কোহলির সেঞ্চুরিতে ম্লান গেইল-তাণ্ডব

যুক্তরাজ্যে বিশ্বকাপের আসরে নিজেকে হারিয়ে খুঁজেছেন ক্রিস গেইল। ভারতের বিপক্ষে বিদায়ী সিরিজেও প্রথম দুই ম্যাচে ব্যাট হাতে নিষ্প্রভ ছিলেন ক্যারিবীয় ড্যাশিং ওপেনার। অবশেষে জ্বলে উঠলেন গেইল। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচে তুললেন ঝড়। তার বিধ্বংসী ব্যাটিং ছাপিয়ে গেল বিরাট কোহলির ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরিতে।

ভারতের ক্যারিবীয় সফরজুড়ে বৃষ্টি ভালোই ভুগিয়েছে। টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষ হয়েছে বৃষ্টিতে ভিজে। প্রথম ওয়ানডে ওয়ানডে বৃষ্টির কারণে খেলা শুরুর পরই ম্যাচটা বাতিল হয়ে যায়। দ্বিতীয় ম্যাচেও বৃষ্টির হানা। বৃষ্টি পিছু ছাড়ল না তৃতীয় তথা শেষ ম্যাচেও। বৃষ্টির আগে ঝড় উঠেছিল গেইলের ব্যাটে। গেইল খেললেন ৪১ বলে ৭২ রানের বিধ্বংসী ইনিংস।

গেইল ও এভিন লুইস ঝড়ে শুরুর ২২ ওভারে ১৫৮ রান করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরপরই আকাশ ভেঙে নামে বৃষ্টি। লম্বা সময় অপেক্ষা করার পর ম্যাচের দৈর্ঘ্য নেমে আসে ৩৫ ওভারে। নির্ধারিত এই ওভারে স্বাগতিকরা করে সাত উইকেটে ২৪০ রান। কিন্তু ভারতের লক্ষ্যটা বেড়ে হয়ে যায় ২৫৫। ভারতের জন্য নিঃসন্দেহে লক্ষ্যটা কঠিন।

কঠিন সেই লক্ষ্যমাত্রায় ভারত পৌঁছেছে ১৫ বল হাতে রেখেই। ভারত জিতেছে ছয় উইকেটের বড় ব্যবধানে। দাপুটে এই জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ২-০ ব্যবধানে উইন্ডিজকে হারাল কোহলির দল। এর আগে কুড়ি ওভারের সিরিজে ক্যারিবীয়দের ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করেছিল সফরকারী ভারত।

অবশ্য বড় সংগ্রহ তুললেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের শুরুটা ছিল ধীর গতির। প্রথম ৪ ওভারে স্বাগতিকরা তোলে ১৩ রান। এরপরই প্রলয় উঠল গেইল ও লুইসের ব্যাটে। দুজনের তাণ্ডবে পরের ৬ ওভারে উইন্ডিজ তোলে ১০১ রান! ওয়ানডেতে আগে ব্যাট করা কোনো দলের শুরুর দশ ওভারে যা সর্বোচ্চ রানের (১১৪) রেকর্ড। শেষ দিকে গেইল-লুইসের দেখানো পথেই হাঁটলেন অন্যরা।

১১৫ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে লুইস ৪৩ রানে বিদায় নিলে। ২৯ বলের ইনিংসে তিনটি ছক্কা ও পাঁচটি চার মেরেছেন ক্যারিবীয় ওপেনার। আরেক ওপেনার গেইল আটটি চার ও পাঁচ ছক্কায় করেছেন ৭২ রান। দুই ওপেনার সাজঘরে ফেরার পর রানের গতি কমে আসে। একমাত্র কারণ- শাই হোপের ৫২ বলে ২৪ রানের মন্থর গতির ইনিংস।

যদিও শেষ দিকে কিছুটা হলেও তা পুষিয়ে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৬ বলে ৩০ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেছেন নিকোলাস পুরান। এ ছাড়া শিমরন হেটমায়ার ২৫ রান করেন। কার্লোস ব্র্যাথওয়েট ১৬ এবং জেসন হোল্ডার ১৪ রান করেন। স্বাগতিকদের পতন হওয়া সাত উইকেটের তিনটি নিয়েছেন খলিল আহমেদ। দুটি শিকার মোহাম্মদ শামির।

প্রায় হিমালয়তুল্য লক্ষ্যমাত্রায় ব্যাট করতে নেমে দলীয় ২৫ রানে রোহিত শর্মার উইকেট হারায় ভারত। আরেক ওপেনার ধাওয়ানকে নিয়ে বিপর্যয় পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠার আগেই জোড়া ধাক্কা খায় সফরকারীরা। ৯২ রানে তিন উইকেট শেষ ভারতের। ৩৬ বলে ৩৬ রানে আউট হয়েছেন ধাওয়ান। ১০ রান করে ফিরে গেছেন রোহিত।

দলীয় এক শ ছোঁয়ার আগে তিন উইকেট হারিয়ে ভালোই চাপে পরেছিল ভারত। চাপটা কোহলি সামলে নিয়েছেন শ্রেয়াস আইয়ারকে নিয়ে। এই দুজন মিলে চতুর্থ উইকেটে গড়ে তোলেন ১২০ রানের ম্যাচ জয়ী জুটি। আইয়ার ম্যাচটা শেষ করে আসতে পারেননি। আগের ম্যাচে ৬৮ বলে ৭১ রান করা আইয়ার কাল ব্যাট করেছেন পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে।

পাঁচটি ছক্কা ও তিন চারে ৪১ বলে ৬৫ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে আউট হয়েছেন আইয়ার। একটি করে চার-ছক্কায় ১৯ রানে অপরাজিত ছিলেন কেদার যাদব। ক্যারিয়ারের ৪৩তম সেঞ্চুরি করা কোহলি অজেয় থাকলেন ব্যক্তিগত ১১৪ রানে। ৯৯ বলের ইনিংসটি তিনি সাজিয়েছেন ১৪টি চারে। দুর্দান্ত এই ব্যাটিংয়ে অবধারিতভাবেই ম্যাচ সেরা হয়েছেন কোহলি। সিরিজ সেরার পুরস্কারও উঠেছে তার হাতে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৩৫ ওভার ২৪০/৭
ভারত: (লক্ষ্য ৩৫ ওভারে ২৫৫) ৩২.৩ ওভার, ২৫৬/৪
ফল: ডি/এল নিয়মে ভারত ৬ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে ২-০তে জয়ী ভারত

ম্যাচ সেরা: বিরাট কোহলি
সিরিজ সেরা: বিরাট কোহলি