আপনি পড়ছেন

আরবি জাকাত শব্দের অর্থ বেড়ে যাওয়া, মন পরিশুদ্ধ হওয়া, সম্পদ পবিত্র হওয়া। ইমাম গাজালি বলেন, জাকাত আদায়ের মাধ্যমে বান্দার মনের কৃপণতা-কুটিলতা যেমন দূর হয়, একইভাবে তার সম্পদে থেকে অভাবীদের অধিকার দিয়ে দেয়ার কারণে পুরো সম্পদ পবিত্র হয়ে যায়।

about zakat

পবিত্র সম্পদে আল্লাহ তায়ালা অসীম বরকত দান করেন। বাইরে থেকে দেখা যায়, জাকাত দেয়ার কারণে সম্পদ কিছুটা কমে গেছে, আসলে কমেনি বরং বেড়ে যায় বহুগুণ।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘ইয়ামহাকুল্লাহুর রিবা ওয়াইউবিস সাদাকাত। আল্লাহ সুদের বরকত কমিয়ে দেন, বাড়িয়ে দেন জাকাতের বরকত।’ রাসুল (সা.) বলেছেন, আসসাদকাতু তারুদ্দুল বালা। জাকাত-সদকা বিপদ-আপদ দূরে ঠেলে দেয়। বান্দা যখন জাকাত দেয়, তখন তারওপর সম্ভাব্য বিপদ আল্লাহ দূর করে দেন।

আরেক হাদিসে এসেছে কেউ যদি দীর্ঘ নিরোগ-সুস্থ জীবন লাভ করতে চায়, তাহলে সে যেনো বেশি বেশি সদকা করে। সদকার ফলে সে ও তার পরিবার রোগ-ব্যধি-দূর্ঘটনা থেকে নিরাপদ থাকে। একবার বনি ইসরাইলের এক মহিলার জানকবজের জন্য আজরাইল ফেরেশতা আসলেন। সঙ্গে সঙ্গে ফেরেশতাকে বলা হল, হে আজরাইল! আর কিছু দিন অপেক্ষা করো। এইমাত্র সদকাহ করে সে তার হায়াত বাড়িয়ে নিয়েছে। তার মানে জাকাতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা সম্ভাব্য বিপদ দূর করে দেন। এতে করে আমাদের ওই খাতে সম্পদ ব্যয় থেকে আমরা বেচেঁ যাই। আর এটাই ‘জাকাত সম্পদকে বাড়িয়ে দেয়’ আয়াতের ব্যাখ্যা।

ইসলামী অর্থনীতিবিদরা বলেন, সঠিকভাবে জাকাত দেয়া হলে জাতীয় অর্থনীতিতে সম্পদ বেড়ে যায় কয়েকগুণ। কোনো রাষ্ট্রে যদি সুষ্ঠু জাকাতবন্টন ও তদারকি মন্ত্রণালয় থাকে, আর কর্মকর্তারা যদি নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন, তাহলে ওই রাষ্ট্র মাত্র পাঁচ বছরে দারিদ্রমুক্ত রাষ্ট্রে পরিণত হতে বাধ্য।

জাকাতের নিয়ম হল, এমন লক্ষ্য নিয়ে জাকাত দেয়া, যাতে পরবর্তী এক দু’বছরের মধ্যে ওই ব্যক্তি নিজেই জাকাত দেয়ার মত সচ্ছল হতে পারেন। এজন্য বেকারদের কর্মসংস্থান, নারীদের স্বাবলম্বী এবং ব্যাপকভাবে শিক্ষা খাতে জাকাতের টাকা ব্যয় করা জরুরি।

জাকাতদাতারা মিলে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে জাকাতের টাকা ব্যয় করে দরিদ্রদের কর্মসংস্থান এবং উপার্জনের সুযোগ করে দিলে চিরতরে দারিদ্রতা ঘুচে যাবে বলে অর্থনীতিবিদরা জোর দিয়ে বলেছেন।

জাকাতের মূল উদ্দেশ্য, সম্পদ যেনো একটি গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রেণে চলে না যায়। সম্পদ যখন একটি গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়, তখনই ধণী-গরীবের বৈষম্য মারাত্মক আকার ধারণ করে। শ্রেণী-বৈষম্যের সমাজ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। জাকাত সঠিকভাবে বন্টন না হলে ওই রাষ্ট্রে ধনী আরো ধনী হতে থাকে, আর গরীব আরো গরীব হতে থাকে।

খুব আফসোসের সঙ্গে বলতে হয়, আমরা যেভাবে দশ টাকার শাড়ি, পাঁচ টাকার লুঙ্গী, দুই টাকার পান-সুপারি জাকাত দিই, এতে করে দারিদ্রতা তো দূর হয়ই না, বরং জাকাতের নামে দরিদ্রদের সঙ্গে এক ধরণের উপহাস করা হয়।

হে আল্লাহ! দারিদ্রতার অভিশাপ থেকে আমার প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে মুক্তি দিন। ধনী-গরীব বৈষম্যহীন পৃথিবী গড়ার আমাদের তাওফিক দিন।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর