রাসেল ডমিঙ্গো। ৪৪ বছর বয়সী এই দক্ষিণ আফ্রিকান মাত্রই বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। চুক্তি অনুযায়ী আগামী দুই বছর তামিম-সাকিব-মুশফিকদের নিয়ে কাজ করবেন তিনি। নিয়োগ পাওয়ার পরদিনই বাংলাদেশের সংবাদ সংস্থা ইউএনবি’র সাথে নিজের প্রথম ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারটি দিয়েছেন ডমিঙ্গো। ফোনকলে তার এই সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ক্রীড়া সাংবাদিক সাইফ হাসনাত।

russell domingo coach

ইউএনবি: বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচ হওয়ায় আপনাকে শুভেচ্ছা। আপনি তো দক্ষিণ আফ্রিকায় জুনিয়র লেভেলের ক্রিকেটারদের নিয়ে কাজ করতেন। ঠিক কোন বিষয়টি আপনাকে টাইগারদের কোচ হওয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করলো?

ডমিঙ্গো: আমি দক্ষিণ আফ্রিকার ‘এ’ দলের সাথে কাজ করেছি। জাতীয় দলের মাত্র এক ধাপ নিচের এই টিমটিতে বেশ কয়েকজন মূল দলের খেলোয়াড়ও ছিলো। ওদের সাথে আমার কাজ অভিজ্ঞতা দারুণ। বাংলাদেশ দলও গত পাঁচ বছরে অভাবনীয় উন্নতি করেছে। তাদের পারফর্ম্যান্স এখন চোখে লাগার মতো। সুতরাং টাইগারদের সাথে কাজ করার জন্য আমি এই সময়টাকেই বেশি উপযুক্ত মনে করেছি।

ইউএনবি: বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের সাফল্য অতোটা উল্লেখযোগ্য ছিলো না, আপনি জানেন। যার ফলে স্টিভ রোডসের সাথে পাট চুকিয়ে নিয়েছে বিসিবি। ঠিক এই সময়ে বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নেয়াটা এক প্রকার কঠিনই বলা চলে। আপনি কীভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করবেন?

ডমিঙ্গো: বর্তমানের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মানেই চাপ নিয়ে কাজ করা। আপনি এখন যেখানেই কাজ করেন না কেনো, হোক সেটা ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া বা পাকিস্তান, চাপ বা চ্যালেঞ্জকে সাথে নিয়েই আপনাকে কাজ করে যেতে হবে। দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, এখন কোচিং পেশাটাই এরকম। তবে আমি এসব নিয়ে ভাবছি না। এই মুহূর্তে ভবিষ্যতের জন্য খেলোয়াড় নির্মাণে জোর দিতে চাই। এটা আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ইউএনবি: দায়িত্ব নেয়ার পরপরই আপনার সামনে আফগানিস্তানের সাথে টেস্ট মিশন। এরপর জিম্বাবুয়ে-আফগানিস্তানের সাথে ত্রি-দেশীয় সিরিজ। বাংলাদেশের কোচ হিসেবে প্রথম অ্যাসাইনমেন্টকে কীভাবে দেখছেন?

ডমিঙ্গো: আমি আগামীকালই (১৯ আগস্ট) বাংলাদেশে আসবো। এরপর দশ দিনের একটা প্র্যাক্টিস ক্যাম্প আছে। এই অনুশীলন থেকে দলের সামর্থ্য পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারবো আশা করছি। তবে এটা সত্যি যে, আফগানিস্তানের সাথে খেলাটা একটা চ্যালেঞ্জ। আমরা তাদেরকে হালকাভাবে নিচ্ছি না, কারণ তাদের দলে বেশ কয়েকজন বিশ্বমানের খেলোয়াড় আছে। যাই হোক, আমি এই সিরিজের দিকে লক্ষ্য রাখছি।

ইউএনবি: উপমহাদেশের ক্রিকেটে সমর্থকের প্রত্যাশা খেলোয়াড় ও কোচের ওপর বিশাল এক চাপ সৃষ্টি করে। প্রত্যাশার চাপের মুখে খেলোয়াড়দের শান্ত ও আত্মবিশ্বাসী রাখাটাও কঠিন একটা ব্যাপার। এই বিষয়ে আপনি কী ভাবছেন?

ডমিঙ্গো: দেখুন, আমি যখন দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় দলের কোচ ছিলাম তখন আমাদের জন্যও জয়টা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। পরাজয় আমাদের ওপরও চাপ সৃষ্টি করতো। আর কোনো আন্তর্জাতিক কোচই কিন্তু তার দলকে হারের জন্য তৈরি করে না। আমি অবশ্যই ছেলেদেরকে তাদের কাজের ওপর, খেলার ওপর মনোযোগ নিবিষ্ট রাখার ওপর চেষ্টা করে যাবো। আর যতো কিছুই বলেন, সমর্থকদের সাপোর্টও একটি দলের সফলতার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

ইউএনবি: আপনি এক সময় বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নিচ্ছেন যখন দলের অন্যতম খেলোয়ার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার অবসর নেয়ার আলাপ-আলোচনা চলছে। তার অবসরের পর বাংলাদেশের ড্রেসিং রুম অবশ্যই তার মতো একজন অধিনায়ককে মিস করবে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, দলের মধ্য থেকে এমন আরও ‘নেতা’ তুলে আনতে আপনি কী রকম পদক্ষেপ নিতে চান?

ডমিঙ্গো: দলে সিনিয়রদের একটা অংশ থাকা গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র অধিনায়কই সব সিদ্ধান্ত নিবে, তা কিন্তু নয়। হ্যা, অধিকাংশ সিদ্ধান্ত অধিনায়ক নিজে নিলেও সিনিয়রদেরও গুরুত্ব দিতে হয়। দায়িত্ব নেয়ার বাংলাদেশের ড্রেসিং রুমের ব্যাপারটা আমাকে আরও ভালোভাবে বুঝতে হবে। তারপর সে অনুযায়ী মাঠে –মাঠের বাইরে পরিকল্পনা করবো।

ইউএনবি: আপনি কখনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেননি। তারপরও একজন কোচ হিসেবে আপনি দারুণভাবে সফল। আপনি দক্ষিণ আফ্রিকার অনূর্ধ্ব ১৯ দলের দায়িত্বে ছিলেন, জাতীয় দলকেও সামলেছেন। তারপর ডোমেস্টিক একটি টিমের কোচ ছিলেন। ২৫ বছর বয়সের আগেই একজন কোচ হওয়ার অনুপ্রেরণা কোথায় পেলেন?

ডমিঙ্গো: আমি সবসময়ই মানুষের সাথে মিশতে পছন্দ করি। সবার সাথে সম্পর্ক তৈরি করতে আমার ভালো লাগে। একজন কোচ হিসেবে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে আমার শেখার সুযোগ রয়েছে। আমি বুঝতে পারি, একজন খেলোয়াড় পরবর্তী লেভেলে যাওয়ার জন্য কী চায়। আমার বিশ্বাস, এটাই আমাকে কোচ হতে সাহস জুগিয়েছে। আর এই অভিজ্ঞতা আমাকে বাংলাদেশ দল এবং বিসিবির সাথে কাজ করতে সাহায্য করবে আমি মনে করি।

ইউএনবি: আপনি নতুন প্রতিভা খুঁজে বের করার ব্যাপারে বেশ অভিজ্ঞ। এদেরকে উপযোগী করে তোলার জন্য আপনি তাদের পেছনে প্রচুর শ্রম দেন। জাতীয় দলের কোচ হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি জুনিয়র লেভেলেও কি আপনার একটা চোখ থাকবে?

ডমিঙ্গো: নিশ্চিতভাবে জুনিয়র লেভেলেও আমার দৃষ্টি থাকবে। জাতীয় দলের জন্য তৈরি হতে থাকা খেলোয়াড়ের সাথে আমি আগে থেকেই সম্পর্ক তৈরিতে সময় ব্যয় করবো। আমি মনে করি, পরবর্তী জাতীয় দলটা কেমন হবে –এ ব্যাপারে আগে থেকেই ভালো ধারণা রাখা উচিত। তাদের সাথেও আমি কাজ করে যেতে চাই।

ইউএনবি: বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতাগুলোর মধ্যে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ একটি। এখান থেকে নতুন ট্যালেন্ট খুঁজে বের করার কোনো পরিকল্পনা কি আছে?

ডমিঙ্গো: অবশ্যই। দেশের বড় একটা টুর্নামেন্ট থেকে নতুন প্লেয়ার খুঁজে বের করার ব্যাপারে আমি অবশ্যই ওই সময়টায় মাঠে থাকবো।

ইউএনবি: দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা কয়েকজন খেলোয়াড়কে আপনি জাতীয় দলে পাবেন। বাংলাদেশকে পরবর্তী ধাপে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তারা অবশ্যই আপনার কাজে লাগবে। তাদেরকে নিয়ে কী ভাবছেন?

ডমিঙ্গো: আমি জানি। আমার দলে বেশ কয়েকজন দারুণ খেলোয়াড় আছে। মাহমুদুল্লাহ, তামিম ইকবাল, সাকিব, মুশফিক এবং আরও অনেকে। তারা সবাই বেশ অভিজ্ঞ। একসাথে দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে যাচ্ছে। তারা সঠিক নির্দেশনাতেই আছে। আমি শুধু তাদের উন্নতির ধারাবাহিকতা নিয়ে কাজ করে যাবো, আর বাংলাদেশ দলও পরবর্তী ধাপে এগিয়ে যাবে।

ইউএনবি: এটা খুব মজার ব্যাপার হবে যে, ড্রেসিং রুমে আপনার স্বদেশিই (চার্ল ল্যাংগেভেল্ট, নিল ম্যাকেঞ্জি) আপনার সাপোর্ট স্টাফ হিসেবে কাজ করবে। এটা অবশ্যই আপনাকে একটা সাপোর্ট টিম গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। আপনি কী মনে করেন?

ডমিঙ্গো: (হাসি…) দক্ষিণ আফ্রিকাতেও আমি তাদের সাথে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। এখন আবার বাংলাদেশে একসাথে কাজ করবো। তারা অনেক ভালো কোচ। আর এটা আমার কাজকেও সহজ করবে। সবচেয়ে বড় কথা, আমরা একে অপরের কাছে কী চাই সেটা আমরা পরষ্পর জানি। আমি বিশ্বাস করি, এটা বাংলাদেশ দলকেও সাহায্য করবে।

ইউএনবি: আপনি প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আগে স্পিন বোলিং কোচ হিসেবে ডেনিয়েল ভেট্টোরিকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এই নিউজিল্যান্ডারের সাথে কাজ করাটাকে কীভাবে দেখছেন?

ডমিঙ্গো: এর আগেও আমাদের দুইবার দেখা হয়েছে। আমরা দুজনেই খেলোয়াড়দের আমাদের সর্বোচ্চটুকু দেয়ার চেষ্টা করবো। আর ভেট্টোরি যদি খেলোয়াড়দের সময় দেয় তাহলে আমার বিশ্বাস তরুণরা তার কাছ থেকে অনেক কিছুই শিখবে।

ইউএনবি: বিসিবি’র সাথে প্রাথমিক চুক্তি অনুযায়ী আপনি দুই বছরের জন্য টাইগারদের সাথে কাজ করবেন। যদিও পরে এই চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে নেয়া যাবে, তারপরও আপনি কী মনে করেন, এই দুই বছরে বাংলাদেশ কতোদূর যাবে?

ডমিঙ্গো: আমাদের অবশ্যই তো র‍্যাংকিংয়ের চার-পাঁচে থাকা উচিত। বিশেষ করে ওডিআই-তে, র‍্যাংকিংয়ের প্রথম চারটি দলের মধ্যে জায়গা করে নেয়া উচিত আমাদের। এটা হবে একটা বাস্তবসম্মত লক্ষ্য। আমি জানি এটা কঠিন, আমাদের অনেক কঠিন পরিশ্রম করতে হবে। মোদ্দাকথা, আমি বাংলাদেশকে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যেতে চাই।

ইউএনবি: শেষ প্রশ্ন। বিসিবি’র সাথে আপনার সাক্ষাতের পর বোর্ড জানিয়েছিলো, বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্নতি নিয়ে আপনার পরিকল্পনায় তারা মুগ্ধ। প্রধান কোচ হিসেবে আপনাকে নিয়োগ দিতে বিসিবি’র উৎসাহের পিছনে কী কাজ করেছে বলে আপনি মনে করেন?

ডমিঙ্গো: দেখুন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোচিং করানোর অনেক অভিজ্ঞতা আছে আমার। সাত বছর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমি কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। এর আগে আমি তরুণদের নিয়ে কাজ করেছি। আমি জানি, একজন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হতে হলে কী প্রয়োজন। আমি ভাগ্যবান যে, বিসিবি’র সাথে এমন কিছু আইডিয়া আমি শেয়ার করতে পেরেছি।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.