আপনি পড়ছেন

ঈদ মানে হাসি। ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে অনাবিল আনন্দ। সারাদিন উৎসব আর প্রিয়জনদের সঙ্গে প্রতিটি মুহূর্ত ভাগাভাগি করার নাম ঈদ। ধনী-গরীব, আমির-ফকির, রাজা-প্রজা সবার কাছে খুশির বার্তা নিয়ে হাজির হয় এ ঈদ। দীর্ঘ একমাস সিয়াম পালন শেষে ঈদের দিন সকালে নতুন পোষাক পড়ে ঈদগাহে ছুটে চলেন সিয়াম সাধকরা। ঈদের জামাতে এক কাতারে দাঁড়িয়ে যান খোদা প্রেমিকরা। ভুলে যান সব ভেদাভেদ।

kolakuli

চমৎকার এ দৃশ্য অক্ষরের ক্যানভাসে এঁকেছেন কবি ফররুখ আহমদ।

‘আজকে এলা খুশীর দিন
দেখ না চেয়ে খুশীর চিন
দেখ না চেয়ে আজ
রঙিন খুশীর ঝলক ঈদগাহে।’

ঈদের নামাজ শেষে একে অন্যের সঙ্গে কোলাকুলি করে প্রেমের বন্ধনকে আরো দৃঢ় করবে। ভুলে যাবে সব দুঃখ-ক্লেশ। একে অন্যকে দেওয়া যত কষ্ট আছে, দুঃখ আছে সব ঝরে যাবে কোলাকুালির মাধ্যমে। শত্রুকে বন্ধু আর বন্ধুকে ভাই করে নেওয়ার শিক্ষা দেয় ঈদের কোলাকুলি। তাইতো জাতীয় কবি লিখেছেন-

‘আজিকে এজিদে হাসেনে হোসেনে গলাগলি,
দোজখে বেহেশতে ফুলে ও আগুনে ঢলাঢলি।’

ঈদের কোলাকুলির শিক্ষা বলতে গিয়ে কবি নজরুল আরো বলেন, ‘এ দিন শয়তান জান্নাতে শরাব বিলায় আর জাহান্নামের আগুন আনন্দে জ্বলতে থাকে। দোস্ত-দুশমন এক হয়ে যায়। গ্রামের প্রতিটি ঈদের মাঠ একেকটি আরাফার ময়দানে পরিণত হয়। রাজা-ফকির কোলাকুলি করে হয়ে যায় ভাই ভাই।’

এখনো মুসলমানরা ঈদের নামাজ পড়ে কোলাকুলি করেন। কিন্তু কোলাকুলির যে মাহান উদ্দেশ্য সে বিষয়ে নজর নেই কারোই। এমপি, মন্ত্রী, সরকারি কর্মকর্তা, চেয়্যারম্যাান, মেম্বারদের সঙ্গে কোলাকুলির ভীড় লেগে থাকে। কিন্তু গরীব দুঃখীদের বুকে টেনে নেয় না মানুষ। কোলাকুলি সংস্কৃতিতেও লেগেছে রাজনীতির হাওয়া। কর্মীদের সঙ্গে নেতা বুক মিলিয়ে বুঝাতে চায় এ বুক তোদের দিয়ে দিলাম। তোরা থাকিস আমার সঙ্গে। আবার যারা অফিস আদালতে চাকরি করেন, তারা বসের সঙ্গে কোলাকুলির জন্য বসে থাকনে। বসকে কোনভাবে সন্তুষ্ট করতে পারলেই প্রমোশন নিশ্চিত।

হায়! এভাবেই সাম্যের কোলাকুলি হয়ে পড়েছে আভিজাত্যের কোলাকুলি। কোলাকুলি এখন ভোটের, দলের, প্রমোশনের মাধ্যম পরিণত হয়েছে। তাই আজ আর কোলাকুলির মাধ্যমে শত্রুকে বন্ধু আর বন্ধুকে ভাই বানানো যায় না। আমাদের ঈদ সংস্কৃতিতে এই আভিজাত্যের কোলাকুলি মুছে ফেলতে হবে। যে কোলাকুলিতে প্রেম নেই, দরদ নেই এম কোলাকুলি তো কপটতা ছাড়া কিছুই নয়। কোলাকুলির নামে কীভাবে ঠকছি এবং ঠকাচ্ছি আমরা নিজেরাও বুঝতে পারি না।

ইসলাম শান্তি ও সাম্যের শিক্ষা দেয়। মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ নেই- এটি ইসলামের অন্যতম মৌলিক শিক্ষা। বছর ঘুরে ঈদ আসে। এখানেও এ শিক্ষা জাগরুক রাখার জন্য চালু হয়েছে কোলাকুলি সংস্কৃতি। যদি মন থেকে মানুষের সঙ্গে প্রেমের কোলাকুলি করতে পারি তবে এ কোলাকুলি আমাদের মাঝে প্রেম ও ভ্রাতৃত্ব তৈরিতে সহায়তা করবে।

প্রিয় পাঠক! আপনি যে মাঠে নামাজ পড়বেন ওই মাঠেই এমন অনেকে থাকবে যাদের আপনি পছন্দ করেন না। ব্যক্তিগত শত্রুতা, দলীয় ও মাজহাবি বিদ্বেষের কারণে এত দিন আপনি যার ছায়াও মাড়াননি, আসুন! ঈদের এই আনন্দঘন দিনে তাকেই ভাই বলে বুকে জড়িয়ে নিই। কোলাকুল করি পরম প্রেম নিয়ে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে ভাই ভাই হয়ে থাকার তাওফিক দিন। আমিন। 

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর