বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানো ঈমানি দায়িত্ব
- Details
- by মুফতি মাওলানা মুহাম্মাদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী
দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির কারণে পানিবন্দী অসহায় জীবন যাপন করছে লাখ লাখ মানুষ। এ অবস্থায় সমাজের বিত্তবানদের বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া বিবেকের দাবি এবং ইসলামের শিক্ষা। টাকা-পয়সা, খাদ্য, বস্ত্র, পানি, ঔষুধসহ যার যা কিছু আছে, তা নিয়েই স্বতঃস্ফূর্তভাবে বন্যা দুর্গতদের সাহায্যে এগিয়ে আসা আমাদের ঈমানি দায়িত্ব।
অন্যের বিপদে সাহায্যের হাত বাড়ানোর প্রতিদান সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা নিজেদের ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে তাদের দানের দৃষ্টান্ত হলো- যেমন একটি শস্য বীজ বপন করা হলো এবং তা থেকে সাতটি শীষ উৎপন্ন হয়েছে আর প্রত্যেক শীষে রয়েছে একশটি শস্য কণা। এমনিভাবে মহান আল্লাহ তায়ালা যাকে চান তাকে প্রাচুর্য দান করেন। তিনি প্রাচুর্যময়, জ্ঞানময়। (সূরা বাকারাহ, আয়াত : ২৬১)।
সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘বান্দা যতক্ষণ তার ভাইকে সাহায্যে করবে, মহান আল্লাহ তায়ালা ততক্ষণ তাকে সাহায্য করতে থাকবেন।’ (মুসলিম)। এ হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসগণ বলেন, বান্দা যেভাবে ভাইয়ের বিপদের সাহায্যকারী হয়েছে, মহান আল্লাহ তায়ালাও তার বিপদে দুনিয়া আখেরাতে উত্তম সাহায্যকারী হবেন।
সাধ্যমতো মানব সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করা ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত মর্যাদপূর্ণ কাজ। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানব সেবায় তার ভাইয়ের সঙ্গে চলে, ওই কাজ না করা পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা ৭৫ হাজার ফেরেশতা দিয়ে তাকে ছায়া দান করেন। তারা তার জন্য রহমত ও মাগফিরাতের দোয়া করতে থাকে। তার প্রত্যেক কদমে একটি গোনাহ মাফ হয় এবং একটি মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।’ (আত তারগীব)।
বন্যা দুর্গত বিভিন্ন এলাকায় পানিবাহিত নানা ধরনের রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়েছে। প্রয়োজনীয় ঔষুধপত্রের অভাবে তারা ভাল চিকিৎসা পাচ্ছে না। তাই জরুরি ভিত্তিতে বন্যা আক্রান্ত এলাকায় মানবেতর জীবনযাপনরত বানভাসি মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় ত্রাণ তৎপরতা, শুকনা খাদ্যসামগ্রী প্রদান, আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতা ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ একান্ত জরুরী। হজরত আব্দুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলছেন, ‘তোমরা পৃথিবীবাসীর প্রতি দয়া করো। আকাশের মালিক আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।’ (মুসতাদরাক আলাস সহিহাইন)।
হজরত উসামা ইবনে যায়েদ (রা.) থেকে আরেকটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই! মহান আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন, যে তার বান্দাদের প্রতি দয়া করে।’ (বুখারী ও মুসলিম)। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মানুষের সেবা ও উপকারের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা কিছু নিবেদিত প্রাণ সৃষ্টি করেছেন। মানুষ বিপদে পড়লে তাদের শরাণাপন্ন হয়। এসব রহম দিল ব্যক্তিরা আল্লাহর শাস্তি থেকে নিরাপদ থাকবে। (আত-তারগীব)।
লেখক : এম ফিল গবেষক, মুফাসসিরে কোরআন, বেতার ও টিভির ইসলামী উপস্থাপক; খতিব, মণিপুর বাইতুর রওশন (মাইকওয়ালা) জামে মসজিদ, মিরপুর, ঢাকা।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর