আপনি পড়ছেন

হজ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তম্ভ। সামর্থ্যবান নারী-পুরুষের ওপর হজ ফরজ। পুরুষ চাইলে একাকী হজ সফর করতে পারেন। কিন্তু নারীদের জন্য সঙ্গী থাকা আবশ্যক। আর সে সঙ্গী অবশ্যই তার এমন নিকটাত্মীয় হবেন- যার সঙ্গে তার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া শরীয়তের আলোকে নিষিদ্ধ। নারীর জন্য সঙ্গী রাখাকে শরীয়ত এ জন্য আবশ্যক করেছে, যেনো দীর্ঘ সফরে সে নিরাপত্তাহীনতায় না ভুগে।

women hajj

সফরের কষ্ট ও ঝামেলা যেনো পুরুষ সঙ্গীর সাথে ভাগ করে নিতে পারেন এজন্যও শরীয়ত নারীর জন্য মাহরামের কথা বলেছে। এটা আসলে নারীর প্রতি শরীয়তের কোমল সিদ্ধান্ত এবং শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ। 

এক্ষেত্রে একদল আলেম মনে করেন, পথ যদি নিরাপদ হয় তাহলে মাহরাম না থাকলেও একাকী হজ আদায় করাতে কোনো গোনাহ হবে না। তারা আরো বলেন- নারীরা নারীরা মিলে মাহরাম পুরুষ ছাড়াও হজে যেতে পারবেন।

তবে ভিন্ন একদল আলেমের মত হল, পথ যতই নিরাপদ হোক না কেনো, মাহরাম ছাড়া কোনোভাবেই নারীদের জন্য হজে যাওয়া বৈধ নয়। পাঠক! বিষয়টি শরীয়তের আলোকে বিশ্লেষণ করা হলো।

মাহরাম ছাড়া হজ করতে পারবে না:

হানাফী ও হাম্বলি বিশেষজ্ঞদের মতে, মহিলাদের ওপর হজ ফরজ হওয়ার জন্য মাহরাম শর্ত। মাহরাম না থাকলে অঢেল সম্পত্তি থাকা স্বত্তেও তার ওপর হজ ফরজ হবে না। বাদায়েউস সানায়ে, ২য় খন্ড, ১২৩ পৃষ্ঠা।

কোন মহিলা যদি মাহরাম ছাড়া হজ করে তবে হজ আদায় হয়ে যাবে, কিন্তু মাহরাম ব্যতীত সফর করার কারণে গুনাহগার হবে বলে এ দুই মাজহাবের ইমামরা ফতোয়া দিয়েছেন। হেদায়া, ১ম খন্ড, ২১৩ পৃষ্ঠা।

দলিল হিসেবে তারা ইবনে আব্বাস রা. এর হাদিস উল্লেখ করেন। ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেছেন, ‘মাহরাম ছাড়া কোন পুরুষ কোন নারীর সঙ্গে নির্জনে সাক্ষাৎ করবে না এবং কোন নারী মাহরাম ব্যতীত সফরও করবে না। এক সাহাবী বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার স্ত্রী হজ করতে যাচ্ছে আর আমি অমুক যুদ্ধে নাম লিখিয়েছি। রাসুল সা. বললেন, তোমার স্ত্রীর সঙ্গে হজে যাও।’ সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর ১৭৪০; সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বর ৩১৩৬।

নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে মাহরাম আবশ্যক নয়:

শাফেয়ী ও মালেকি বিশেষজ্ঞদের মতে, মহিলাদের ওপর হজ ফরজ হওয়ার জন্য মাহরাম শর্ত নয়, শর্ত হল তার নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়া। সফরের পথ যদি নিরাপদ হয় তবে মাহরামহীন একজন মহিলা একদল মাহরামওয়ালী মহিলাদের সঙ্গে হজে যেতে পারবে। আল উম্ম, ২য় খন্ড, ১২৭।

এঁদের দলিল হলো, আদী ইবনে হাতেম রা. হতে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেছেন, ‘হে আদী! তোমার জীবনকাল যদি দীর্ঘ হয়, তুমি অবশ্যই দেখতে পাবে, ইরাকের হীরা অঞ্চল থেকে একজন মহিলা একাকী উটের হাওদায় বসে কাবা তাওয়াফ করবে এবং সে আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পাবে না।’ সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর ৩৪০০; সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বর ২৮৯৪।

এ হাদিস থেকে বোঝা যাচ্ছে, এমন একটা সময়ের ভবিষ্যতবাণী নবীজি (সা.) করেছেন, যখন পথে কোনো বিপদের শঙ্কা থাকবে না, তখন নারীরা একাকী হজের সফর করবে। আর এ সফরকে নবিজী অপছন্দ করেননি বরং তিনি বেশ উৎসাহ এবং আশার সঙ্গেই বলেছেন এ কথা। 

আধুনিক আলেমরাও এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন, সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে এবং ঝামেলামুক্ত হজ করার নিশ্চয়তা পেলে নারীরা মাহরাম ছাড়াই হজ করতে পারবেন। এতে তাদের কোনো ধরনের গোনাহ হবে না।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর