আপনি পড়ছেন

বর্তমান হানাহানি মারামারির বিশ্বে মুসলিম উম্মাহর সামনে এখন বহুমুখী সঙ্কট কেবলই আবর্তিত হচ্ছে। মুসলমানরা সারা বিশ্বে নানাভাবে নিগৃহীত। বিশ্বের দেশে দেশে তাদের ওপর সাম্রাজ্যবাদী শক্তি সত্য-মিথ্যা নানা অজুহাতে বিপর্যয়কর, বিধ্বংসী ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে।

al quds youtube channel suspended

বিশ্বের কোথাও না কোথাও প্রতিদিন অসংখ্য মুসলমানকে হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, আফগানিস্তান, চীন, ভারত, মিয়ানমার সর্বত্র চলছে মুসলিম নিগ্রহ। বাস্তবে তালিকা আরো দীর্ঘ ও সুবিস্তিৃত।

এ প্রেক্ষাপটে এবারো পবিত্র মাহে রমজানের শেষ শুক্রবার যথারীতি মুসলিম বিশ্বে পালিত হবে আন্তর্জাতিক আল-কুদস দিবস। দীর্ঘ দিন ধরে ইসরায়েলের দখলে থাকা মুসলমানদের প্রথম কিবলা বায়তুল মুকাদ্দাস পুনরুদ্ধারের দাবিতে প্রতি বছর রমজানের শেষ শুক্রবার জুম্মাতুল বিদায় বিশ্বব্যাপী পালিত হয় দিনটি।

কুদস অর্থ পবিত্র। ‘আল কুদস’ বলতে বোঝায় ফিলিস্তিনের জেরুজালেমে পবিত্র ভূমিতে অবস্থিত পবিত্র মসজিদ, যা মসজিদুল আকসা বা ‘বায়তুল মুকাদ্দাস’ নামে পরিচিত।

হজরত ইবরাহিম (আ.) কর্তৃক কাবাঘর নির্মাণের ৪০ বছর পর তাঁর পুত্র হজরত ইসহাক (আ.)-এর সন্তান হজরত ইয়াকুব (আ.) ফিলিস্তিনের জেরুজালেম নামক স্থানে ‘আল আকসা’ মসজিদটি নির্মাণ করেন। এরপর তাঁর ছেলে হজরত ইউসুফ (আ.)- এর বংশধর হজরত দাউদ (আ.)- এর সন্তান হজরত সুলায়মান (আ.) তা পুনর্র্নিমাণ করেন। রমজান মাসের শেষ শুক্রবার জেরুজালেম নগর প্রতিষ্ঠা করেন।

বায়তুল মুকাদ্দাস মুসলমানদের কাছে সব সময় সম্মানিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) মিরাজ রজনীতে মসজিদুল হারাম তথা কাবা শরিফ থেকে মসজিদুল আকসা তথা বায়তুল মুকাদ্দাস প্রথম সফর করেন, যা ইসরা নামে পরিচিত। প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) মিরাজ গমনের সময় এই মসজিদে নামাজ আদায় করেন।

এ এলাকা অসংখ্য নবী-রাসুলের স্মৃতিবিজড়িত, এর আশপাশে অনেক নবী–রাসুলের সমাধি রয়েছে। এটি দীর্ঘকালের ওহি অবতরণের স্থল, ইসলামের কেন্দ্র এবং ইসলামি সংস্কৃতির চারণভূমি ও ইসলাম প্রচারের লালনক্ষেত্র। এই পবিত্র ভূমির ভালোবাসা প্রত্যেক মোমিনের হৃদয়ের গভীরে প্রোথিত।

ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর (রা.)-এর খিলাফতকালে ৬৩৮ সালে বায়তুল মুকাদ্দাস, জেরুজালেমসহ পুরো ফিলিস্তিন সম্পূর্ণরূপে মুসলমানদের অধিকারে আসে। ১০৯৬ সালে খ্রিষ্টান ক্রসেডাররা সিরিয়া ও ফিলিস্তিন জবরদখল করে নেয়। ১১৮৭ সালে মুসলিম বীর সিপাহসালার সুলতান সালাহুদ্দীন আইয়ুবী (রহ.) পুনরায় জেরুজালেম শহর মুসলমানদের অধিকারে নিয়ে আসেন।

এরপর থেকে খ্রিষ্টান ও ইহুদি চক্র ফিলিস্তিনে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র করতে থাকে। এ অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য ইহুদিরা তৎকালীন তুরস্কের শাসক সুলতান আবদুল হামিদের কাছে ফিলিস্তিনে বসতির অনুমতি চায়; দূরদর্শী সুলতান তাদের এ দুরভিসন্ধিমূলক প্রস্তাবে রাজি হননি।

১৯১৭ সালে ইংরেজরা ফিলিস্তিনে অনুপ্রবেশ করে এবং ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে; অল্প সময়ের মধ্যে ইহুদিরা ফিলিস্তিনে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করে। ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমিতে ইহুদির সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুসলমানদের সঙ্গে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দাঙ্গা নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়।

এ সময় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা অন্যায়ভাবে মুসলমানদের ফিলিস্তিন ভূমিকে মুসলমান ও ইহুদিদের মাঝে ভাগ করে দেয়। ফলে ১৯৪৮ সালে ১৫ মে, বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে জায়নবাদী অবৈধ ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকে মুসলমানদের প্রতি ইহুদিদের জুলুম, নির্যাতন ও অত্যাচারের মাত্রা বাড়তে থাকে।

ইসরায়েল ‘মসজিদুল আকসা’ জবরদখল করে নেয় ১৯৬৭ সালে। এরপর থেকে মুসলিম জনগণ স্বাধীনতাযুদ্ধের সূচনা করে। ইসরায়েল নতুন নতুন মুসলিম এলাকা জবরদখল করে ইহুদি বসতি সম্প্রসারণ অব্যাহত রেখেছে এবং হত্যা, গুম চালিয়ে যাচ্ছে। ইহুদিদের ঘৃণ্য পরিকল্পনা সচেতন মুসলমানদের সংগ্রামী প্রতিরোধ আন্দোলনের মুখে পরিপূর্ণভাবে সফল হতে পারেনি। সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনগণ ফিলিস্তিনি মুসলিমদের এ প্রতিরোধ আন্দোলন সমর্থন করেছে।

১৯৭৯ সাল থেকে আল আকসা মসজিদ মুক্তির লক্ষ্যে সমগ্র মুসলিম উম্মাহ প্রতিবছর রমজান মাসের শেষ দশকের শেষ শুক্রবারে আল কুদস দিবস পালন করে। তখন থেকে সারা বিশ্বে এ দিনটি মুসলিম মুক্তির প্রতীকরূপে পালিত হয়ে আসছে।

লেখক : এম ফিল গবেষক, মুফাসসিরে কোরআন, বেতার ও টিভির ইসলামী উপস্থাপক; খতিব, মণিপুর বাইতুর রওশন (মাইকওয়ালা) জামে মসজিদ, মিরপুর, ঢাকা।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর