মাসখানেক পরেই পবিত্র ঈদুল আযহা। ঈদকে সামনে রেখে কোরবানির পশু নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন দেশের খামারি, দালাল, প্রান্তিক কৃষক, ফড়িয়াসহ সংলিষ্টরা। কিন্তু অনেকেই অধিক মুনাফা লাভের আশায় বিষাক্ত স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে গরু-মহিষ মোটাতাজা করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে।

cow injectionফাইল ছবি

সারাদেশ জুড়েই চলছে এই বিষাক্ত স্টেরয়েড প্রয়োগ করে গরু মোটাতাজা করার কাজ। এ থেকে পিছিয়ে নেই টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার কৃষক-খামারিরাও। উপজেলার গারো বাজার, মাইধারচালা, মোটের বাজার, ফুলমারীর চালা, আনেহলা, সাগরদিঘী, দেওজানা, রসুলপুর ও দীঘলকান্দিসহ ঘাটাইলের একটি পৌরসভার বেশ কিছু এলাকা ও ১২টি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফা লাভের জন্য বাজার থেকে স্বল্প টাকায় লিকলিকে চিকন ও অপেক্ষাকৃত দুর্বল গরু কিনে আনেন। এরপর গরুকে দ্রুত স্বাস্থবান বানাতে হরমোন, স্টেরয়েড, উচ্চমাত্রার রাসায়নিক দ্রব্য অথবা ভিটামিন ইনজেকশনের মাধ্যমে পুশ করে অথবা খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে গরুর শরীরে ঢুকানো হয়।

এসব গরুর মাংস মানব শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলে জানিয়েছেন মৎস ও পশু স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা দেশের স্বনামধন্য এনজিও প্রতিনিধি ও বিশেষজ্ঞরা।

সতর্ক করে এসব এনজিও প্রতিনিধি ও বিশেষজ্ঞরা বলেন, কোরবানির সময় গরু বা মহিষ কেনার আগে তা ভালো করে চেনা প্রয়োজন। ভালো গরুটি চিনে কিনতে না পারলে সেই গরুর মাংস আপনার জন্য ভয়ংকর ক্ষতিকর হতে পারে। কারণ এসব গরু-মহিষ মোটা তাজা করতে বাজার থেকে বিষ কিনে সরাসরি তাদের দেহে প্রবেশ করানো হচ্ছে। সাধারণত ক্ষতিকর ওষুধ দিয়ে মোটাতাজা করা গরু দেখতে অস্বাভাবিক স্থুল দেখায়, শরীরের মাংসপেশিতে আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিলে তা ডেবে যায়, শরীরের নিচের অংশে পানি জমে থাকে, নেশাগ্রস্ত মানুষের মতো চোখে ঝিমুনির ভাব থাকে। এছাড়া এসব গরু বা মহিষের চঞ্চলতা থকে না, রোদে থাকতে পারে না, এদের গতিবিধি থাকে নিস্তেজ ধরনের, এসব পশু পানি খায় ঘন ঘন এবং প্রসাবও করে ঘন ঘন।

তারা আরও বলেন, ওষুধ দিয়ে মোটাতাজা করা এসব গরু বা মহিষের মাংস খেলে মানুষের হৃৎপিণ্ড, লিভার ও কিডনির ক্ষতি হতে পারে। পাশাপাশি পেট, ঘাড়, গলা ও মুখে জমতে পারে অতিরিক্ত চর্বি। এছাড়া স্টেরয়েডের কারণে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের কারণে মৃত্যুঝুঁকি পর্যন্ত থেকে যায়। অতিরিক্ত স্টেরয়েড মাংসপেশি ও অস্থিক্ষয়জনিত জটিল রোগ সৃষ্টি করতে পারে। ফলে হাত-পায়ের মাংসপেশিতে টানসহ দুর্বলতা দেখা দিতে পারে শরীরে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, স্টেরয়েডের জন্য মানবদেহের হাড়ের ঘনত্ব কমে গিয়ে দেখা দেয় অস্টিওপোরোসিস রোগ। পাশাপাশি নষ্ট হতে পারে চোখের দৃষ্টিশক্তিও। মাত্রতিরিক্ত ডাইক্লোফনাক ইনজেকশন পুশ করা গরু বা মহিষের মাংস খেলে মানুষের কিডনি-লিভারসহ বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিকল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া বিভিন্ন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়ে সৃষ্টি হতে পারে বিভিন্ন প্রাণঘাতী রোগ।

গরু বা মহিষের শরীরে ইনজেকশন অথবা খাবারের মাধ্যমে যেসব বিষাক্ত ওষুধ প্রয়োগ করা হয়, তার মধ্যে ভারতীয় স্টেরয়েড, পামবড়ি, ডেক্সামেথাসেন, প্রি-ডেক্সানল, ওরাডেক্সসন, প্যারাডেক্সা, বেটামেথাসন, পেরিঅ্যাকটিন ও ড্রাইক্লোফেনাক অন্যতম। এসব ওষুধ হাট বাজারসহ বিভিন্ন ফার্মেসিতে বিক্রি হয় প্রকাশ্যেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গারোবাজার এলাকার এক খামারি বলেন, গরুর খাদ্যের দাম আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। সারাবছর গরু লালন-পালনে করে এখন আর আগের মতো লাভ হয় না। তাই সবাই তাকিয়ে থাকেন কোরবানির ঈদের দিকেই। ঈদুল আযহা কাছে আসলেই মেতে ওঠেন গরু মোটা-তাজা করনের প্রতিযোগিতায়। পশুদের ইনজেকশন প্রয়োগ ও বিভিন্ন ভিটামিন জাতীয় ওষুধ খাওয়ানোর পাশাপাশি ইউরিয়া সারও খাওয়ানো হয়।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.