আপনি পড়ছেন

দেখতে দেখতে রমজানুল মুবারক শেষ দশকে পা রাখতে যাচ্ছে। আজ থেকেই শুরু হচ্ছে এই মুক্তির দশক। এই দশকেই রয়েছে সর্বশ্রেষ্ঠ রাত, যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। বাকি দুই দশকে কোনো ভুল-ভ্রান্তি কিংবা গাফিলতি থাকলেও শেষ দশককে ভালোভাবে কাজে লাগিয়ে মহান আল্লাহর দরবারে নিজের নাজাত তথা মুক্তি নিশ্চিত করাই হবে প্রত্যেক বুদ্ধিমানের কাজ।   

হজরত ওমর (রা.) প্রায়ই একটি কথা বলতেন আর কাঁদতেন। তিনি বলতেন, আল্লাহ যদি আমাকে মানুষ না বানিয়ে ভেড়া-বকরি বানাতেন, তাহলে কতই না ভালো হত। আল্লাহর বান্দারা আমার গোশত খেয়ে আল্লাহর ইবাদত করতো। হায়! মানুষ হওয়ার কারণে কত দায়িত্ব আমার কাঁধে চেপেছে। সব দায়িত্ব তো ঠিকভাবে পালন করা সম্ভব হয় না। কেয়ামতের দিন কী জবাব দেবো আল্লাহর কাছে। আল্লাহ যদি আমাকে বলতেন, হে ওমর! তোমাকে আমি মাফ করে দিয়েছি, দুনিয়ার মানুষ বিশ্বাস করো! এর চেয়ে বড় পাওয়া এর চেয়ে বড় আনন্দের আর কিছু আমার জন্য হতে পারে না।

ramadan wallpapers hd 044 1
এক মস্ত বড় আল্লাহর অলি ভক্ত-মুরিদদের নিয়ে বসে আছেন। এমন সময় একজন ভক্ত জিজ্ঞেস করল, হুজুর! আপনি তো কামেল মানুষ। আপনি অবশ্যই জান্নাতে যাবেন। ভক্তের এমন কথা শুনে ডুকরে কেঁদে ওঠলেন আল্লাহর অলি। তিনি বললেন, জান্নাত তো দূরের কথা, আল্লাহ যদি দয়া করে, রহম করে জান্নাতিদের পায়ের পাপোষও আমাকে বানিয়ে দেন, এর চেয়ে সৌভাগ্য আর কী হবে? জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি থেকে তো বাঁচতে পারলাম।

ইমাম গাজ্জালি (রহ.) লেখেন, একদিন আল্লাহর নবী (সা.) জিবরাইল আ.-কে বলেন, হে জিবরাইল! তোমার সঙ্গে মাঝে মাঝে মিকাইল ফেরেশতাকেও দেখি। যতবার তাকে দেখেছি, ততবারই গম্ভীর মুখে ছিল সে। কখনো হাসতে দেখিনি তাকে। এর কারণ কী? জিবরাইল ফেরেশতা বলেন, আল্লাহর নবী! ফেরেশতাদের মধ্যে মিকাইল ছিল সবচেয়ে হাশি-খুশি ফেরেশতা। মুখে হাসি লেগেই থাকত তার। কিন্তু যেদিন জাহান্নাম বানানো শেষ হলো, আর আমরা সবাই জাহান্নাম ঘুরে দেখলাম, সেদিন থেকে মিকাইলকে আর হাসতে দেখা যায়নি। সে বলে, না জানি এ জাহান্নামে আমাকেই ফেলা হয়। এত আজাব সহ্য করার ক্ষমতা মিকাইলের নেই। এ কথা বলেই জিবরাইল খুব গম্ভীর হয়ে বললেন, শুধু মিকাইল কেন ফেরেশতাদের সর্দার জিবরাইলেরও এক মুহূর্ত জাহান্নামের আজাব সহ্য করার শক্তি নেই। আপনি অবশ্যই আপনার উম্মতকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি নিশ্চিত করে কবরে যেতে বলবেন। দাকায়েকুল আখবার।

আরেকদিনের ঘটনা। আম্মাজান আয়েশা সিদ্দিকাকে নবিজী বলছেন, হে আয়েশা! আল্লাহর দয়া না হলে কেউই জাহান্নামের আজাব থেকে বাঁচতে পারবে না। আয়েশা (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর নবী! আপনিও না। নবিজী বললেন, হ্যাঁ আয়েশা! আল্লাহর দয়া না হলে আমিও জাহান্নাম থেকে বাঁচতে পারব না। তবে আমার প্রভু আমাকে ওয়াদা করেছেন, তিনি আমাকে দয়া করবেন।

পাঠক! এ ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ায় টাকা-পয়সা ও ক্ষমতায় আপনার কিংবা আমার কোনো তুলনা নেই। কিন্তু মৃত্যুর পর আপনার-আমার টাকা-ক্ষমতা কিছুই কাজে আসবে না। যদি নাজাত নামের সার্টিফিকেট অর্জন করতে পারি, তাহলেই অনন্ত জীবনে অনাবিল সুখের ঠিকানা লাভ করতে পারব।

হে আমার ভাই! দুনিয়ায় যেমন সার্টিফিকেট-অভিজ্ঞতার সনদ দিয়ে ভালো চাকরি লাভ করতে হয়, তেমনি আখেরাতেও সুখের ঠিকানা জান্নাত পেতে হলে নাজাত নামের সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে। এক জীবন কেঁদে-কেটে খোদার প্রিয় হয়ে নাজাতের সার্টিফিকেট অর্জন করতে হয়। একবার যদি নাজাতপ্রাপ্তদের তালিকায় আপনার নাম ওঠে যায়, ব্যাস! আপনি সফল। শুধু সফল নয়, কোরআনের ভাষায়, ফাউজুল আজিম- চমৎকার সফল।

হে আমার দরদী পাঠক! আমরা যেনো খুব সহজেই নাজাত পেতে পারি, তাই আল্লাহ তায়ালা রমজানের শেষ দশটি দিন হাত খুলে বসে আছেন। যে চাইবে তাকেই নাজাত দেয়া হবে। যে কাঁদবে তাকেই ক্ষমা করে জাহান্নাম থেকে মুক্তিপ্রাপ্তদের তালিকায় তার নাম টুকে নেয়া হবে। তাই আসুন! জাহান্নাম থেকে মুক্তির এই দশকে আল্লাহর কাছে কেঁদে-কেটে মুক্তি নিশ্চিত করি।

হে আল্লাহ! আমাদের মতো অধম পাপীদের আপনি ক্ষমা না করলে আর কে ক্ষমা করবে। আপনি রহম না করলে আর কে রহম করবে। আপনি ছাড়া আমাদের আর কোনো ইলাহ নেই। আপনি ছাড়া আমাদের আর কেউ অভিভাবক নেই। আপনি আমাদের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সাহায্যকারী।

লেখক: কবি ও গবেষক।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর