প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর: চাহিদার চেয়ে পশুর জোগান বেশি রয়েছে
- Details
- by নিজস্ব প্রতিবেদক
এ বছর ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর বিশাল চাহিদা মেটাতে দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে গবাদিপশু রয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১ কোটি ১০ লাখ কোরবানির পশুর চাহিদা পূরণের জন্য সারাদেশে প্রায় ১ কোটি ১৭ লাখ ৮৮ হাজার ৫৬৩টি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক ইউএনবিকে বলেন, ‘এবার পশু সংকট হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং চাহিদার চেয়ে পশুর জোগান বেশি রয়েছে।’
তিনি মনে করেন, পশুর জোগান বেশি থাকায় এবার ঈদে গবাদি পশু পালনকারী খামারি ও ক্রেতা উভয়ের জন্যই একটি ভালো পরিবেশ বজায় থাকবে। এছাড়া ভারত থেকে গবাদি পশু আসা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
কৃষক ও খামারিরা যাতে কোরবানির পশুর ন্যায্য দাম পান, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে সীমান্ত অঞ্চল দিয়ে যাতে কোনো গবাদিপশু দেশে প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে বিশেষ নজর দিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, এবার ভারত থেকে দেশে পশু আসার হার অনেক কম। তবে দাম কম হওয়ার কারণে মিয়ানমার থেকে অনেক পশু দেশে প্রবেশ করছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, গেল ঈদুল আজহায় ৩৮ লাখ গরুসহ প্রায় ১ কোটি ৪ লাখ পশু কোরবানি দেয়া হয়েছিল।
তিনি বলেন, এবছর ঈদে ৪২ লাখ গরুসহ প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ পশু কোরবানি করা হতে পারে। অর্থাৎ কোরবানির পশুর চাহিদা এবার ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে। ‘এবারের ঈদুল আজহায় চাহিদার চেয়ে সাত লাখেরও বেশি পশু প্রস্তুত রয়েছে।’
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে, এবছর ৪৫ লাখ ৮২ হাজার গরু ও মহিষ এবং ৭২ লাখ ৬ হাজার ৫৬৩টি ছাগল, ভেড়া ও অন্যান্য গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, গবাদিপশুর মজুদ গতবছর ভালো ছিল। ‘গতবছর গবাদি পশু উদ্বৃত্ত ছিল ১০ লাখ।’
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রায় ১০ লাখ প্রাণি প্রতিবেশি দেশ থেকে আনা হয়েছিল।’
ভারতীয় গরু আসার পরিমাণ কমেছে
ইউএনবি যশোর প্রতিনিধির পাঠানো প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বিগত কয়েক বছরের তুলনায় চলতি বছরে বেনাপোল ও শার্শা সীমান্ত এলাকা দিয়ে বৈধ ও অবৈধ পথে ভারত থেকে গরু-ছাগল কম আসছে। এতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন যশোরের খামারিরা।
অবৈধ পথে ভারত থেকে আসা গরু-ছাগলের সঠিক হিসেব না থাকলেও বৈধ পথে আসা পশুর একটি হিসেব রয়েছে শার্শা উপজেলার নাভারন কাস্টমস করিডোরে। কাস্টমসের তথ্যমতে, জুলাই মাসে ৯৯টি গরু ও ৫টি ছাগল বৈধভাবে ভারত থেকে এসেছে।
যশোরের পশ্চিম প্রান্তজুড়ে ভারত সীমান্ত। সীমান্তের বেশিরভাগ স্থানে ভারতীয়দের দেয়া কাঁটাতারের বেড়া রয়েছে। তবে যে স্থানে বেড়া নেই সে পথে অনায়াসে গরু ও ছাগল আসে। আর যে পথে কাঁটাতারের বেড়া, সেখান থেকে গরু আনা হয় বিভিন্ন কৌশলে।
বৈধ পথে গরু, ছাগল ও ভেড়া আনার জন্য যশোর সীমান্তে শার্শার গোগা ও বেনাপোলের পুটখালীতে দুটি খাটালের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। খাটাল দুটি দিয়ে থেকে এখন সপ্তাহে ২০ থেকে ২৫ টি গরু আসছে। যেখান আগের বছরগুলোতে প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার গরু, ছাগল ও ভেড়া আসতো।
খুলনা ২১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার জানান, অবৈধ পথে ভারতীয় গরু ও ছাগল যাতে বাংলাদেশে সহজে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য ইতিমধ্যে সীমান্তে টহল জোরদার করা হয়েছে।
যশোরের ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সেলিম রেজা জানান, বিভিন্ন ক্যাম্পের সদস্যরা সীমান্তে কড়া পাহাড়া দেয়ার ফলে চোরাচালানকারিরা সীমান্ত অতিক্রম করে অবৈধ পথে কোনো গরু-ছাগল নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারছে না। এতে করে কোরবানিতে ভারতীয় গরু ও ছাগলের সংখ্যা অনেক কম হবে বলে ধারণা করছেন বিজিবি’র এই কর্মকর্তা।
সিলেটেও একই অবস্থা। জেলার প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয় জানিয়েছে, আসন্ন ঈদুল আজহায় সিলেটে ২ লাখেরও বেশি কোরবানির পশু প্রস্তুত রয়েছে।
সিলেটের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে গেলবারের তুলনায় এবছর ভারতীয় পশু আসার হার কমেছে।
সিলেট বিভাগের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আবুল কাশেম জানান, সিলেট বিভাগে চাহিদা অনুযায়ী খামারগুলোতে পর্যাপ্ত সংখ্যক পশু আছে। এই বিভাগের ৩৫ হাজার ৬৬৫ জন খামারির কাছে ২ লাখ ২ হাজার ৯০২টি কোরবানির পশু প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কোরবানির পশু মজুদ রয়েছে সিলেট জেলায় আর সবচেয়ে কম মৌলভীবাজারে। অভ্যন্তরীণ উৎপাদিত পশু দিয়েই কোরবানির পশুর চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। এতে স্থানীয় খামারিরা লাভবান হবেন।
তিনি বলেন, ঈদকে সামনে রেখে সীমান্ত এলাকা দিয়ে চোরাকারবারিরা যাতে গরু আনতে না পারে সেদিকে কঠোর নজরদারি বজায় রাখতে স্থানীয় বিজিবি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকছেন তারা।
কুমিল্লায় আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ১৭টি উপজেলায় ৩২ হাজার খামারি গরু মোটাতাজাকরণে অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। তবে ভারত থেকে গরু না আসলে এ বছর গরুতে ভালো লাভ হবে, এমনটি আশা করছেন গরুর খামারিরা।
জেলা প্রাণিসম্পদ কমকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেছেন, এখানকার খামারিদের গরু দিয়ে চলতি বছর চাহিদা মেটানো সম্ভব। বিজিবির কঠোর নজরদারির কারণে সীমান্ত এলাকা দিয়ে গরু আসা প্রায় বন্ধ রয়েছে।
তথ্যমতে, সদর, শিবগঞ্জ ও গোমস্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে এবছর বৈধ ও অবৈধভাবে ভারতীয় গরু আসার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
পর্যাপ্ত মজুদ থাকায় জেলায় কোরবানির পশুর সংকট হবে না বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আনন্দ কুমার অধিকারী।
তিনি বলেন, জেলায় এবার কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার। জেলার পাঁচ উপজেলায় ছোট বড় ১২ হাজার ৬২৪টি খামারে ৮৭ হাজার ৯৫৪টি গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া পারিবারিকভাবে পালন করা হচ্ছে বাকি গবাদিপশু। এর ফলে চাঁপাইনবাবগঞ্জে কোরবানির পশুর সংকট হবে না।
ঈদের আগে সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতীয় গরু না এলে লাভবান হওয়ার আশা করছেন খামারিরা। ঠাকুরগাঁও সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে কিছু সংখ্যক ভারতীয় গরু দেশে প্রবেশ করছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও বিজিবি-৫০ ব্যাটালিয়নের প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি-উন-নবী জানান, ঈদকে সামনে রেখে ভারত থেকে গরু আসা রোধ করতে বিজিবি ও বিএসএফ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। ‘আমরা এখন পর্যন্ত ভারত থেকে অবৈধভাবে গরুর আসার কোনো খবর পাইনি। তবে চোরাকারবারিরা সামান্য সংখ্যক গরু আনতে পারে। অবৈধভাবে দেশে যাতে গরু প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য আমরা নজরদারি আরও বাড়িয়েছি,’ যোগ করেন তিনি।
ইউএনবি প্রতিনিধিদের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর ও কুড়িগ্রামের সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতীয় পশু আসার সংখ্যা খুবই কম। তবে ঈদকে সামনে রেখে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার থেকে বেশ কিছু পশু দেশে আসছে।
টেকনাফের কাস্টমস কর্মকর্তা মো. ফরেজ উদ্দীন জানান, গত তিন দিনে বৈধভাবে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার থেকে পাঁচ হাজার ৩১০টি গরু দেশে ঢুকেছে। ঈদের আগে মিয়ানমার থেকে ২৫ হাজার পশু আমদানি করা হতে পারে।
এদিকে টেকনাফ বিজিবি-২ ব্যাটালিয়নের প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফয়সাল খান জানান, সীমান্তে কোনো উত্তেজনা না থাকায় মিয়ানমার থেকে গবাদিপশু আমদানি বেড়েছে। আমরা গবাদিপশু আমদানি কার্যক্রম তদারকি করছি।
মিয়ানমার থেকে পশু আমদানিকারক গিয়াস উদ্দীন বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় পশুর দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় মিয়ানমার থেকে গবাদিপশুর আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা গত বছরের তুলনায় আট থেকে ১০ হাজার কম দামে প্রতিটি গরু আমদানি করছি।’ ইউএনবি।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.