ভাতের মাড়ে ইফতার আর পান্তা ভাতে রোজা!

ইলিশের প্রজনন মৌসুমকে সামনে রেখে ৬৫ দিনের জন্য মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর। কিন্তু কেন্দ্রীয়ভাবে স্বল্প আয়ের এসব মৎস্যজীবীদের দৈনন্দিন জীবনব্যয় মেটানোর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ফলে আয়ের একমাত্র পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অমানুষিক জীবন সংগ্রাম করে যাচ্ছেন বরগুনা পাথরঘাটার জেলেরা।

আয়-রোজগার বন্ধ থাকা এসব জেলেদের অনেকেই এই রোজার মাসে ভাতের মাড় খেয়ে ইফতার এবং পান্তা খেয়ে রোজা রাখছেন। বিভিন্ন জেলেপল্লী ঘুরে জেলেদের এমন অসহায়ত্বের কথা জানা গেছে।

সরকারের এই মাছ ধরা বন্ধ রাখার নিষেধাজ্ঞাকে জেলেদেরকে মেরে ফেলার কৌশল বলে অভিহিত করেছেন স্থানীয় বেশ কয়েকজন জেলে। প্রতিবেদককে পেয়ে তারা তাদের মনের সব ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

তারা বলেন, মোরা সাগরকূলে থাইক্যা মাছ ধরা ছাড়া কিছুই জানি না। কোনো দক্ষতা নাই। বছরের আশ্বিন মাসে (৭-২৮ অক্টোবর) ২২ দিন যায় মা মাছ রক্ষার নিষেধাজ্ঞা, ৮ মাস চলে জাটকা নিধন প্রতিরোধ। এর পর জৈষ্ঠ্য থেকে আশ্বিন পর্যন্ত ৫ মাস থাকে মাছ ধরার জন্য। এ সময়ে সামুদ্রিক নিম্নচাপ,লঘুচাপসহ নানা দুর্যোগের বাধা মেনে নিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরি। এর মধ্যে নতুন করে ৬৫ দিনে অবরোধ মোগো জানে মারার কৌশল করছে সরকার।

দুর্ভোগের কথা জানাতে গিয়ে জেলে আব্দুর রহিম বলেন, বাড়িতে থাকা মহিলারা শরবতের বদলে ভাতের মাড় দিয়ে ইফতার করে ভাত খায়। আর আমি নাতিডারে লইয়া মসজিদে যাইয়া রোজা খুলি। আর শেষ রাইতে পান্তা ভাত খাইয়া রোজা রাখি।

এ ব্যাপারে স্থানীয় জেলে ও ট্রলার মালিক সমিতির নেতারা বলেন, ৬৫ দিনের অবরোধ মৎস্য পেশায় সংশিলিষ্টদের মহা দুর্দিন ডেকে এনেছে। তার ওপর সরকার থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। এতে সবার মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বাড়ছে।

বাংলাদেশ মৎস্যজীবি ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, আমরা এ সময় মাছ ধরা বন্ধ রাখলেও ভারতীয় জেলেরা মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের মাছ ধরা বন্ধে সরকারের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।

সরকারের সহযোগিতা সম্পর্কে বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কবির মাহমুদ বলেন, ৬৫ দিনের অবরোধকালীন সময়ে জেলেদের কোনো ধরনের সহযোগিতা সরকারের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। প্রণোদনার আওতায় আনার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, ইলিশ রক্ষায় প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ (২ মাস ৫দিন) দিন সাগরে সব ধরনের মাছ ধরার উপর সম্পূর্ণভাবে নিষেধাজ্ঞা চলছে।