আপনি পড়ছেন

বছর ঘুরে আবার আমাদের মাঝে এসেছে ঈদুল আজহা। ঈদ মানে উৎসব। আজহা মানে ত্যাগ বা উৎসর্গ করা। অন্যের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার আনুষ্ঠানিক উৎসবকেই মুসলমানরা ঈদুল আজহা বা ত্যাগের উৎসব হিসেবে পালন করে আসছে যুগ যুগ ধরে। মুসলমান মাত্রই অন্যের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেবে। এটাই ইসলাম ধর্মের মূল শিক্ষা।

qurbani 1

ছোট বেলায় একটি কবিতা পড়েছিলাম। কবিতার মূল কথা মোটামুটি এরকম- গাছের দিকে তাকাও। কোনো গাছ কি কখনো নিজের ফল খেয়েছে? নদী কখনো নিজের জল পান করেছে? সূর্য কার জন্য আলো দেয়? পাখি গান গায় কার জন্য? প্রকৃতির একটি উপাদানও নিজের ভোগের জন্য ব্যস্ত নয়। সবাই অন্যের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছে। তো প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মানুষকেও নিজের জন্য নয় পরের জন্য বিলিয়ে দিতে হবে নিজেকে।

এই যে পরের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেয়া- এটা সহজ কথা নয়। যুগে যুগে যত নবী-রাসুল এসেছেন, যত ধর্মগ্রন্থ নাজিল হয়েছে, সবকিছুর সারমর্ম এ একটি কথাতেই লুকিয়ে আছে- ‘পরের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দাও’।

অন্যের জন্য না ভেবে, অন্যের জন্য না কেঁদে কোনো মানুষের পক্ষেই একা একা বেহেশতে যাওয়া, মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। এ জন্যই ইসলাম ধর্ম বৈরাগ্যবাদকে কঠিনভাবে হারাম করেছে। ইসলামের প্রতিটি ফরজ ইবাদত সংঘবদ্ধভাবে আদায় করতে হয়। নামাজ জামাতে পড়া, হজ একসঙ্গে করা, রোজা একসঙ্গে রাখা, জাকাতও একই সময়ে দেয়া ইত্যাদি।

এ থেকে সহজেই বোঝা যায়, ইসলামের উদ্দেশ্য হলো, সবাই একসঙ্গে মিলেমিশে ভালো থাকবে। এই মিলেমিশে ভালো থাকার যে উৎসব তাকেই শরীয়ত ঈদ বলেছে।

আফসোস! ঈদ আসে ঈদ যায়, কিন্তু একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভালো থাকার শপথ নেয়া হয় না। অন্যের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার সবক মুসলমানরা নেয় না।

এ জন্য জাতীয় কবি বড় আফসোস করে বলেছেন, এই মেকি উৎসব ছেড়ে তোমরা সত্যি উৎসবের চর্চা করো। ভাইয়ের সঙ্গে দ্বন্ধ, বন্ধুর সঙ্গে অভিমান, প্রতিবেশীর সঙ্গে বিবাদে ভরা মন নিয়ে তুমি ঈদগাহে এসেছো খোদার রাহে সিজদায় লুটাতে?

নামাজ শেষে লোক দেখানো কোলাকুলি করে আবার ভাইয়ের বিরুদ্ধেই হিংস্র ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠবে? তোমার এমন মেকি সিজদা, মেকি উৎসব আল্লাহ কবুল করবেন না। যতক্ষণ পর্যন্ত না মনের সব কালো ত্যাগের ছুড়িতে জাবাই করতে না পারবে, ভাইয়ের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার শপথ নিতে না পারবে ততদিন ঈদ আসবে যাবে, কিন্তু ঈদের আনন্দ ত্যাগের উৎসবে পরিণত হবে না।

হায়! আমাদের কী হলো, আমরা পশু জবাই করি, পশুর মাংসও সাধ্যমতো বিলিয়ে দিই কিন্তু কোরবানির শিক্ষা নিজের ভেতর ধারণ করতে পারছি না? কেনো আমাদের মনের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা লোভ-হিংসা, রাগ-বিদ্বেষ, অহংকার-অভিমান নামক পশুর গলায় ছুরি চালাতে পারছি না।

মনের পশুকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করা অতি জরুরি। যখন মনের পশু বিদায় করতে পারব তখন হৃদয়ে এক অনাবিল শুদ্ধতা অনুভব হবে। ভেতর জগত প্রশান্তির আলোতে আলোকিত হয়ে ওঠবে। আল্লাহ আমাদের কোরবানি কবুল করুণ।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর