মিয়ানমারে বিচ্ছিন্ন রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত পাঠাতে সরকার যেখানে চেষ্টা করছে, সেখানে উখিয়ায় পাহাড় কেটে নতুন করে রোহিঙ্গা ক্যাম্প তৈরি করছে ‘এনজিওগুলো’। এতে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। স্থানীয়দের অভিযোগ, উখিয়ার থাইংখালীতে নতুন করে রোহিঙ্গা ক্যাম্প তৈরিতে করতে গিয়ে বিশাল বনভূমি উজাড় করা হচ্ছে।

rohingya camp 3

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও থাইংখালী উপজেলার লন্ডাখালীর বনভূমির বিশাল এলাকা জুড়ে নতুন রোহিঙ্গা ক্যাম্প গড়ে তোলা হচ্ছে। অস্থায়ী ঘর নির্মাণের কারণে বিশাল আকৃতির বুলডোজার দিয়ে ওই এলাকার অনেক গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, কতিপয় এনজিও সংস্থা নিজেদের আখের গোছাতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যেমন বাধা হচ্ছে, তেমনি রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে যেতে অনাগ্রহ তৈরিতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য রোহিঙ্গারা যেন মিয়ানমারে ফিরে না যায়। সাথে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশেও উৎসাহিত করছে তারা। আর রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে এসব এনজিওগুলো দীর্ঘ সময় দাতা সংস্থার অর্থ লুটপাট অব্যাহত রাখতে লন্ডাখালী এলাকায় নতুন করে ক্যাম্প নির্মাণের চেষ্টা চালাচ্ছে। এতে স্থানীয়দের নিয়ে বাধা দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এ ব্যাপারে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানান, প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন পাহাড় কেটে নতুন করে আর রোহিঙ্গা ক্যাম্প করা যাবে না। এ অবস্থায় গোপনে পাহাড় কেটে নতুন করে রোহিঙ্গা ক্যাম্প নির্মাণের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। এ সময় তিনি নতুন করে গড়ে উঠা এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে বলে জানান।

rohingya camp 2

লন্ডাখালী এলাকার আবুল আজম ও সুরুত আলম জানান, এনজিও সংস্থা একতা ও মুসলিম হ্যান্ডস প্রভাব বিস্তার করে স্থানীয়দের শতাধিক পরিবারে যুগ যুগ ধরে ভোগ দখলীয় ফলজ, বনজ বাগান উচ্ছেদ করে সেখানে রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন করে ক্যাম্প নির্মাণ করছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৪ শতাধিক ঘর নির্মাণসহ রাতের বেলায় আলোর জন্য সৌর বাতি স্থাপন করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে ক্যাম্প ইনচার্জ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু ওয়াহাব রাশেদ জানান, ক্যাম্পে যাতায়াত সুবিধার উন্নয়নের জন্য এডিবি সড়ক নির্মাণ করলে অসংখ্য বাড়িঘর সরিয়ে নিতে হবে। আর তাই তাদের পুনর্বাসনের জন্য নতুন করে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।

স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের ভোগদখলীয় বাগানের ব্যাপারে ক্যাম্প ইনচার্জ বলেন, সেখানে আগে কোনো প্রকার স্থাপনা বা বাগানের অস্তিত্ব ছিল না। পরিত্যক্ত বনভূমি পেয়েই এসব ঘর নির্মাণ করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

গত এপ্রিল মাসে আরও রোহিঙ্গা ক্যাম্প স্থাপনের জন্য উখিয়ায় নতুন করে পাহাড় কাটা শুরু করেছিল এনজিও সংস্থা ব্র্যাক। পালংখালী ইউনিয়নের চৌখালী নামক পাহাড়ী এলাকার আগর বাগানটি ধ্বংস করে রোহিঙ্গা শিবির স্থাপনের কর্মযজ্ঞ শুরু হয়।

rohingya town 1

স্থানীয়রা জানায়, নতুন করে রোহিঙ্গা শিবির স্থাপনের জন্য এনজিও সংস্থা ব্র্যাক ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে সেখানে বুলডোজার দিয়ে বনভূমির পাহাড় কেটে মাঠ ও চলাচলের রাস্তা তৈরির কাজ চালিয়েছিলো। তখন বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে নতুন রোহিঙ্গা ক্যাম্প স্থাপন বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এখন আবারও বনভূমি উজাড় করে রোহিঙ্গা ক্যাম্প করায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

পালংখালী গ্রামের মো. বেদার বলেন, ‘বর্তমানে উখিয়া-টেকনাফে নতুন-পুরাতন মিলে ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বসবাস করছে। এসব রোহিঙ্গাদের জায়গা দিতে বন প্রায় বিলুপ্তির পথে রয়েছে। তারপরও রোহিঙ্গাদের জন্য জমি দেয়ার কাজ শেষ হচ্ছে না।

এলাকাবাসীর দাবি, রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরিয়ে দেয়ার উদ্যোগে সবাইকে এক জোগে কাজ করার উপযুক্ত সময়। আর এ সময়ে নতুন করে আরও শিবির স্থাপনের কাজটি নিয়ে এলাকাবাসীকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। তাদের মনে সন্দেহ জেগেছে, মিয়ানমারের রাখাইন থেকে নতুন করে রোহিঙ্গা এনে আশ্রয় দিতেই আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো কৌশলে নতুন করে শিবির স্থাপন করছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মিয়ানমার থেকে আরও রোহিঙ্গা নিয়ে আসার আগাম প্রস্তুতি হিসেবে কিছু এনজিও এবং আইএনজিও লন্ডাখালীতে ক্যাম্প তৈরি করেছে। আর রোহিঙ্গারা যদি এদেশ থেকে চলে যায় তাহলে প্রতিষ্ঠানগুলোর আর কোনো কাজ থাকবে না।

rohingya camp 4

রোহিঙ্গা বসতি স্থাপন করতে গিয়ে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে এনজিওর বিরুদ্ধে। বাঁশ ও পলিথিন দিয়ে নির্মিত ১৫ ফিট বাই ২০ ফিটের একটি ঘর নির্মান, টয়লেট, নলকূপ, রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণের ক্ষেত্রে আর্থিক অনিয়ম করে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করে আসছে। তাই সবুজ পাহাড় কেটে ফের নতুন করে রোহিঙ্গা বসতি স্থাপনে এনজিওগুলো মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে স্থানীয়দের ধারণা ।

কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম বলেন, রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসনের অপেক্ষায় আছে। কিন্তু বর্ষার সম্ভাব্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নিতে নতুন ঘরগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়াও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাতায়াত পথ উন্নত করতে এডিবি ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংক উন্নয়ন কাজ শুরু করলে কিছু রোহিঙ্গার বাসা সরানোর প্রয়োজন পড়বে।

‘দেশে নতুন করে আর কোনো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সুযোগ নেই,’ যোগ করেন তিনি।

এ ব্যাপারে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী জানান, ক্যাম্পের কার্যক্রম দেখভাল করেন ক্যাম্প ইনচার্জরা। তাই ক্যাম্প এলাকায় এনজিওরা নতুন কী করছে তা দৃষ্টির বাইরে থাকছে। তিনি জানান নতুন করে গড়ে উঠা এসব রোহিঙ্গা ক্যাম্প উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। তাই নতুন এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।  ইউএনবি।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.