বাড়ির কাজ বন্ধ, ৯০ লাখ টাকায় মীমাংসার প্রস্তাব!

রাজধানীর ভাষানটেকে ৩১ জনের যৌথ মালিকানার একটি প্লটে ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে এক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ওই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার এস এম শামীম। এমনকি মালিকদের বিরুদ্ধে মিথা মামলা দেয়া ছাড়াও লোক মারফত তাদের কাছে ৯০ লাখ টাকা দাবি করেছেন তিনি।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২০১৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ৩১ জন যৌথভাবে ভাষানটেক থানার টোনারটেক মসজিদের পাশে ৫৮৫-সি নম্বর প্লটে একটি জমি কেনেন। এরপর গত বছরের ১৬ জুলাই ওই জমিতে একটি ভবন নির্মাণ শুরু করেন তারা।

চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল হঠাৎ পল্লবী জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার এস এম শামীম বাড়ির মালিকদের কাছে একটি চিঠি [স্মারক নং ২১৯(২)এসি (পল্লবী জোন)] পাঠিয়ে বলেন, জহিরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি ওই জমির মালিকানা দাবি করেছেন।

বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য বাদী ও বিবাদীদেরকে সব কাগজপত্র নিয়ে ২২ এপ্রিল থানায় হাজির হতে বলেন এস এম শামীম। কিন্তু চিঠি পাঠানোর পরদিনই ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

এমতাবস্থায় জমির মালিকগণ রাজউকের অনুমোদিত নকশা নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ভূমি কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেখান থেকে বলা হয় জমির মালিকানা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। এরপর তারা আবার বাড়ির কাজ শুরু করলে পুলিশ কর্মকর্তা শামীম ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের ‘ক্রসফায়ার’-এ দেওয়ার হুমকি দেন।

এমনকি গত ১৪ জুন ৩১ মালিকদের মধ্য হতে ৭ জনের বিরুদ্ধে একটি জিডি (নং ৪৯৮) করেন পুলিশ কর্মকর্তা শামীম।

এরপর গত ২৭ জুলাই পল্লবীর ৯৫ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সভাপতি হাফিজুর রহমান সরদার, এসএম সাদিকুরসহ ৩০-৩৫ জন ওই জমি নিজেদের দাবি করে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয়। এছাড়া ওই সাইনবোর্ড তোলা হলে হলে প্রাণে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেয়।

এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে ৯০ লাখ টাকার বিনিময়ে দুই পক্ষের বিবাদ মীমাংসা করে দেওয়ার প্রস্তাব দেন শামীম। কিন্তু এতে রাজি না হওয়ায় পরদিনই মোস্তাফিজুর রহমান নামে স্থানীয় এক ব্যক্তিকে দিয়ে মালিকদের মধ্যে ৫ জনের নামে একটি মামলা দায়ের করানো হয়।

উপায়ান্তর না পেয়ে সিনিয়র সহকারী কমিশনার এস এম শামীমের বিরুদ্ধে পুলিশ সদর দফতর ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন জমির মালিকরা। অভিযোগে পুলিশ কর্মকর্তা শামীম এবং স্থানীয় কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হাফিজের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে বলে জানানো হয়।

সদর দফতরে অভিযোগ করার পর নড়েচড়ে বসেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি অভিযোগকারীসহ অন্যদের ডেকে নিয়ে অভিযোগ তুলে নিতে চাপও দেন।

সমস্ত ঘটনার ব্যাপারে এস এম শামীমের কাছে জানতে চাইলে নির্মাণকাজ বন্ধ ও টাকা চাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমার কাছে জহিরুল নামে একজন আবেদন করেছিলেন। আমি বলেছিলাম জমি সংক্রান্ত বিষয় সমাধানের কাজ আমার নয়। তবু আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে বলে আমি দুই পক্ষকে ডেকেছিলাম। কিন্তু উল্টো তারা আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।

এদিকে অভিযোগের বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার। ইতোমধ্যে পুলিশের মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহেন শাহ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছেন।

তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা শাহেন শাহ।