আপনি পড়ছেন

কোরবানি শব্দটি এসেছে আরবি ‘কুরবুন’ শব্দমূল থেকে। যার অর্থ প্রিয়ভাজন হওয়া। কোরবানির মাধ্যমে বান্দা মহান প্রভুর প্রিয়ভাজন হয়। তাই একে কোরবানি নামে নামকরণ করা হয়েছে। আরবি-ইংরেজি অভিধানে কোরবানি শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ লেখা হয়েছে ‘সেক্রিফাইস’, যার বাংলা অর্থ ত্যাগ করা। কেউ যখন কারো প্রিয় হতে চায় কিংবা ভালোবাসা পেতে চায় তখন ত্যাগের পাহাড় ডিঙিয়েই প্রিয় হতে হয়, ভালোবাসা অর্জন করতে হয়।

al quaran

ত্যাগের অমর দৃষ্টান্ত দেখিয়েছিলেন ইবরাহিম খলিলুল্লাহ (আ.)। নমরুদের যন্ত্রণা দিয়ে শুরু প্রেমের আগুনে পোড়া। তারপর নানান চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে প্রভুর ভালোবাসা অর্জনের এক অবিস্মরণীয় পরীক্ষার মাধ্যমে জীবন কাটান তিনি।

স্বপ্নে তিনি দৈবাদেশ পেলেন, পুত্রকে কোরবানি করো। বিনা প্রশ্নে, বিনা দ্বিধায় প্রভুর উদ্দেশ্যে পুত্রকে কোরবানির জন্য রাজি হয়ে গেলেন। জানতেও চাইলেন না, হে প্রভু! আর কত পরীক্ষা নেবে আমার? যে সন্তান জন্মের পর একরাতও বাবার সঙ্গে ঘুমাতে পারেনি, ঠিকমত বাবার আদর পায়নি, তাকেই এখন কোরবানি করতে হবে! এই কী তোমাকে ভালোবাসার প্রতিদান!

ছেলে-স্ত্রীও কম যাননি। প্রভুর প্রেমে কোরবানি করার, কোরবানি হওয়ার উৎসবে মেতে ওঠেন তারাও। মনের ভেতর ঘাঁপটি মেরে থাকা শয়তানকে কোনো সুযোগ না দিয়েই কোরবানির জন্য মিনার প্রান্তরে এসে দাঁড়ান পিতা-পুত্র।

এর পরের ঘটনা কোরআন থেকেই শুনুন। ‘পিতা-পুত্র দু’জনই প্রভুর ভালোবসায় নিজেদের সঁপে দিলো। ইবরাহিম ছেলেকে জবাই করার জন্য কাত করে শোয়ালো। আমি ডেকে বললাম, হে ইবরাহিম! তোমার স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদের প্রতিদান দিয়ে থাকি।’ সূরা সাফফাত, আয়াত ১০৩-১০৫।

পাঠক! ইবরাহিম নবী (আ.) স্বপ্নে দেখেছেন, ছেলের গলায় ছুরি চালাচ্ছেন। আসলে ছেলে এখানে রূপকমাত্র। পৃথিবীর যত ভালোবাসা-ভালোলাগার বস্তু আছে, তার মধ্যে সন্তান অন্যতম। টাকা-পয়সা, নারী-বাড়িও ভালোবাসার মধ্যে পড়ে, কিন্তু একজন বৃদ্ধ মানুষের কাছে সন্তানের চেয়ে বেশি ভালোবাসার আর কিছু হতে পারে না।

তো আল্লাহ তায়ালা ইবরাহিম নবীর (আ.) মাধ্যমে কোরবানির ঘটনা সাজিয়ে দুনিয়ার মানুষকে এটাই বোঝাতে চেয়েছেন, আমি আল্লাহ ছাড়া তোমাদের মনে আর যা কিছুর ভালোবাসা গেঁথে আছে, এ সব বিসর্জন না দেয়া পর্যন্ত, ত্যাগ না করা পর্যন্ত আমার প্রিয় বান্দা হতে পারবে না।

ইবরাহিম নবী (আ.) ছেলেকে কোরবানির আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে মুসলিম মিল্লাতকে যে শিক্ষা দিয়েছেন, আফসোস! আজকের মুসলমান সে শিক্ষা বেমালুম ভুলে গেছে। টাকা দিয়ে পশুর গলায় ছুড়ি চালানোকেই মানুষ কোরবানি আর প্রভুর ভালোবাসা পাওয়ার কষ্টিপাথর বানিয়ে ফেলেছে। যার গরু যত দামী, তার ভাগ্যে প্রভুর ভালোবাসাও তত বেশি অর্জন হবে বলে মুসলমানরা মনে করে নিয়েছে।

হায়! আল্লাহকে মানুষ এতটাই বোকা মনে করে? পুরো জীবন পরীক্ষার চোরাবালিতে সাতার কেটে তবেই প্রভুর প্রিয় হতে পেরেছেন ইবরাহিম নবী (আ.) । আর আমরা বৈধ-অবৈধ পথের উপার্জনে কেনা পশুর রক্ত ঝরিয়ে ভাবছি, খোদার প্রিয বনে গেছি।

কানখাড়া করে শুনো মুসলমান, সূরা হজে আল্লাহ বলেছেন, তোমাদের কার পশু কত বড়, কত দামী, গোস্ত কতটুকু, রক্তই বা ঝরল কত গ্যালন- এসবই কিছুই আমার কাছে পৌঁছে না। আমার কাছে পৌঁছে শুধু তোমাদের হৃদয়ের প্রেমটুকু। কে কত নিখাদ প্রেমময় হৃদয় নিয়ে আমার কাছে এসেছে- তাই আমি বিশ্লেষণ করি।’ সূরা হাজ্জ, আয়াত : ৩৭।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর