আপনি পড়ছেন

‘কোরবানি’ শব্দের অর্থ উৎসর্গ করা, সান্নিধ্য লাভের উপায়, ত্যাগ করা, পশুত্বকে বিসর্জন দেওয়া। আল্লাহর নবী ইবরাহিম (আ.) কর্তৃক নিজ পুত্র ইসমাইলকে (আ.) আল্লাহর নির্দেশানুযায়ী কোরবানি করার উদ্যোগ গ্রহণের ঘটনার মাধ্যমেই কোরবানির তাৎপর্য নিহিত রয়েছে। পবিত্র কোরআন থেকে জানা যায়, স্বপ্নে আল্লাহর নির্দেশপ্রাপ্ত হয়ে এবং নিজ পুত্র হজরত ইসমাইলের (আ.) সম্মতিতে হজরত ইবরাহিম (আ.) কোরবানি করার মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেন।

kurbani importance

এ উদ্দেশ্যে তিনি পুত্র ইসমাইলকে নিয়ে একটি নির্জন স্থানে যান এবং তার চোখ বেঁধে মাটিতে শুইয়ে দেন। অতঃপর কোরবানি করার জন্য পুত্রের গলায় ছুরি চালাতে উদ্যত হন। পিতা-পুত্রের এই অপরিসীম ত্যাগে মহান আল্লাহ তায়ালা খুশি হন এবং হজরত ইসমাইলকে (আ.) বাঁচিয়ে দিলেন। কারণ ইসমাইল (আ.) এর রক্ত ঝরানো আল্লাহর উদ্দ্যেশ্য ছিল না। আল্লাহ দেখতে চেয়েছেন, ইবরাহিম (আ.) এর আত্মা খোদার রাহে ত্যাগের জন্য প্রস্তুত কিনা।

ইবরাহিম (আ.) এর এ ঘটনা আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে মুমিনদের স্মরণ ও শিক্ষার জন্য প্রতীকী কোরবানির বিধান দিয়ে জাগরুক রেখেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘প্রত্যেক উম্মতের জন্য আমি কোরবানির একটি নিয়ম ঠিক করে দিয়েছি যাতে আমি তাদেরকে জীবনোপকরণ স্বরূপ যে সব চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছি সেগুলোর ওপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।’ সূরা হাজ্জ, আয়াত ৩৪।

মানব সৃষ্টির সূচনা লগ্ন অর্থাৎ প্রথম নবী ও প্রথম মানব হজরত আদমের (আ.) সময় থেকেই কোরাবনির বিধান ছিল। আবুল ফিদা হাফিজ ইবন কাসির দামেস্কির (রহ.) লেখেন, ‘আদম (আ.) তার দুই ছেলে হাবিল এবং কাবিলকে কোরবানি করার আদেশ দিয়ে নিজে হজ করার জন্য মক্কায় চলে যান। হাবিল একটি মোটা তাজা বকরি কোরবানি করেন। তার অনেক বকরি ছিল। আর কাবিল কোরবানি দেয় নিজের উৎপাদিত নিম্মমানের এক বোঝা শস্য। তারপর আগুন হাবিলের কোরবানি জ্বালিয়ে দেয়। আর কাবিলের কোরবানি ফেলে রাখে।’ আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ১/২১৭।

এ ঘটনাটি পবিত্র কোরআনে এভাবে বলা হয়েছে-, ‘আদমের দুই পুত্রের ঘটনা তাদের যথাযথভাবে শোনাও, যখন তারা উভয়েই কোরবানি করেছিল, তখন একজনের কোরবানি কবুল হলো এবং অন্যজনের কবুল হলো না। আল্লাহো তো কেবল মুত্তাকিদের কোরবানিই কবুল করেন।’ সূরা মায়েদায় ৫:২৭।

আমাদের মধ্যে যাদের কোরবানি করার সামর্থ্য আছে, আমাদের কোরবানি যেন হয় লৌকিকতা মুক্ত। কোরবানি শুধু হবে আল্লহর জন্য। অনেকে কোরবানির পশু কিনে বলেন, এতে গোশত কম হবে। ঠগ হয়ে গেল। অথবা বলেন, কোন রকম একটা দিতে পারলেই হল। ভাল পশুর দরকার নেই। এসব চিন্তা সঠিক নয়। আপনার সামর্থ্য থাকলে আপনি সবচেয়ে দামি পশু কোরবানি করবেন। বিদায় হজে রাসুল (সা.) একশতটি উট কোরবানি করেছিলেন। আর কোরবানি যেহেতু আল্লাহর জন্য হবে তাই এতে গোশত কম হবে না বেশি হবে, গরু কিনে ঠগ হলো না জিত হলো এসব আলাপ না করাই ভাল।

মনে রাখবেন এ কোরবানি শুধু পশুর গলায় ছুরি চালানোই নয়, নফস নামক পশুর গলায়ও ছুরি চালাতে হবে। মহান আল্লাহর হুকুমকে কাছে বিনা প্রশ্নে নিজের গর্দান নিচু করে দেওয়ার নামই কোরবানি। নিজের নফসে কে যদি আল্লাহর ইচ্ছার সামনে কোরবানি করতে না পারি তবে শত পশুর গলায় ছুড়ি চালালেও কোন লাভ হবে না। আমাদেরকে অবশ্যই কোরবানির মূল শিক্ষা ও উদ্দেশ্যকে সামনে রাখতে হবে। তবেই আমাদের কোরবানি প্রকৃত কোরবানি হবে।

লেখক: খতিব, উঁচাবাড়ি বাইতুস সুজুদ জামে মসজিদ, পোস্তগোলা, ঢাকা।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর