এক নজরে এরশাদের উত্থান-পতন
- Details
- by অরণ্য সৈকত
সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বার্ধক্যজনিত কারণে আজ রোববার সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে মারা গেছেন। ৮৯ বছরের এই জীবনে নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গেছেন আলোচিত ও একইসাথে সমালোচিত এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশের প্রাথমিক সময়ের ইতিহাসের সাথে জড়িত এই মানুষটি নিজেও জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে রচনা করে গেছেন নতুন নতুন ইতিহাস।
১৯৩০ সালে ভারতের কোচবিহার জেলায় জন্ম নেন এরশাদ। বাল্যকাল কাটান রংপুরে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা গ্রহণ শেষে ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি নেন। ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে অফিসার পদে যোগদানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার কর্মজীবন।
১৯৬৯ সালে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে পদোন্নতি পান এরশাদ। পরে সপ্তম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টেও অধিনায়ক পদে দায়িত্ব পালন করেন।
কিছুকাল পরেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধের পুরোটা সময় পাকিস্তানে ছিলেন এই সামরিক কর্মকর্তা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন।
দেশে ফিরেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল পদে নিয়োগ পান এরশাদ। তৎকালীন সরকারপ্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজে তাকে এই পদে নিয়োগ দেন।
এরপরের ঘটনা খুব দ্রুত বদল হতে শুরু করে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হলে ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসা সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান তাকে মেজর জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে উপ সেনাপ্রধান করেন। জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়ে রাষ্ট্রপতি পদ গ্রহণ করার পর এরশাদ সেনাবাহিনীর প্রধান হন।
১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমান এক সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হওয়ার পর এরশাদ নতুন করে দৃশ্যপটে হাজির হন। ১৯৮১ সালের ১৫ নভেম্বরের নির্বাচনে বিচারপতি সাত্তার ক্ষমতায় আসেন। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ বিচারপতি সাত্তারকে হটিয়ে সংবিধান স্থগিত করে সেনা শাসন জারির মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন এরশাদ।
ওই সময় তার হাতের ক্রীড়নক হয়ে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন বিচারপতি আহসানউদ্দিন আহমদ। ১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর তাকে সরিয়ে এরশাদ নিজেই রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন।
১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি জাতীয় পার্টি নামে রাজনৈতিক দল গঠন করে তিনি নিজেই প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মহাসচিব পদে অধ্যাপক এমএ মতিনকে নিয়োগ দিয়ে প্রকাশ্য রাজনীতিতে আসেন এরশাদ। ১৯৮৬ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন বর্জন করে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো। এই সুযোগে জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় আসে এবং রাষ্ট্রপতির দায়িত্বে থাকেন তিনি।
এরপর সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী এনে সংবিধান পুনর্বহাল করা হলেও বিরোধী দলগুলোর তীব্র আন্দোলনের মুখে ১৯৮৭ সালের ৭ ডিসেম্বর সংসদ বিলুপ্ত করে ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ সাধারণ নির্বাচন দেন এরশাদ। কিন্তু ওই নির্বাচনও বর্জন করে প্রধান বিরোধী দলগুলো। উল্টো এরশাদবিরোদী আন্দোলনে নামে সবাই। গণঅভ্যুত্থানের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পদত্যাগে বাধ্য হন এরশাদ।
ক্ষমতা হারানোর পর ১৯৯১ সালে কারাবন্দী হন এরশাদ। ওই বছর নির্বাচনে জিতে সরকার গঠন করে বিএনপি। খালেদা জিয়া নেতৃত্বাধীন ওই সরকারের প্রায় পুরোটা মেয়াদই কারাগারে থাকেন তিনি। ওই সময় এরশাদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি দুর্নীতি মামলা হয়।
ছয় বছর কারাভোগের পর ১৯৯৭ সালের ৯ জানুয়ারি জামিনে মুক্তি পান। তবে আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে সংসদ সদস্যের পদ হারান এবং ২০০০ সালে তার দল জাতীয় পার্টিতে ভাঙন দেখা দেয়।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে 'স্বৈরাচার' হিসেবে পরিচিত হলেও প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি'র ক্ষমতার লড়াইয়ে এরশাদ বরাবরই বেশ মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন। এককভাবে ক্ষমতা অর্জন করা যাবে না -এমন চিন্তায় দুই দলই পরবর্তী সময়ে এরশাদকে নানাভাবে কব্জায় রাখার চেষ্টা করে গেছে।
এর ফলশ্রুতিতে ২০০১ সালের অক্টোবরে নির্বাচনে এরশাদের জাতীয় পার্টি ১৪টি, মহাজোটের শরিক হিসেবে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ২৭টি আসন পায়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বিএনপিসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল বর্জন করলে ৩৪টি আসন নিয়ে বিরোধী দল হয় এরশাদের জাতীয় পার্টি। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ২২টি আসনে জয় পায় জাপা।
চলমান সংসদেও বিরোধী দলের নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন এরশাদ। নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে জীবনের পুরোটা সময় ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা এরশাদ মৃত্যুর পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে কীভাবে ‘ব্যবহৃত’ হন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.