নদীর উপর সাঁকো বানিয়ে দিলো ছাত্রলীগ

যশোরের কেশবপুর উপজেলার কাশিমপুর গ্রামের জনগণের দুর্ভোগ দূর করতে ৬০ মিটার দীর্ঘ ভদ্রা (বুড়িভদ্রা) নদীর ওপর একটি সাঁকো নির্মাণ করেছে উপজেলা ছাত্রলীগ। এর ফলে অবহেলিত এই জনপদের যাতায়াতের দুর্ভোগ কিছুটা হলেও লাঘব হয়েছে।

কেশবপুরের নিভৃত এই গ্রামটি উপজেলা শহর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। তাই কেশবপুর শহরে আসতে হলে গ্রামবাসীকে পাড়ি দিতে হয় দীর্ঘ পথ। কিন্তু গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া ভদ্রা নদীর ওপারের মাত্র আট কিলোমিটার দূরেই রয়েছে খুলনার ডুমুরিয়া। কষ্ট করে নদী পার হলেই যাওয়া যায় তুলনামূলক কাছের এই শহরে।

কিন্তু নদীতে কোনোরকম সেতু না থাকায় গ্রামবাসী প্রতিদিন নৌকা দিয়ে নদী পার হয়ে ডুমুরিয়া দিয়ে সাতক্ষীরা, খুলনা, যশোরসহ সারাদেশের বিভিন্ন জেলায় যাওয়া আসা করেন। এইভাবে সবচেয়ে কষ্টের মুখে পড়তে হয় ভদ্রা নদী পার হয়ে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের।

যোগাযোগ ব্যবস্থায় অবহেলার শিকার এই গ্রামের মানুষরা দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে ভদ্রা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসলেও সরকারের কোন কর্তৃপক্ষ নজর দেয়নি তাতে। সম্প্রতি এই দুর্ভোগের চিত্র ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি যশোর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রওশন ইকবার শাহী ও উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান খান মুকুলসহ অন্যান্য ছাত্রলীগ নেতাদের দৃষ্টিগোচর হয়। এর প্রেক্ষিতে রওশন ইকবাল শাহীর নির্দেশে উপজেলা ছাত্রলীগের নেতারা গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলেন এবং ভদ্রা নদীর ওপর একটি সাঁকো নির্মানের উদ্যোগ নেন।

সম্প্রতি সাঁকো নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে আসলে গত রোববার বিকেলে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা গোলাম মোস্তফাসহ ছাত্রলীগ নেতারা সাঁকো পরিদর্শন যান এবং সাঁকো নির্মাণে আর্থিক সহায়তা দেন। এ সময় স্কুল-কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা এবং গ্রামবাসীরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এমনকি শিক্ষার্থীরা নতুন সাঁকো পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।

শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রতিদিনই তাদের নদী পাড়ি দিয়ে কষ্ট করে স্কুল-কলেজে যেতে হতো। মাঝে মাঝে নদীতে পড়ে গিয়ে ভিজে যাওয়ার ঘটনাও কম নয়। এই সাঁকো এখন তাদের একটি বড় প্রাপ্তি। তবে বাঁশ-কাঠের এই সাঁকো কয়েক বছরের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই অবিলম্বে এখানে একটি স্থায়ী ব্রিজ নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে দাবি জানান তারা।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, কেশবপুর উপজেলার নয় নম্বর গৌরিঘোনা ইউনিয়নের নয়টি গ্রামে বসবাস করেন প্রায় ২৬ হাজার মানুষ। চারটি উচ্চ বিদ্যালয়, তিনটি মাদ্রাসা এবং ১৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে এই ইউনিয়নে। পাশাপাশি চারটি বাজার ও ধর্মীয় উপাসানালয় রয়েছে ৫৭টি। তবে এসব ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে অবহেলিত জনপদের নাম কাশিমপুর। এই গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ভদ্রা নদী। যা পার হলেই শুরু হয় খুলনা জেলা।

স্থানীয়রা বলেন, নদী পারাপারে ভালো কোন ব্যবস্থা না থাকায় গ্রামবাসীদের জীবন-জীবিকা প্রায় অচল হওয়ার অবস্থা। গ্রামের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে তাকে সঠিক সময়ে হাসপাতালে পর্যন্ত নেওয়া সম্ভাব হয়ে ওঠে না। ফলে গর্ভবতী মা থেকে শুরু করে গ্রামের শিশু, বৃদ্ধ সকলেই যথাসময়ে চিকিৎসাসেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতেন। এখন সেতু হওয়ায় এই সমস্যা আর হবে না।