদশের উপর থাকবে বলে অনেকেই মনে করছেন। কেননা এবারের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি বেশ ভালো ফলাফল করেছে বাংলাদেশকে ঘিরে থাকা ভারতের রাজ্যগুলোতে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রওনক জাহান বলেন, ভারতে যদি দক্ষিণপন্থী রাজনীতির উত্থান হয় তবে বাংলাদেশ সরকার চাইলেও ভারতের সাথে সুসম্পর্ক বজায় থাকবে এমনটা নাও হতে পারে। ভারত বাংলাদেশের বৃহৎ প্রতিবেশী রাষ্ট্র। বাংলাদেশের সব সরকারই ভারতের সাথে সব সময় সুসম্পর্ক রাখতে চাইবে। তবে এক্ষেত্রে দেশের জনগণের মনোভাবের উপরও দৃষ্টি দিতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে।

তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিবেশি দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে কোন ছাড় পাচ্ছে না। তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে ভারতের অনাগ্রহ সেক্ষেত্রে একটি বড় উদাহরণ হতে পারে।

রওনক জাহান বলেন, ভারতের আসাম রাজ্যে ৪০ লাখ মানুষ অবৈধভাবে সেখানে বসবাস করছে বলে নাগরিকত্ব যাচাই প্রক্রিয়ায় বলা হয় তাদের বেশির ভাগই মুসলিম। আবার বিভিন্ন সময় বিজেপির সিনিয়র নেতারা বলেছেন অবৈধভাবে যারা বসবাস করছেন, তাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে।

বিজেপির নির্বাচনী প্রচারণায় আসামের মতো নাগরিকত্ব যাচাইয়ের কাজ পশ্চিমবঙ্গেও করার প্রসঙ্গ টেনে রওনক জাহান বলেন, 'তাদের নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য মুসলমানদের উপরে কিংবা বাঙালিদের উপরে তারা যে ধরনের শ্লোগান ব্যবহার করছেন, এগুলো হলে আমাদের সাধারণ মানুষ তো খুব বিক্ষুব্ধ থাকবে। কিন্তু আমাদের সরকার তো কখনোই চাইবে না ভারতের সাথে সম্পর্ক খারাপ হোক। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের সেন্টিমেন্টকে তো তাদের দেখতে হবে।'

তিনি বলেন, মুসলিম-বিরোধী কথাবার্তাগুলো যদি বিজেপি আরও জোরালো করে, তবে বাংলাদেশের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য সেই বিষয়টি সুযোগ তৈরি করবে। এই বিষয়টি বাংলাদেশে সরকারের জন্য এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে।