ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হওয়া ১৯টি দেশের ২৭ জন ব্যক্তির সঙ্গে বুধবার সাক্ষাৎ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখানে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ব্যাপকভাবে গুম ও অত্যাচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন এক নারী। সেই সঙ্গে এর প্রতিকার চেয়ে ট্রাম্পের কাছে সাহায্যও চাওয়া হয়েছে।

priya saha trump

বিষয়টি মার্কিন গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পরই তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে এবং এ নিয়ে নানা সমালোচনা চলছে। বিষয়টি নিয়ে মাহফুজ সাদি নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী একটি দীর্ঘ পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে প্রিয়া সাহা নামের ওই নারীর এমন অভিযোগকে ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যমূলক এবং বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এটি উস্কানিমূলক কি না- এমন প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপারের পাঠকদের জন্য পোস্টটি বানান নীতি সংশোধন সাপেক্ষে হুবহু তুলে ধরা হলো-

priyanka leader

‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে ৩৭ মিলিয়ন সংখ্যালঘু গুম হওয়ার কাল্পনিক অভিযোগ উত্থাপনকারী নারীর পরিচয় পাওয়া গেছে। প্রিয়া সাহা নামের এই নারী বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক। এ ছাড়া বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ‘শারি’-এর নির্বাহী পরিচালক এবং মহিলা ঐক্য পরিষদ’র সাধারণ সম্পাদক পদে আসীন হলেও 'বিভ্রান্তিমূলক কর্মকাণ্ডের' জন্য গত বছর তাকে বহিষ্কার করা হয়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, থাকতেন রোকেয়া হলে।

পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলায় চরবানিরীর মাটিভাঙ্গাতে জন্ম নেয়া প্রিয়ার স্বামীর নাম মলয় সাহা। তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একজন সহকারী পরিচালক। এই দম্পতি ঢাকায় থাকলেও তাদের দুই মেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পড়ালেখা করছেন। অভিযোগ রয়েছে, নিজের বাড়ি পুড়ানোর নাটক সাজিয়ে প্রচুর বিদেশি ফান্ড সংগ্রহ করেন প্রিয়া সাহা।

গত ১৭ জুলাই হোয়াইট হাউজে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হওয়া ১৯টি দেশের ২৭ জন ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ করেন ট্রাম্প। সেখানে প্রিয়া সাহা নিজেকে বাংলাদেশি পরিচয় দিয়ে ট্রাম্পকে বলেন, ‘স্যার আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। সেখানে ৩৭ মিলিয়ন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান বিলীন (গুম) হয়ে গেছে। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা বাংলাদেশেই থাকতে চাই। সেখানে এখনো ১৮ মিলিয়ন সংখ্যালঘু মানুষ রয়েছে। আমার অনুরোধ দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশ ছাড়তে চাই না। শুধু থাকার জন্য সাহায্য করুন।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি আমার বাড়ি-ঘর হারিয়েছি, তারা আমার বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে। তারা আমরা জমিজমা দখল করে নিয়েছে। কিন্তু তারা (সরকার) কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এখন পর্যন্ত।’ এ সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওই নারীকে প্রশ্ন করেন, ‘কারা জমি দখল করেছে, করা বাড়ি-ঘর দখল করেছে?’ জবাবে ওই নারী বলেন, ‘তারা মুসলিম মৌলবাদী গ্রুপ এবং তারা সব সময় রাজনৈতিক আশ্রয় পায়, সব সময়ই পায়।’

priya saha family

সেই কথোপকথনের ধারণ করা ভিডিও খবরটি মার্কিন টিভি চ্যানেল এবিসি নেটওয়ার্কের চ্যানেল এবিসি ফোর সম্প্রচার করলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত জানা যায়নি, প্রিয়া সাহা কোন সংগঠনের প্রতিনিধি হিসেবে ট্রাম্পের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন এবং কীসের ভিত্তিতে তিনি এসব কাল্পনিক অভিযোগ তুলেছেন।

এ ব্যাপারে হিন্দু বৗদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি হিউবার্ট গোমেজের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান। বিষয়টি নিয়ে প্রিয়া সাহার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সাংবাদিকরা ব্যর্থ হয়েছেন। তার ‘শারি’ কার্যালয়ে ফোন করা হলেও কেউ রিসিভ করেননি।

এ ঘটনা নিয়ে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যার শিরোনাম হচ্ছে 'আচ্ছা বাংলাদেশটা যেন কোথায়? ফের ট্রাম্পের প্রশ্নে হতচকিত বিশ্ব'। এতে বলা হয়, স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গির ট্রাম্পকে তার উপদেষ্টা জানান, “মিয়ানমারের ঠিক পাশেই যে দেশটি রয়েছে, সেটাই হল বাংলাদেশ।”

এর উল্টো চিত্র উঠে এসেছে ২০১৬ সালে বিবিসি বাংলার 'বাংলাদেশে হিন্দুদের সংখ্যা এত বাড়ল কীভাবে?' শিরোনামের এক প্রতিবেদনে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর বরাত দিয়ে এতে বলা হয়, ২০১৪ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে এক বছরের ব্যবধানে দেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে মোট জনসংখ্যার ১০.৭ শতাংশ। সে হিসাবে এক বছরে হিন্দু জনগোষ্ঠী প্রায় ১৫ লাখের মতো বেড়েছে বলে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। যদিও বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ের আদমশুমারিতে দেখা গেছে, বাংলাদেশে হিন্দু জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কমেছে।

বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ৩৩% সরকারি চাকরি করছে, গণভবন থেকে শুরু করে প্রায় প্রতিটি সরকারি দপ্তরের শীর্ষ পদেও উল্লেখযোগ্য হিন্দু ধর্মাবলম্বী কর্মকর্তারা সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। যেখানে পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘু মুসলিম জনসংখ্যা ৩০% হলেও তারা মাত্র ২% সরকারি চাকরির সুযোগ পাচ্ছে। ফলে রাষ্ট্রীয় সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কেউ যখন মার্কিন মুল্লুকে গিয়ে দেশের বিরুদ্ধে এমন আপত্তিকর বদনাম ছড়ায়, তখন সত্যিই অবাক লাগে বৈ কি! তারা এই দুঃসাহস কোথায় পায়, সে প্রশ্ন ওঠাটাই স্বাভাবিক নয় কি?

এদেশে সংখ্যালঘুরা যে একেবারেই নির্যাতিত হননা, তেমনটাও নয়। তবে অভিযোগ এলে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও গুরুত্বের সঙ্গে বেশ দ্রতু পদক্ষেপ নিচ্ছে। তারপরেও এ নিয়ে সবার ঘুম হারাম হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা ঘটেনি। এমন প্রেক্ষাপটে আমি সংখ্যাগুরু মুসলিম হিসেবে নয়, এ দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে জাতির সামনে দশটি প্রশ্ন করতে চাই। তা হলো-

১. বাংলাদেশে সত্যি কি ৩৭ মিলিয়ন সংখ্যালঘু বিলীন হয়েছে বা হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে- অভিযোগটি কি আদৌ বাস্তবসম্মত?

২. বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা কি বিলীন হওয়ার পথে এবং এ জন্য কি ট্রাম্পের সাহায্য প্রয়োজন?

৩. বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা কতটা নির্যতন-নিপীড়নের শিকার, যে পশ্চিমাদের সহায্য চাইতে হবে?

৪. প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশের চেয়েও কি বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা বেশি নির্যাতনের শিকার?

৫. বিশ্বের কোনো দেশের কোনো জনগোষ্ঠী কি এত সংখ্যক সংখ্যালঘু বিলীন হওয়ার প্রশ্ন তুলেছে?

৬. প্রিয়া সাহার এ কাল্পনিক অভিযোগের কারণ কী, কেন তিনি বহির্বিশ্বে দেশকে ছোট করলেন এবং দেশের সুনাম নষ্ট করলেন?

৭. তিনি কেন দেশে এ ধরনের অভিযোগ না তুলে ট্রাম্পের কাছে নালিশ করতে গেলেন এবং তার অন্য কোনো মিশন আছে কি না?

৮. এ অভিযোগ তোলার সঙ্গে সাহায্য চেয়ে বাংলাদেশে পশ্চিমা হস্তক্ষেপ চান প্রিয়ারা? 

৯. দেশে ধর্মীয় কট্টরপন্থী, উগ্রবাদকে উৎসাহিত করতেই কি এ সাম্প্রদায়িক অভিযোগ তোলা হয়েছে? এবং

১০. দেশে বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নষ্ট করতে সুপরিকল্পিতভাবে একটি মহল আন্তর্জাতিক বিশ্বে মীরজাফরী করছে?

পরিশেষে বলবো, প্রিয়া সাহা বিভিন্ন সময় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপি এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। ফলে সরকারের উচিৎ হবে এই নারীর কথিত অভিযোগের বিষয়ে খতিয়ে দেখা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যাতে মানুষের কাছে ভুল বার্তা না যায়।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.