আপনি পড়ছেন

গভীর সঙ্কটের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে মুসলিম বিশ্ব। পৃথিবীর কোনো ভূখন্ডেই স্বস্তি নেই, শান্তিতে নেই মুসলমান। ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করতে, মুসলমানদের শেষ করতে ইসলামবিরোধী শক্তি সত্যিই আজ বদ্ধপরিকর। কোনোভাবেই ইসলাম এবং মুসলমানদের মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দেয়া যাবে না- এ ব্যাপারে ওদের কোনো দ্বিমত নেই। আর এ কাজে তারা যে পুরোপুরি সফল- তা অস্বীকার করলে সত্য অস্বীকার করা হবে।

arafat

তবে কোরআন বলছে, ওরা ঐক্যবদ্ধ কিংবা কৌশলের কারণে সফল হয়নি, সফল হয়েছে মুসলমানদের অনৈক্যের জন্য। আল্লাহ তায়ালা বারবার মুসলমানদের সতর্ক করে বলেছেন, যখনই তোমরা ঐক্য হারিয়ে ফেলবে, বিভিন্ন দল-উপদল, মাজহাব-ফেরকায় বিভক্ত হয়ে পড়বে, তখনই তোমাদের পতন নিশ্চিত মনে রেখো। হায়! মুসলমানদের মাঝে আজ ঐক্য নেই। ফলে কোথাও কোথাও তারা সাময়িক সফল হলেও, সে সফলতা বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারছে না। বহু রক্তের বিনিময়ে যে ইসলামি ইমারত গড়ে ওঠে, অনৈক্যের কারণে বাতিলের এক ফুয়েই তা মিশে যায় চোখের পলকেরও আগে।

মুসলিম বিশ্বের আধুনিক নেতা মাহাথির মুহাম্মাদ মনে করেন, অনৈক্যের এ সমস্যার সুন্দর সমাধান হতে পারতো প্রতি বছর অনুষ্ঠিত মুসলিম ভ্রাতৃত্বের মিলন মেলা হজের মাধ্যমে। হজ তো শুধু কিছু অনুষ্ঠানসর্বস্ব কাজের নাম নয়। হজ হলো, ইন্নামাল মুমিনুনা ইখওয়াতুন- এক মুমিন আরেক মুমিনের ভাই, কোরআনের এ কথার বাস্তব প্রশিক্ষণ।

পৃথিবীর আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা যত মুসলমান আছে সবাই আপন ভাইয়ের মত। হজের ময়দানে আসা প্রতিটি হাজি এক হয়ে এ সিদ্ধান্ত নেবে, বিশ্বের কোথাও একজন মুসলমানের অধিকারও যদি ক্ষুন্ন হয়, পুরো বিশ্বের মুসলমান একযোগে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ-অবরোধের বন্যায় ফেটে পড়বে। বিশ্বজুড়ে এমন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে, যেনো জুলুমবাজ রাষ্ট্র বা সংগঠন জুলুমের হাত ঘুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়।

বড় আফসোস করে মাহাথির মুহাম্মাদ বলেন, হায়! আজ বিভিন্ন ভূখন্ডে মুসলমানরা নির্যাতিত হচ্ছে, মানবেতর জীবন-যাপন করছে কিন্তু অন্যান্য মুসলমানরা দিব্বি হেসে খেলে বেড়াচ্ছে। এসব মুসলমানদের দেখলে ভুলেও মনে হবে না তারই ভাই চরম কষ্টের জীবন কাটচ্ছে। এটা কেনো হয়েছে? কারণ, হজ মুসলমানদের মনে ভ্রাতৃত্বের অনুভূতি জাগিয়ে তুলতে পারছে না।

বিশ্বভ্রাতৃত্ব গড়তে ব্যর্থ হওয়ার কারণ হলো, হজের ভাষণে মুসলিম ভ্রাতৃত্বের কথা থাকে না বললেই চলে। শুধু তাই নয়, আগামী এক বছরে মুসলিম বিশ্বের টার্গেট কী হবে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য কী কী কর্মসূচী নেয়া যেতে পারে, ধনী রাষ্ট্রগুলো কীভাবে দারিদ্রের মধ্যে থাকা রাষ্ট্রগুলোকে টেনে তুলবে, নির্যাতিত ভূখন্ডের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত হবে এমন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুর একটিও হজের ভাষণে বলা হয় না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের একজন প্রফেসর হাসতে হাসতে একবার আমাকে বলেছিলেন, মুসলমানরা যদি হজের ময়দান থেকে বিশ্ব নেতৃত্বের টার্গেট নিতে পারত, তবে এত বিশালসংখ্যক হাজির শপথ অনুষ্ঠান দেখেই তো বিশ্বের মোড়লরা কেঁপে ওঠত।

তিনি বলেন, হজের ভাষণে এখনো আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। প্রথমত, সৌদি সরকারের শিখিয়ে দেয়া ভাষণটিই তোতা পাখির মত আওড়ানো হয়। তাও শুধু আরবি ভাষাতেই...। এতে করে আরববিশ্ব থেকে আসা হাজি ছাড়া আর কেউই হজের ভাষণে কী বলা হলো তার ছিঁটেফোটাও বুঝতে পারেন না। অথচ অনুবাদ প্রযুক্তি ব্যবাহার করে খুব সহজেই প্রধান প্রধান ভাষায় হজের ভাষণের অনুবাদ হাজিদের কানে পৌঁছে দেয়া সম্ভব।

আমরা আশা করি, এবারের হজের ভাষণ মুসলিম উম্মার জন্য নতুন সূর্য ওঠাবে। যে সূর্য হবে ইসলামের সূর্য। সত্য ও ন্যায়ের সূর্য। যার আলোতে পৃথিবীর সব আঁধার ঘুচে যাবে।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর