ঈদের আনন্দ নেই কুড়িগ্রামের বন্যাদুর্গত জনপদে
- Details
- by নিজস্ব প্রতিবেদক
আর মাত্র একদিন পরেই কোরবানির ঈদ। মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই উৎসবকে ঘিরে সবার মধ্যে আনন্দ বিরাজ করলেও কুড়িগ্রামের ৪৫০টি চরের বন্যাদুর্গত জনপদে নেই ঈদ আনন্দ। বরং ত্রাণের জন্য বিভিন্ন জায়গায় তাদের ছোটাছুটি করতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমারসহ ১৬টি নদ-নদীর অববাহিকায় প্রায় ৪০৫টি চর ও দ্বীপচর অবস্থিত। পাহাড়ি ঢল আর টানা বৃষ্টির কারণে গত ৯ জুলাই থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত টানা বিশ দিনের বন্যায় জেলার ৯টি উপজেলার ৬০টি ইউনিয়নের ৮৯৪টি গ্রামে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ অঞ্চলে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭২টি পরিবার বন্যা কবলিত হয়েছে। দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় ২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭২টি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার কারণে নদীর তীব্র ভাঙন শুরু হয়। এ পরিস্থিতিতে সামনে ঈদের কিন্তু তাদের মাঝে কোনো আনন্দ নেই। ত্রাণের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ছোটাছুটি করছেন বন্যার্ত প্রায় ৯ লাখ ৫৮ হাজার মানুষ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে যাত্রাপুর ইউনিয়ন। ইউনিয়নটি ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন। ২০১৩ সালের আগে যাত্রাপুর ইউনিয়নের ভগবতীপুর চরে ৫২০ পরিবারের বাস ছিল। ক্রমাগত নদী ভাঙনে চরটি নদী গর্ভে বিলীনের পথে রয়েছে। যাত্রাপুর হাট থেকে নৌকা করে ১ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে পশ্চিম ভগবতীপুর চরে দেখা হয় মাহবুবুর রহমান (৫১) এর সাথে।
তিনি জানান, বর্তমানে বন্যা ও নদী ভাঙনে ভগবতীপুর খণ্ড বিখণ্ড হয়ে নাম পরিবর্তন হয়ে উত্তর,পশ্চিম, দক্ষিণ ভগবতীপুর চরদ্বীপ হয়েছে। পশ্চিম ভগবতীপুরে যেয়ে দেখা গেল হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার বসবাস করছে। ভগবতীপুরের পূর্বে ঝুনকারচর ও ভারত। পূর্বে ভারত হওয়ায় পূর্বে যাওয়ার জায়গা নেই। তাই নদী ভাঙা মানুষগুলো আশ্রয়কেন্দ্রসহ বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে।
ফেরার পথে নৌকায় দেখা হয় ভগবতীপুরের আদি বাসিন্দা জহুরুল ইসলামের সাথে। তিনি জানালেন, তারা তিন ভাই আব্দুর বহিম (৩৬), নজরুল (৩২) এবং তিনি নিজে সন্তানদের নিয়ে ভালই দিন চলছিল। নদী ভাঙনের কারণে পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন হয়ে কাটগিরির চর ও ঝুনকার চরে আশ্রয় নিয়েছে। জহিরুল থাকেন পশ্চিম ভগবতীপুরে। ঈদের কথা বলতেই বেশ জোরেশোরে একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন জহুরুল ইসলাম, ‘প্যাট বাঁচে না 'হামার কিসের ঈদ বাহে।’ যাত্রাপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষের ভাগ্যে জহুরুল ইসলামের মতো ঈদের আমেজ নেই। অথচ জেলার সবচেয়ে বড় কোরবানির গরুর হাট এই যাত্রাপুরে।
যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার জানালেন, তার ইউনিয়নে ১৪টি দ্বীপচরসহ ৩২টি গ্রাম রয়েছে। প্রত্যেকটি গ্রামই প্লাবিত হয়েছে। ফলে ছয় হাজারের বেশি পরিবারের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ বন্যাকবলিত হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে আমন বীজতলাসহ ফসলের খেত। পুকুর-দীঘি তলিয়ে যাওয়ায় মৎস্য চাষিরা ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গেছে কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১২৮টি বাড়িঘর। আর বন্যার পর নদী ভাঙনের শিকার হয়ে চর রলাকাটা, চর পশ্চিম ভগবতীপুর ও ঝুনকার চরে এ পর্যন্ত ৪৩টি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে।
ইউপি চেয়ারম্যান জানান, বন্যার্তদের সহায়তায় এ পর্যন্ত সরকারের জিআর হিসেবে বরাদ্দ পেয়েছেন সাড়ে ১৯ মেট্রিক টন চাল। এ চাল ১০ কেজি করে এক হাজার ৯৫০টি পরিবারকে দিয়েছেন। এ ছাড়া ঈদ উপলক্ষে ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় পাঁচ হাজার ৩৮৪ পরিবারকে ১৫ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে। গৃহ নির্মাণ মঞ্জুরির টিন বা টাকা এখনও বরাদ্দ পাননি। স্বাভাবিকভাবেই এ পরিস্থিতিতে এই ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষের মধ্যে ঈদের কোনো আমেজ নেই।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা খায়রুল আনাম জানান, এবারের বন্যায় জেলার ৯ উপজেলার ৬০ ইউনিয়নের ৮৯৪টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এর ফলে বন্যার কবলে পড়েছিল দুই লাখ সাড়ে ৩৮ হাজারের পরিবারের প্রায় ৯ লাখ ৫৮ হাজার মানুষ। সেইসঙ্গে বন্যার কবলে পড়েছিল দুই লক্ষাধিক গবাদিপশু।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে সরকারের ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হয়েছে। ফলে কোনো প্রকার মানবিক বিপর্যয় ঘটেনি। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে গৃহনির্মাণ মঞ্জুরি সঠিকভাবে প্রদানের জন্য তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। এ কাজ শেষে গৃহনির্মাণ মঞ্জুরির টাকা ও ঢেউটিন বিতরণ করা হবে। ইউএনবি।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.